পিবিএ,ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদদৌলা নিজ মাদ্রাসার কন্যা সমতূল্য ছাত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টার অভিযোগে জেলে গেলে তাকে রক্ষা করার জন্য স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রুহুল আমীন ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক উপজেলা পৌরসভার কাউন্সিলর মকছুদসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ-ছাত্রলীগের একটি অংশ মরিয়া হয়ে ওঠে।এর কারণ কী? আবার শোনা যায়, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা এক সময় জামায়াত করতো।তাহলে একজন সাবেক জামায়াত নেতাকে রক্ষায় কেন মরিয়া হয়ে উঠেছিলো স্থানীয় প্রশাসন ও আ.লীগ নেতৃবৃন্দ? কী ছিলো তাদের স্বার্থ? এসব প্রশ্নের উত্তর এখন একের পর এক বের হয়ে আসতে শুরু করেছে।
পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট থেকে জানা যায়, শুধু জামায়াত নয়, এর আগে সিরাজ উদ্দৌলা যত মাদ্রাসায় চাকরি করেছেন, সব জায়গা থেকেই নানা অপকর্মের কারণে বহিষ্কৃত হয়েছেন।সর্বশেষ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাতেও এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। যৌন নিপীড়ন, অর্থ আত্মসাৎ, সার্টিফিকেট বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যসহ সকল অপকর্মের হোতা তিনি।আর এসবই তিনি করতে পারতেন স্থানীয় প্রশাসনের একটি অংশের এবং মাদ্রাসা কমিটি তথা স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতৃবৃন্দের একটি অংশের সমর্থন ও সুবিধা ভোগের বিনিময়ে।
গ্রেপ্তারকৃতদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধান, এলাকাবাসী, মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় গভর্নিং বডি এবং প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগে একের পর এক বেরিয়ে আসছে অধ্যক্ষ সিরাজের অপকর্মের কাহিনি। তার অর্থ আত্মসাতের উৎস হলো মাদ্রাসার নিজস্ব আয় ও সরকারি বরাদ্দের টাকা। এসব অর্থের ৫০ ভাগ গভর্নিং বডি, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ও প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তাকে নিয়মিত মাসোহারা হিসাবে দিতেন। বিনিময়ে অপকর্ম ও অর্থ আত্মসাৎ করেও তিনি থাকতেন নিরাপদে। ওই মাদ্রাসার গভর্নিং বডি গতকাল বাতিল করেছে সরকার।
এদিকে গত ৬ এপ্রিল ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদ্রাসা পরিচালনা পরিষদের সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। এই নেতার কাছে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও আত্মসাতের অনেক ঘটনার প্রতিকার চেয়ে নিহত শিক্ষার্থী নুসরাত, শিক্ষক, অভিভাবকরা আবেদন করেছিলেন। তিনি কোনো প্রতিকার তো করেননি উল্টো সিরাজের পক্ষাবলম্বন করেন। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কাজে অধ্যক্ষকে সহায়তা করতেন রুহুল।
জানা গেছে, সোনাগাজী ফাজিল মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে গত বছরের অক্টোবর মাসে যৌন নিপীড়ন করেন অধ্যক্ষ। ওই ছাত্রীর পিতা প্রতিকার চেয়ে গভর্নিং বডির কাছে আবেদন করেন। কিন্তু কোন ব্যবস্থা তো নেয়া হয়নি উল্টো ছাত্রীর অভিভাবক নাজেহাল হন। অভিযোগ রয়েছে, এই মাদ্রাসায় পড়েনি কিংবা শিক্ষকতাও করেননি কোনদিন- এমন ভুয়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছে ২৫ হাজার টাকায় সার্টিফিকেট বিক্রি করতেন অধ্যক্ষ সিরাজ। টাকা নেওয়ার পাশাপাশি অনেক নারীকে যৌন নিপীড়নও করেছেন তিনি। সার্টিফিকেটের বিনিময়ে তিনি পেতেন নারীর সাহচার্য। খন্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করেও লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করেছেন এই সিরাজ। মোট কথা অর্থ ছাড়া তিনি কোন কাজ করেননি। এটাই ছিলো তার নেশা।
অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ সিরাজের নিজের সার্টিফিকেটও ভুয়া। স্থানীয় এক গডফাদার ও গভর্নিং বডির সদস্যদের মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের পদটি বাগিয়ে নেন তিনি।
অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে এ ধরনের ১৮টি দুর্নীতি, অনিয়ম সম্পর্কে গভর্নিং বডির সদস্য আব্দুল মান্নান প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। এছাড়া অন্যান্য এক ডজনেরও অধিক শিক্ষক সিরাজের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু প্রশাসন কিংবা গভর্নিং বডির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং অভিযোগকারীদের তিরস্কার করা হয়েছে।
‘যৌন নিপীড়ক’ অধ্যক্ষ সিরাজ স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির নেতা ও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাদের ‘ফিফটি ফিফটি’ ভাগ দিয়ে অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। এ কারণে স্থানীয়ভাবে তিনি ‘ফিফটি ফিফটি’ সিরাজ নামেও পরিচিতি।
পিবিএ/এএইচ