পিবিএ,জাককানইবি (ময়মনসিংহ): জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৬ সালে ত্রিশাল, ময়মনসিংহে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধানে আইন অনুষদ নামে একটি অনুষদের কথা উল্লেখ করা হয়।এই বিষয়টি বিবেচনা করে ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়াারি ২০১৫-১৬ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আইন ও বিচার নামে একটি বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
৬০ জন শিক্ষার্থী ও ৩ জন শিক্ষক নিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতাকে পাড়ি দিয়ে এই বিভাগের কার্যক্রম শুরু করলেও বর্তমানে এ বিভাগে ৪ জন শিক্ষক ও প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।আইন ও বিচার বিভাগ সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে এ বিভাগের বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করলে আইন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী যায়েদ বিন খলিল জানান, আইন ও বিচার বিভাগে যখন আমরা ভর্তি হই তখন শুরুতে আমাদের নিজস্ব কোন ক্লাসরুম ছিল না। অর্থনীতি বিভাগে,পরে লাইব্রেরি ভবনে আমরা ক্লাস করেছি। এখন মোটামুটি সব সমস্যা কাটিয়ে আমরা ক্লাসগুলো ভালোভাবে করতে পারছি।
বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, আমাদের শিক্ষক, সহপাঠী, ছোট ভাই-বোন সবাই খুব আন্তরিক।শুরু থেকে আমাদের ক্লাস রুমের সংকট, লাইব্রেরীতে আইন বইয়ের অপর্যাপ্ততা, শিক্ষক সংকটসহ নানান সমস্যা থাকলেও বর্তমানে এই সমস্যা অনেকটাই সমাধান হয়েছে। বাকি সংকট সমূহ নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
বিভাগের ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী তৈয়ব শাহনূর জানান, আইন বিভাগ মানেই আলাদা একটি আবেগের জন্মদেয়। আইন পরিবারের অংশ হতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত এবং গর্বিত। আশাকরি সকল প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে আইন ও বিচার বিভাগ অনেক দূর এগিয়ে যাবে এবং এগিয়ে নিয়ে যাবে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে। পরবর্তীতে আমরা আইন ও বিভাগ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এ বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করি।
নব্য নিয়োগ প্রাপ্ত প্রভাষক কাজী ইকরামুল হক এবং মোঃ আসাদুজ্জামানের কাছ থেকে বিভাগের নতুন শিক্ষক হিসেবে তাদের অনুভূতির কথা জানতে চাইলে প্রভাষক কাজী ইকরামুল হক বলেন, এ বিভাগের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা খুবই আন্তরিক।
সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় হল, শিক্ষার্থীরা সব প্রতিবন্ধকতা মেনে নিয়েই বিভাগের কার্যক্রম এগিয়ে যেতে সাহায্য করছেন। প্রভাষক মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন আশাবাদী মানুষ। আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে ভালো করবে বলে আমি আশাবাদী।আমি এ বিভাগের একজন শিক্ষক হতে পেয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট।
বিভাগের বিভিন্ন সমস্যা ও বর্তমান অবস্থা নিয়ে সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইরফান আজিজ ও বিভাগের চেয়ারম্যান মোঃ আহসান কবীরের সঙ্গে কথা বললে সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইরফান আজিজ বলেন, বিভাগের একেবারে শুরুর দিকে লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় কিছু সমস্যা থাকলেও সেই সমস্যা সমূহ কাটিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করেছি। সেমিনার লাইব্রেরীর পর্যাপ্ত জয়গা না থাকলেও আমরা কিছু কিছু বই কিনে সেমিনার লাইব্রেরী গড়ে তুলেছি।
এছাড়াও এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস এর মধ্যে বিভাগের বিতর্ক প্রতিযোগিতা কার্যকর ভাবে চলছে এবং মুট কোর্টের ব্যাপারটি দ্রুত জোরদার করা হবে। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মান সম্মত ও সময়পোযোগী করে গড়ে তুলতে আমরা ক্লিনিক্যাল পদ্ধতিতে শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে আমাদের চেষ্টাকে অব্যাহত রাখবো।
বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মোঃ আহসান কবীর বলেন, আইন ও বিচার বিভাগের একেবারে শুরুতে ৩ জন শিক্ষক নিয়ে আমরা বিভাগের কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। বিভাগটিতে শিক্ষক স্বল্পতার পাশাপাশি ক্লাস রুমের স্বল্পতা রয়েছে।শিক্ষার্থীরা যাতে কোন ভাবেই বঞ্চিত না হয় সেই লক্ষ্যে ক্লাসরুমে স্বল্পতার পরেও আমরা আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম সমূহ সময় মতো পরিচালনা করেছি এবং কোন কোন সেমিস্টারে আমরা শনিবারে ক্লাসের কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা বিভাগকে সেশনজট মুক্ত রেখেছি।
সব কিছুর পরেও কিছু সমস্যা থেকে যায়। যেমন আমরা বিভাগের ফান্ড থেকে প্রত্যেক বছর ১৫-২০ হাজার টাকার বই কেনার টাকা পাই, যা পর্যাপ্ত নয়। মুট কোর্ট এর জন্য আমাদের পর্যাপ্ত রুম নেই। তাই বিকল্প হিসেবে আপাতত ক্লাসরুমে এর কার্যক্রম চালিয়ে যাবো। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ক্লাব যেমন ডিবেটিং ক্লাব, স্পোর্টস ক্লাব, কেস স্টাডি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছি।এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা তাদের এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ গুলো পরিচালনা করতে পারবে।
পিবিএ/এএ/আরআই