জয়পুরহাট-মোকামতলা মহাসড়কের কাজ চলছে ধীরগতিতে

পিবিএ,জয়পুরহাট: জয়পুরহাট-মোকামতলা মহাসড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে জীরনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন যানবাহনসহ পথচারী চলাচল করছিল। এই পরিস্থিতি থেকে জয়পুরহাটের জনগনসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৫ জেলার বিভিন্ন যানবাহনের চলাচলের উপযোগী করতে বর্তমান সরকার গত ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিলে জয়পুরহাট রেলগেট থেকে শিবগঞ্জন উপজেলার মোকামতলা পর্যন্ত প্রায় ৩৬ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’ধারে ২৪ ফুট প্রশস্তকরণের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ১৯৪.৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন।

কিন্তু তারা বিভিন্ন অজুহাতে প্রায় ১৩ মাসে ৩৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ৫ কিলোমিটারের কাজ সম্পূর্ন হয়েছে। আর ৩১ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ২১ কিলোমিটার সড়কে নতুন করে বালু, খোয়া ও পাথর দেবে দিয়েছে। ১০ কিলোমিটার সড়কের কাজ চলছে ধীরগতিতে। বর্তমান এই সড়কটির উপরিভাগের ইটের খোয়া ও পাথরগুলো রোলার না করায় এবং গত কয়েক সপ্তাহ বৃষ্টির পানি ও ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে বিভিন্ন স্থানে ছোট ও বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ভারি মালবাহী ট্রাক ও দুরপাল্লা বাস চলাচল করতে গিয়ে অকেজু হয়ে দিনের পর দিন এই সড়কে পরে থাকতে দেখা গেছে। এর ফলে বর্তমান পথচারীসহ সকল যানবাহনকে চরম দুর্ভোপোহাতে হচ্ছে।

জয়পুরহাট-মোকামতলা মহাসড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে জীরনের ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন যানবাহনসহ পথচারী চলাচল করছিল।
জয়পুরহাট-মোকামতলা মহাসড়কের কাজ চলছে ধীরগতিতে

সরেজমিনে এলাকাবাসী ও জেলা সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাট রেলগেট থেকে শিবঞ্জন উপজেলার মোকামতলা পর্যন্ত প্রায় ৩৬ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’ধারে ২৪ ফুট প্রশস্তকরণের জন্য গত ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় ১৯৪.৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। দরপত্র অনুযায়ী এই কাজ পায় নাভানা গ্রুপ ও রাজশাহী শহরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান র‌্যাব-আর.সি লিমিটেড এবং মের্সাস প্যারাডাইস ট্রেডার্স।

এর মধ্যে রাজশাহী শহরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান র‌্যাব-আর.সি লিমিটেড এবং মের্সাস প্যারাডাইস ট্রেডার্স গত ২০১৭ সালে ডিসেম্বর মাসে ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে কাজটি শুরু করেন গত ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এবং নাভানা গ্রুপ গত ২০১৮ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে কাজটি শুরু করেন গত ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে। ওই ৩৬ কিলোমিটার সড়কটি ৩টি প্যাকেজে টেন্ডার হয়েছে।

প্যাকেজ ৩টি কালাই উপজেলার পুনট বাসস্ট্যান্ড থেকে শিবঞ্জগন উপজেলার মোকামতলা পর্যন্ত, কালাই উপজেলার পুনট বাসস্ট্যান্ড থেকে ক্ষেতলাল উপজেলার মাটির ঘর পর্যন্ত এবং ক্ষেতলাল উপজেলার মাটির ঘর থেকে জয়পুরহাট রেলগেট পর্যন্ত। কালাই উপজেলার পুনট বাসস্ট্যান্ড থেকে মাটির ঘর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটারের কাজ পায় রাজশাহী শহরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান র‌্যাব-আর.সি লিমিটেড এবং মের্সাস প্যারাডাইস ট্রেডার্স।

আর কালাই উপজেলার পুনট বাসস্ট্যান্ড থেকে শিবঞ্জন উপজেলার মোকামতলা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার সড়ক এবং ক্ষেতলাল উপজেলার মাটির ঘর থেকে জয়পুরহাট রেলগেট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কটির কাজ পায় নাভানা গ্রুপ। কালাই উপজেলার পুনট বাসস্ট্যান্ড থেকে শিবঞ্জগন উপজেলার মোকামতলা পর্যন্ত প্রায় ১৬ কিলোমিটার সড়কে আগের পুরাতুন কার্পেটিং তুলে নতুন করে বালু, খোয়া ও পাথর দেবে দিয়ে তারা নতুন কার্পেটিং না করে বর্তমান কয়েক সপ্তাহ যাবৎ বন্ধ রয়েছেন।

আর ক্ষেতলাল উপজেলার মাটির ঘর থেকে জয়পুরহাট রেলগেট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কের ধীরগতিতে কাজ চলছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তবে পুনট থেকে মোকামতলা পর্যন্ত কাজ শেষ হবে জুলাই মাসে এবং মাটির ঘর থেকে জয়পুরহাট রেলগেট পর্যন্ত কাজ শেষ হবে ডিসেম্বর মাসে।

অন্যদিকে কালাই উপজেলার পুনট বাসস্ট্যান্ড থেকে ক্ষেতলাল উপজেলার মাটির ঘর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটারের সড়কে আগের পুরাতুন কার্পেটিং তুলে নতুন করে বালু, ইট, খোয়া ও পাথর দেবে দিয়েছে প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কের অর্ধেক কার্পেটিং হয়েছে। বাঁকী কালাই বাসস্ট্যান্ড থেকে উপজেলার পুনট বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার সড়কে বালু, ইটের খোয়া ও পাথর ফেলে রেখে কয়েক সপ্তাহ যাবৎ তারা বন্ধ রয়েছেন।

জয়পুরহাট-মোকামতলা মহাসড়কের কাজ চলছে ধীরগতিতে

বর্তমান এই সড়কটির উপরিভাগের ইটের খোয়া ও পাথরগুলো রোলার না করায় বিভিন্ন স্থানে ছোট ও বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। ওই সড়কে বিছানো বালু, ইটের খোয়া, পাথরগুলো গত কয়েক সপ্তাহ বৃষ্টির পানি ও ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে ওই সড়কে অসংখ ছোট বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে বর্তমান ওই সড়কের কাজ পুরোদমে বন্ধ রেখেছে তারা। তবে এই অংশের কাজ শেষ হবে চলতি বছরের জুন মাসে।

জয়পুরহাট-মোকামতলা এই আঞ্চলিক মহাসড়ক দিয়ে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ৫ জেলার প্রতিদিন শতশত বিভিন্ন যানবাহনসহ হাজার হাজর পথচারী চলাচল করে। এই সড়কে বেহাল অবস্থায় ফলে অতিরিক্ত যানবাহন চলাচলের কারণে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

সেই সঙ্গে ওই সড়কে বালু ও মাটি থাকায় প্রতিদিন শতশত ভারী যানবাহন চলাচলের কারনে মরুভূমির মতো বাতাসে ধুলা-বালি উড়ছে। ওই সড়কের আশে পাশে থাকা মানুষের ঘববাড়ী ধুলা-বালির প্রলোব পরছে। এতে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার বিভিন্ন শ্রেণীর পথচারীসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছেন।

উপজেলার পুনট গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল হামিদ,জাহাঙ্গীর হোসেন ও কালাই পৌরসভার বাসিন্দা ইমরান, তারেক বলেন, জয়পুরহাট-মোকামতলা সড়ক দিয়ে চলাচলের সময় খুব কষ্ট হচ্ছে। এই সড়কটি কয়েক সপ্তাহ ধরে সংস্কারের অভাবে চলাচলের জন্য বর্তমান একেবারে অযোগ্য হয়েছে। তাই খুব তাড়াতাড়ি সংস্কার করা দরকার।

এই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মালবাহী ট্রাকের চালক হামিদুল ইসলাম ও জোবায়ের হোসেন বলেন, প্রায় এক বছর ধরে এই সড়ক দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এই সড়কে অনেক ট্রাক ও বাসের বেশ কয়েক বার ছোট বড় দূর্ঘটনাও ঘটেছে।

এই সড়ক দুরপাল্লার কোর্চ চালক সামিম হোসেন ও তারিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে এই সড়কের যে অবস্থা, তাতে যে কোন মহুর্তে আরও বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। বর্ষার আগ মহুর্তে দ্রুত এই সড়কের কাজ সমাপ্ত করলে ভাল, আর না হলে নিশ্চিত সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।

জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের বাসের কালাইয়ের চেইন মাষ্টার আতাউর রহমান বলেন, এই সড়কের কারনে অনেক বাস বিকল হচ্ছে এবং বিভিন্ন যন্ত্রংস বেঙ্গে যাচ্ছে। এই সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হলে সবার জন্য উপকার হবে।

রাজশাহীর র‌্যাব-আর.সি লিমিটেড এবং মের্সাস প্যারাডাইস ট্রেডার্সের প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকের সুপারভাইজার রবিউল হাসাননের বলেন, আমাদের বড় স্যার বিদেশে থাকার কারনেই এখন কাজ বন্ধ রয়েছে। তিনি বিদেশ থেকে এলেই কাজ শুরু হবে।

র‌্যাব-আর.সি লিমিটেড এবং মের্সাস প্যারাডাইস ট্রের্ডাসের পক্ষে সড়কের কাজ দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকা মাজেদুর রহমান বলেন, আমাদের শ্রমিকের সংকটের কারনের জন্য বর্তমান এই সড়কে কাজ বন্ধ রয়েছে। আগামী দুই-একদিনে মধ্যই আবারও কাজ শুরু হবে।

এই বিষয়ে জেলার সওজ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ছাইফুল ইসলাম বলেন, জয়পুরহাট-মোকামতলা মহাসড়কের ৩টি প্যাকেজের কাজ হচ্ছে। ২টি প্যাকেজের কাজ বর্তমান বন্ধ রয়েছে। একটি প্যাকেজের কাজ বর্তমান চলছে। কিন্তু কেন ওই ২টি প্যাকেজের কাজ বন্ধ রেখেছেন এই বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানেরাই আমার চেয়ে তারাই ভালো জানেন। তবে আমার মনে হয় তাদের ব্যাক্তিগত কারনের জন্য কাজ বন্ধ করে রেখেছেন।

পিবিএ/বিএস/আরআই

আরও পড়ুন...