আর্থ্রারাইটিসের ব্যাথার সমাধানে ঘরোয়া উপায়

 

পিবিএ ডেস্কঃ আপনাদের মধ্যে অনেকেই নিশ্চয়ই মনে করেন যে আর্থ্রারাইটিস হল বয়স্ক মানুষদের সমস্যা। এটি এক দিক থেকে দেখতে গেলে সত্যি কথা। এই রোগ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ৬০ বছর বয়স হয়ে গেলে হয়। কিন্তু আজকের দিনে অনেক কম বয়সের মানুষের মধ্যেও এই আর্থ্রারাইটিসের সমস্যা দেখা যায়। ২০ বছরের কাছাকাছি বয়সের অনেকেই কিন্তু আজ হাঁটুর বা গাঁটের ব্যথায় জর্জরিত। এর জন্য ডাক্তারের কাছে গেলে ভালো চিকিৎসাও সম্ভব।

আর্থ্রারাইটিস কীঃ আর্থ্রারাইটিস হল সেই অবস্থা যখন আমাদের গাঁটের কার্টিলেজ আস্তে আস্তে শুকিয়ে আসে, শক্ত হয়ে আসে আর ক্ষয়ে যায়। এটিকে ডাক্তারি পরিভাষায় বলে অটোইমিউন ডিসওর্ডার, যার ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ করে যে উপাদানগুলো সেই উপাদান শরীরের টিস্যুকেই আক্রমণ করে। এটি খুব ধীরে ধীরে শুরু হয় সামান্য যন্ত্রণা থেকে, তারপর মারাত্মক আকার নেয়। অনেক সময়ে দীর্ঘ দিন ওষুধ খেয়েও কিছু হয় না। এদিকে ওষুধ খাবার সাইড এফেক্ট হতে পারে। তাই কিছু ঘরোয়া সমাধানের হাত ধরে আগে দেখুন না উপকার পান না। আমরা কথা দিচ্ছি, উপকার পাবেনই।

হলুদঃ রান্নাতে হলুদ যেমন রঙ আনে, আপনার যন্ত্রণাতেও তেমনই হলুদ আনবে উপশম। হলুদে আছে কারকিউমিন আর কারকিউমিনয়েড। এই দুই উপকরণ আস্তে আস্তে প্রদাহ কম করে, যন্ত্রণা অনেক কমিয়ে আনে। আপনি হেলথ সাপ্লিমেন্ট হিসেবে যেমন এই হলুদ ব্যবহার করতে পারেন সবচেয়ে ভালো ফল পেতে, তেমনই হলুদ বেটে যেখানে যন্ত্রণা সেখানে লাগাতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহার করলে কিন্তু কয়েক দিনেই উপকার পাবেন।

আদাঃ আদা অনেক দিন ধরেই ব্যাথা কমানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি আর্থ্রারাইটিসের ব্যাথা খুব তাড়াতাড়ি কমিয়ে আনে। বর্তমান গবেষণা জানাচ্ছে যে এমনি ওষুধের থেকে কিন্তু এই আদা অনেক বেশি উপকারী। শুধু এই ব্যাথাই নয়, আপনার যদি খুব মাথা ধরে থাকে, বা যদি খুব বমি পায়, তাহলেও কিন্তু আদা অসাধারণ কাজ দেয়।

একোমিয়াঃ এটি মূলত চীনে পাওয়া যায়। এটি চীনের একটি ট্র্যাডিশনাল গাছ, যার ছাল চীনের মানুষ নিজেদের গাঁটের ব্যাথার জন্য ব্যবহার করেন। এটি হাড়, লিগামেন্ট মজবুত করতে খুব ভালো কাজ দেয়। যদি কোনও কারণে হঠাৎ ব্যাথা লাগে, তাহলে এই একোমিয়া খুব সহজেই ব্যাথা কমায়, টিস্যুর মধ্যে আরাম আনে। টিস্যুর একটি অন্যতম উপকরণ হল কোলাজেন, যা এই একোমিয়া খুব সুন্দর ভাবে তৈরি করে। আপনি যে কোনও বড় ওষুধের দোকানে এটি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করার জন্য পেয়ে যাবেন। তবে আপনার ব্লাড প্রেসার থাকলে আগে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে নেবেন।

বারডক রুটঃ বারডক রুট বা ফক্স রুট, বাংলায় যাকে অনেকে ভাটুই গাছ বলেন, তা কিন্তু এর অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদানের জন্য বেশ বিখ্যাত। আপনি শুকনো গুঁড়ো হিসেবে এটি পেয়ে যাবেন যে কোনও ভালো দোকানে। আপনি এই পাউডার পানিতে মিশিয়ে দিনে দু বার খেতে পারেন। ব্যাথা কমে যাবে।

বিছুটি পাতাঃ সব রকমের গাঁটের ব্যাথার জন্য কিন্তু এটি অব্যর্থ। এর মধ্যে থাকা ইনফ্লেমেটরি উপাদান যেমন আর্থ্রারাইটিসের ব্যাথা কমায়, তেমনই হাড় শক্ত করে। তাই হাড় সহজে ক্ষয়ে যায় না। বিছুটি পাতার উপর এক ধরণের খসখসে রোঁয়ার মতো জিনিস থাকে। আপনি যখন এই পাতা ব্যবহার করবেন তখন এই সূক্ষ্ম রোঁয়া আপনার ত্বকের ভিতরে প্রবেশ করবে আর ব্যাথা হচ্ছে যেখানে সেখানকার নিউরোন নিস্তেজ করে দেবে। ফলে ব্যাথা কমবে।

উইলো গাছের ছালঃ আর্থ্রারাইটিস কমানোর জন্য অন্যতম একটি উপাদান হল এই ছাল। অনেক আগে মানুষ এই ছাল চিবোতেন ব্যাথা কমানোর জন্য। এতে অ্যাসপিরিনের মতো উপাদান আছে যা কোমর, গাঁট, হাঁটুর ব্যাথা সহজেই কমায়। আপনি চায়ের সঙ্গে এটি মিশিয়ে খেতে পারেন। তবে পরিমিত খাবেন, না হলে র্যাকশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

যষ্ঠিমধুঃ যষ্ঠিমধুর মধ্যে আছে গ্লাইসাইরাজিন নামের এক ধরণের উপাদান যা ব্যাথা খুব সহজেই কমায়। এটি সহজে ফ্রি র্যাপডিকেল হতে দেয় না আর ব্যাথা হতে যে এনজাইম বেশি কাজ করে, তাদের তৈরি হওয়া বন্ধ করে। আপনি যষ্ঠিমধু শুকনো হিসেবে বা গুঁড়ো হিসেবে যে কোনও ভালো দোকানে পেয়ে যাবেন। এটি গরম পানিতে সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে নিন।

গুগগুলঃ এটি অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে বেশ পরিচিত। এটি মূলত ভারত আর মধ্য প্রাচ্যের একটি গাছের রেজিন থেকে তৈরি হয়। এটি লিউকোট্রাইন হওয়া বন্ধ করে। লিউকোট্রাইন হল সেই উপাদান যা গাঁটের ব্যাথার জন্য দায়ী। এটি ব্যাথা কমানোর পাশাপাশি হাড় মজবুত করে, যাতে ব্যাথা কমে যাওয়ার পর আর না হয়।

ক্যাটস ক্লঃ এটি আরেক গুরুত্বপূর্ণ হার্বাল উপাদান যা আমাদের আর্থ্রারাইটিসের ব্যাথা কমাতে সাহায্য করে। বললে বিশ্বাস করবেন না, এটি কিন্তু সেই সুপ্রাচীন ইনকা সভ্যতা থেকে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি রক্তের ইউরিক অ্যাসিড কমিয়ে আনে। তাই অস্টিওআর্থ্রারাইটিস হলে এটি ব্যবহার করা খুবই লাভজনক। তবে এটি ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেবেন।

থান্ডার গড ভাইনঃ এটি একটি চীনের হার্বস আর চীনে প্রাচীন কাল থেকে এটি ব্যবহার করা হয়। এর কান্ড থেকে যে রস নিঃসৃত হয় তা ব্যাথা কমানোর মোক্ষম দাওয়াই। এটি রিউমার্থোআর্থ্রারাইটিস কমানোর জন্য খুবই উপকারী। এটি ক্রিমের আকারে ব্যবহার করুন যেখানে ব্যাথা আছে সেই অঞ্চলে। যে কোনও ভালো ওষুধের দোকানে পেয়ে যাবেন।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...