খুলনায় চিংড়ি ঘেরে মড়ক, দিশেহারা চাষি

পিবিএ, খুলনা: খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার অধিকাংশ ঘেরে বাগদা চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। আহরণ মৌসুমের শুরুতে এভাবে চিংড়িতে মড়ক লাগায় দিশেহারা অবস্থা চাষিদের। উৎপাদন খরচ উঠে আসা নিয়ে আশংকায় রয়েছেন তারা।

এভাবে ব্যাপক হারে চিংড়ি মরার কারণ হিসেবে চাষিরা ভাইরাস সংক্রমণের কথা বলছেন। তবে উপজেলা মৎস্য অফিস জানিয়েছেন, মরা চিংড়িতে তারা কোনো রোগবালাই খুঁজে পাচ্ছেন না। মৎস্য কর্মকর্তারা ধারনা করছেন, ঘেরগুলোতে পর্যাপ্ত পানির অভাব, পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বৃদ্ধি ও জলবায়ূ পরিবর্তন জনিত কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় চিংড়ি মরে যাচ্ছে।

মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে আট হাজারের মত চিংড়ি ঘের রয়েছে। এর আয়তন প্রায় ২২ হাজার হেক্টর। গত বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে চিংড়ির উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৭ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু গত বছরও চিংড়ি মরে যাওয়ায় সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চলতি বছর ঘেরের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১৫ হাজার মেট্রিক টন। এবারও মৌসুমের শুরুতে ব্যাপক হারে বাগদা চিংড়ি মরে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সম্ভাবনা কম রয়েছে।

খুলনার কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার অধিকাংশ ঘেরে বাগদা চিংড়ি মরতে শুরু করেছে
খুলনায় চিংড়ি ঘেরে মড়ক, দিশেহারা চাষি

এলাকা ঘুরে চিংড়ি চাষীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ঘের প্রস্তুত করে তারা হ্যাচারির পোণা ছেড়েছিলেন। আবার অনেকেই স্থানীয় নদী থেকে আহরণ করা পোণা ছেড়েছিলেন। তারা জানায়, যে সব ঘেরে হ্যাচারির পোণা ছাড়া হয়েছিল সে সব ঘেরে অধিকাংশেরই চিংড়ি মরে গেছে। ঘের গুলো আবার নতুন করে পোণা ছাড়ার চিন্তা ভাবনা করছে তারা।

কয়রা উপজেলার মেঘারাইট গ্রামের চিংড়ি চাষী আবু সাইদ সরদার জানান, পৌষ মাসে ঘেরে পোনা ছাড়ার পর আশা করেছিলেন বৈশাখের প্রথমেই চিংড়ি ধরতে পারবেন। কিন্তু সব চিংড়ি মরে যাওয়ায় আশাহত হয়েছেন তিনি। এবার তিনি স্থানীয় নদীর পোণা ছাড়ার চিন্তা করছেন।

একই উপজেলার জয়পুর গ্রামের চিংড়ি চাষী জামির খাঁ জানান, দশহালিয়া এলাকায় ৫৪ বিঘা জমি ইজারা নিয়ে তিনি প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করে বাগদা চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে ঘের থেকে যে পরিমাণ মাছ পাওয়ার আশা ছিল, তাতে তাঁর বিনিয়োগের অধিকাংশ টাকাই উঠে আসার কথা। কিন্তু মড়কের কারণে তিনি এখন পর্যন্ত এক লাখ টাকাও তুলতে পারেননি।

শাহিদুল শেখ, আমিনুল ইসলাম, আব্দুল শেখসহ আরও কয়েকজন চিংিড়ি চাষী জানান, গতবারের তুলনায় চিংড়ি পোনার দাম বেশি। তাছাড়া ঘের প্রস্তুতের জন্য শ্রমিক খরচ, চুন-সার ও মাছের খাবারসহ সব খরচ বেশি হয়েছে। নিজেদের অভিজ্ঞতায় যেটুকু পেরেছেন সেভাবেই তারা ঘের প্রস্তুত করে প্রতিবারের মত পোণা ছেড়েছেন। গতবার অনেকেই লাভবান হলেও এবার সে আশা নেই বলে জানান এসব চাষীরা। তারা অভিযোগ করেন, মৎস্য অফিস চিংড়ি চাষীদের সচেতন করার জন্য তেমন কোন পদক্ষেপ নেয়না। কি কারণে মাছ মারা যাচ্ছে বা এ অবস্থায় চাষিদের কি করা উচিত, সে বিষয়ে চাষিদের দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

চিংড়ি চাষী সমিতির সেক্রেটারি আবু সাঈদ বিশ্বাস বলেন, এবার মৌসুমের শুরুতে মড়কের কারণে মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কম। স্থানীয় মাছের আড়তগুলোতে গতবারের তুলনায় এবার মাছ উঠছে প্রায় অর্ধেক। তিনি চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার দাবী জানান।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবু সাঈদ বলেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ঘেরের পানি ও মাটিতে এর প্রভাব পড়ে। ফলে পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে চিংড়ি মরতে শুরু করেছে। এছাড়া ঘের তৈরি করার সময় চাষিরা মাটির সঠিক পরিচর্যা করেন না, নিয়মিত প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ না করাসহ, বিভিন্ন কারণে মাছ মারা যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চিংড়িচাষিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। সেমিনারের মাধ্যমে তাদের সচেতন করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। কোনো ঘেরে মাছ মরার খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে আমাদের কর্মকর্তারা সেখানে পৌছে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করেন।’

পিবিএ/এইচআর/আরআই

আরও পড়ুন...