পিবিএ ডেস্কঃ কথায় কথায় ‘গরম তেলে বেগুন পড়া’-র মতই চড়বড়িয়ে রেগে উঠলে মন তো বটেই শরীরও খারাপ হয়ে যায়। একই সঙ্গে শিকেয় ওঠে কাজকর্ম। কেরিয়ারগ্রাফ উপরের দিকে না উঠে নিম্নমুখী হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। এককথায় রাগ আমাদের জীবনের এক মহাশত্রু। রাগকে বশে না রাখতে পারলে অতিরিক্ত তা রক্তচাপও বাড়িয়ে দেয়। তাই রাগ নামক ভয়ানক রিপুকে বশে না রাখলেই বিপদ!
আসলে রেগে গেলে আমাদের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্ম কিছুটা ওলটপালট হয়ে যায়। আর এর থেকেই বাড়ে শরীর ও মনের নানা অসুবিধা। ‘‘আজকের দ্রুতগতির জীবনে মানসিক চাপ বাড়ছে, এর যথাযথ মোকাবিলা না করতে না পারলেও রাগ বাড়ে। মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায় রাগ হল নেগেটিভ ইমোশন। রেগে গিয়ে তার বহিঃপ্রকাশ তীব্র হলে সমস্যা হয় তখনই। আমরা সবসময়ই পরামর্শ দিই এক্সপ্রেশন অব অ্যাঙ্গার অর্থাৎ রাগের প্রকাশকে নিয়ন্ত্রনে রাখতে।’’
অনেকেই বলেন রাগ নাকি তাঁর বংশগত। কিন্তু মনোবিজ্ঞান বলছে ব্যাপারটা পরিবেশগত। শিশু যদি ছোটবেলা থেকে দেখে যে রাগ হলে বাবা অথবা মা চিৎকার করে, হাতের কাছে যা পায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়, তা হলে বাচ্চার রাগের বহিঃপ্রকাশ হবে একই রকম। তাই রাগ হলে চেষ্টা করতে হবে যত সম্ভব কম উত্তেজিত হতে। আসলে রাগ আর উত্তেজনা আমাদের শরীর ও মনের নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
চিকিৎসকদের মতে, হতাশা, ভয়, অবিচার ইত্যাদি বিভিন্ন কারণ আমাদের মস্তিষ্কের অ্যামিগডালা অঞ্চলে পৌঁছলে হাইপোথ্যালামাসকে উত্তেজিত হয়ে পড়ে কর্টিকোট্রফিন রিলিজিং হরমোন নিঃসরণ হয়। সিগন্যাল পৌঁছে যায় পিট্যুইটারিতে। এর ফলে অ্যাড্রিনোকর্টিকোট্রফিক হরমোন নিঃসৃত হয়ে অ্যাড্রিনালিন গ্রন্থি উত্তেজিত হয়ে পড়ে। এর ফলে নানা স্ট্রেস হরমোন ক্ষরণ বেড়ে যায়। সব মিলে এক গোলমাল শুরু হয়ে যায় শরীরের মধ্যে। প্রথমেই বাড়তি স্টেরয়েড হরমোন নিউরোন ধ্বংস করে ফেলে। ফলে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়। শর্ট টার্ম মেমরি লস হতে পারে।
রাগের কারণে হার্টের ক্ষতি বেড়ে যায়। কেননা, হার্ট রেট, ব্লাড প্রেশার বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। এমনকি রক্তে ফ্যাটি অ্যাসিডেরও মাত্রাধিক্য হয়। এর নিট ফল হার্টের ওপর বাড়তি চাপ। চণ্ডাল রাগের ঠেলায় চিৎকার চেঁচামেচি করে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এমন নজির আছে ভুরি ভুরি। তবে শুধু হার্টই নয় রাগের বহিঃপ্রকাশ তীব্র হলে মাইগ্রেন-সহ অন্যান্য মাথা ব্যথার প্রকোপ বাড়ে, হজম ক্ষমতা কমতে শুরু করে, থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যক্ষমতা কমে যায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে শুরু করে, চোখের প্রেশার বেড়ে গিয়ে দৃষ্টি শক্তি কমতে শুরু করে। যারা অল্প বিস্তর রাগেন ও নিজেরাই মাথা ঠান্ডা রেখে তার মোকাবিলা করেন তাঁদের খুব বেশি সমস্যা হয় না। কিন্তু যারা সামান্য কারনেই রেগে গিয়ে চিৎকার চেঁচামেচি করেন, ঘন ঘন রেগে ওঠেন তাঁদেরই বেশি সমস্যা হয়। আর এই কারনেই রাগ প্রশমন করতে হয়। জেনে নিন কী ভাবে রাগের মোকাবিলা করবেন।
রাগ হলে প্রথমেই নিজেকে সংযত করতে হবে।
চিৎকার-চেঁচামেচি না করে জায়গা পরিবর্তন করুন বা সেই জায়গা থেকে অন্যদিকে চলে যান।
ধীরেসুস্থে একগ্লাস ঠান্ডা পানি পান করুন।
যে কারণে আপনার রাগ হয়েছে সেই কারণটা মাথা থেকে বার করে দেওয়ার চেষ্টা করে অফিসে বা বাড়িতে অন্য জায়গায় গিয়ে অন্য জনের সঙ্গে সম্পুর্ন নতুন বিষয় নিয়ে কথা বলুন। রাগের কারণ মাথায় আনাগোনা করলেও তাকে বেশি পাত্তা দেবেন না।
ধরা যাক কথা বলার মতো কেউ নেই তখন জানলার দিকে তাকিয়ে ভাল কোনও ঘটনার কথা মনে করার চেষ্টা করুন। একে বলা হয় সুইচ অন ও সুইচ অফ। অর্থাৎ মন্দ কথা ও রাগের সুইচ অফ করে ভাল ঘটনার সুইচ অন করে দিলেন। এতে সাময়িক ভাবে মন শান্ত হবে।
কিন্তু রাগের কারণ এমনই বিরক্তিকর যে কিছুতেই ভুলতে পারছেন না, যেখানে আপনার কোনও দোষই নেই, সেখানে ক্ষমাই পরম ধর্ম। স্রেফ ক্ষমা করে দিন, মনে করুন যার উপর রাগ হয়েছে তাঁর থেকে আপনি অনেক উচ্চ মানের। তাই রাগ করে নিজের শরীর, মন ও কাজের ক্ষতি করার কোনও মানে হয় না।
রেগে গিয়ে চিৎকার করে রাগ না দেখানো মানে কিন্তু আপনি হেরে যাননি। প্রমাণ হয় যে আপনি ঠান্ডা মাথার বুদ্ধিমান মানুষ এবং আপনার জোর অন্যদের থেকে অনেক বেশি।
তাও যদি মনের মধ্যে রাগ থেকে যায় সেই রাগ পুষে না রেখে তাকে অবজ্ঞা করুন।
এতেও যদি রাগ না কমে তাকে একটা বড়সড় চিঠি বা মেল লিখে ফেলুন, প্রাণ ভরে অপমানজনক কথা লিখুন। সেভ করে রাখুন, কিন্তু পাঠাবেন না, পরে ডিলিট করে দেবেন। দেখবেন রাগ চলে গিয়েছে।
ঘন ঘন কারণে-অকারণে রাগ হলে নিয়মিত যোগাসন ও প্রাণায়াম করুন। রাগের প্রকোপ কমবে।
কাজের চাপে বিরক্তি ও রাগ আসতে পারে। সে ক্ষেত্রে কাজের শেষে গান শুনুন বা বই পড়ুন। বাইরে বেড়াতে যেতে পারলেও মন ঠাণ্ডা হয়।
কারণে-অকারণে যারা রেগে যান তাঁদের ইগো আর চাহিদা খুব বেশি। আবার কোনও সমস্যার সমাধান করতে না পারলে রাগ বাড়ে। জীবনে একরকম চেয়েছিলেন অন্য রকম কিছু হলেও হতাশা আর রাগ আসে। সে ক্ষেত্রে যা পেয়েছেন তার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিতে চেষ্টা করতে হবে। এতেও কাজ না হলে অবশ্যই এক জন সাইকোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
পিবিএ/এমআর