ডায়মন্ড লাইফের এমডি’র বিরুদ্ধে কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ

পিবিএ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ডায়মন্ড লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানির এমডি পিপলু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। এই সীমাহীন জালিয়াতির স্বীকার হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সহ জেলার বিভিন্ন এলাকার শত শত গ্রাহক এখন বিপাকে পড়েছেন। মানবেতর জীবনযাপন করছেন কোম্পানিটির এই অঞ্চলের মাঠ পর্যায়ের শতাধিক কর্মী-কর্মকর্তা। গ্রাহকের দাবি পরিশোধ না করে, শত শত গ্রাহক রেখে জেলায় কোম্পানির একমাত্র অফিসটির সেবা কার্যক্রম বন্ধ রেখে উল্টো ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করায় এমডি পিপলু বিশ্বাস ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে।

ডায়মন্ড লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানির এমডি পিপলু বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
ডায়মন্ড লাইফ ইনসিওরেন্স কোম্পানির এমডি পিপলু বিশ্বাস

সরাইল উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক ও জেলার আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু জানান, এখানে ডায়মন্ড লাইফের শত শত ভুক্তভোগী গ্রাহক ফুঁসে ওঠেছেন। তারা কোম্পানিটির এমডি পিপলু বিশ্বাস সহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, কোম্পানিটির এখানকার গ্রাহকের দাবি পূরণের ক্ষেত্রে এম ডি পিপলু বিশ্বাসের হয়রানি ও প্রতারণা নিয়মিত ঘটনা। বীমার প্রাপ্য টাকা পরিশোধ না করে নানা রকম টালবাহানা করে থাকেন এই কর্মকর্তা।

কোম্পানির সরাইল অফিসের এ জি এম হাজী শাহজাহান মিয়া বলেন, প্রতিদিন অফিসে গ্রাহকরা টাকার জন্য কান্নাকাটি পর্যন্ত করে থাকে। অনেক সময় আমাদের ভয়ভীতি প্রদান করে অনেকে। কিন্তু আমাদের কিছুই করার নাই, সবকিছু এমডি স্যারের (পিপলু বিশ্বাস) হাতে। তিনি ২০১৭ সালের মার্চ মাসে এই কোম্পানিতে এমডি হিসেবে যোগদান করে তাঁর ইচ্ছে মতো নিয়মনীতি চালু করেন। প্রিমিয়ামের টাকা ব্যাংকের পরিবর্তে তাদেরকে ক্যাশে দিতে হয়। এসব নিয়ে এই অফিসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এমডির দুরত্ব বাড়ে।

জানা যায়, বিদ্যমান আইনে কোনো গ্রাহকের বীমা দাবি উত্থাপনের ৯০ দিনের মধ্যে (প্রস্তাবিত ১২০ দিন) ওই দাবি পরিশোধ করা বীমা কোম্পানির জন্য বাধ্যতামূলক। কিন্তু নানা অজুহাতে গ্রাহকের পাওনা টাকা না দিয়ে বেশির ভাগ সময় হয়রানি ও প্রতারণা করে আসছে পিপলু বিশ্বাস। বিভিন্ন গ্রাহকের ১০ মাস ১বছর পার হয়ে গেলও টাকা দেওয়ার নামে বিভিন্ন অজুহাত দেখাচ্ছে কোম্পানিটির এই প্রধান কর্মকর্তা।

এ দিকে এসব ব্যাপারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) ভূমিকা একেবারেই নীরব। বীমা আইন ধারা ১০-এর উপধারা (১) ও ১-এর (ঞ)-তে বলা আছে, ‘কর্তৃপক্ষ নিন্মবর্ণিত এক বা একাধিক কারণে বীমাকারীর নিবন্ধন সম্পূণরুপে বা বিশেষ কোনো শ্রেণীর বা উপ-শ্রেণীর বীমা ব্যবসা স্থগিত বা বাতিল করিতে পারিবে, যদি বীমাকারী, (ঞ) ‘তাহার উপর কোন বীমা পলিসির, বাংলাদেশে উদ্ভূত, কোনো দাবি কোনো আদালতের চূড়ান্ত রায়ের বা এই আইনের অধীন কর্তৃপক্ষের আদেশের পর তিন মাস পর্যন্ত অপরিশোধিত থাকে।’

অর্থাৎ কোনো বীমা গ্রহীতার প্রাপ্য টাকা সংশ্লিষ্ট বীমা কোম্পানি পরিশোধ না করলে প্রয়োজনে ওই কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করতে পারবে আইডিআরএ। তারপরও শক্ত তদবির না করলে মাসের পর মাস পড়ে থাকে অভিযোগের ফাইল। মাহমুদা বেগম নামে এক বীমা গ্রহীতা বলেন, চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পরও প্রাপ্য টাকা পরিশোধ না করায় ভুক্তভোগীদের অনেকে বাধ্য হয়ে আদালতের শরণাপন্ন হতে চাচ্ছেন। এ রকম কয়েকটি মামলায় সাম্প্রতিক সময়ে অনেকটা দ্রুত ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়ছে। যদিও বেশ কিছুসংখ্যক মামলা বিচারাধীন আছে, তারপরও আমরা আশাবাদী আমরা টাকা পেয়ে যাবো।

সফিক মিয়া নামে এক বীমা গ্রহীতা বলেন, পলিসি সারেন্ডার করেছি, সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও আমাদের টাকা পরিশোধ নিয়ে টালবাহানা শুরু করেন ডায়মন্ড লাইফের এমডি পিপলু বিশ্বাস। আমরা তার বিরুদ্ধে ৪০৬ ও ৪১৮ ধারায় মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ ব্যাপারে জানতে কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে এম ডি পিপলু বিশ্বাস এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে কোম্পানির সিএফও মোঃ মামুন খান বলেন, কোম্পানি সরাইল এলাকায় ব্যবসা করছে ২০১৫ সাল থেকে।

সেখানে অসংখ্য গ্রাহক আছে। কিন্তু কাগজে কলমে দেখা যাচ্ছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে চিঠি দিয়ে ওই অফিস ঘর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানকার সকল অফিস স্টাফ বাতিল করা হয়েছে। নিয়মিত গ্রাহক থাকার পরও এখানকার অফিস কেন বাতিল করা হল, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধান এই হিসাব কর্মকর্তা বলেন, এই বিষয়টি এমডি স্যার বলতে পারবেন। এটা আমার জানা নেই।

প্রতিবেদনটি ধারাবাহিকভাবে চলবে——–

পিবিএ/এআইএস/আরআই

আরও পড়ুন...