পিবিএ, কক্সবাজার: কক্সবাজারের খরুলিয়ায় অসহায় প্রতিবন্ধি পরিবারের বসতভিটা দখলের জন্য হামলা, মারধর এবং উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতিত মা ও মেয়েকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনাটি ব্যাপক আলোচনায় এসেছে। গত কয়েকদিন ধরে এই ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিভিন্ন দপ্তরসহ সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া বার্তা সংস্থা পিবিএতে সংবাদটি প্রকাশ করায় কয়েকদিন পরে হলেও এই ঘটনাটি নাড়া দিয়েছে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে।
তদন্ত করে আসল ঘটনা বের করে হত্যা অস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্যসহ বিভিন্ন ধারার ছয় মামলার পলাতক আসামী আলোচিত ভূমিদস্যু সৌদি প্রবাসী শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে পুলিশ। নির্যাতিত পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে শফিক ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে। সোমবার রাতে ওই পরিবারের মেয়ে সাবেকুন্নাহার বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং-৮৪।
ভূমিদস্যু শফিকুল ইসলামের ভাই আবদুর রহীমকে প্রধান আসামী করে শফিকুল ইসলামসহ মোট ছয়জনকে এজাহার নামীয় করে অজ্ঞাত মোট ১২জনকে মামলায় আসামী করা হয়েছে। হামলা, ধর্ষণচেষ্টা ও জবর-দখল চেষ্টার অপরাধে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, খরুলিয়া মাষ্টার পাড়া এলাকায় প্রতিবন্ধী আবু বক্কর ছিদ্দিকের পরিবার ৪০ বছরের ভোগ দখলীয় বসতভিটার ২৯ শতক জমি দখলের জন্য ভূমিদস্যু শফিকুল ইসলাম মরিয়া হয়ে উঠে। এই জন্য শফিক ও তার লালিত লোকজন দীর্ঘদিন ধরে ওই প্রতিবন্ধি পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। একই সাথে রাতের আঁধারে ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে বসতভিটাটি দখলের জন্য একাধিকবার অপচেষ্টা চালিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত ভূমিদস্যু শফিকের বিরুদ্ধে ১৪৪ ধারা জারি করেন। কিন্তু দুঃসাহসিকভাবে আদালতের নির্দেশকে অমান্য করে অপচেষ্টা অব্যাহত রাখেন তিনি।
ওই ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, অপচেষ্টার অংশ হিসেবে গত ৪ এপ্রিল সাজেদার বাড়িতে ভূমিদস্যু শফিকের নেতৃত্বে তার ভাড়াটে লোকজন হামলা চালায়। এ সময় সাজেদার মেয়ে সাবেকুন্নাহারকে শ্লীলতাহানিসহ অন্যান্যদের মারধর করে। তাতে ব্যর্থ হয়ে ১৬ এপ্রিল রাতে ভূমিদস্যু শফিকুল ইসলামের নির্দেশে তার সহযোগী নুরুল ইসলাম রাতের অন্ধকারে আবারও সাজেদার বসতভিটায় হামলা চালায়।
এসময় ওই পরিবারের মেয়েদের মারধবর, ভাংচুর চালিয়ে গাছপালা কেটে নিয়ে যায় তারা। দ্রুত বাড়ি ছেড়ে না গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এই ঘটনার পর পুলিশের চোখে ধূলো দিয়ে উল্টো ওই নির্যাতিত পরিবারের গৃহকত্রী সাজেদা খাতুন (৬০) ও মেয়ে সাজিয়া আফরিনকে আটক করে শফিকুল। তাদেরকে থানায় ২৪ ঘণ্টা আটকে রেখে পরে শফিকুলের সাজানো মিথ্যা মামলা রেকর্ড করে কারাগারে পাঠায়।
এতে সাজেদা খাতুনের অসহায় তিন মেয়ের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠে। এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন স্তরে প্রতিবাদেও ঝড় উঠে। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে সাধারণ মানুষ।
নির্যাতিত পরিবারের এই করুণ চিত্র ও সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ আমলে এলে টনক নড়ে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের। ২১ এপ্রিল তাৎক্ষণিক বিষয়টি তদন্তের উদ্যোগ নেন ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোসাইন। তার তত্ত্বাবধানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আদিবুল ইসলামের নেতৃত্বে ভারপ্রাপ্ত ওসি খায়রুজ্জামানসহ পুলিশের একটি টিম ওই দিন বিকাল ৩টায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান।
এসময় তারা নির্যাতিত পরিবারের কথা শুনে এবং বিস্তারিত তথ্য জেনে প্রকৃত ঘটনা জানেন। এতে ওই প্রতিবন্ধি পরিবারের প্রতি ভূমিদস্যু শফিকুল ইসলামের অন্যায়ের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তখন আইনী আশ্রয় নেয়ার জন্য ওই নির্যাতিত পরিবারকে পরামর্শ দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আদিবুল ইসলাম। এর প্রেক্ষিতে ভূমিদস্যু শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে নির্যাতিত পরিবার থানায় অভিযোগ দিলে আইনী ব্যবস্থা নিয়েছে পুলিশ।
সত্যতা নিশ্চিত করে কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি খায়রুজ্জামান পিবিএ কে জানান, সাজেদা খাতুনের দায়ের করা এজাহারকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এখন আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান চালানো হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আদিবুল ইসলাম পিবিএ কে বলেন, সরেজমিন তদন্তে সাজেদা খাতুনের পরিবারকে নির্যাতন ও হয়রানি করার বিষয়টি প্রতীয়মান হয়েছে। তাই বিচার পেতে তাদের আইনের আশ্রয় পাওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলাম আমরা। সে মোতাবেক তাদের দায়ের করা এজাহার মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে ওই নির্যাতিত পরিবারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেয়া হবে।
পিবিএ/টিএ/আরআই