পিবিএ,খুলনা: শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা লঙ্ঘণ করে খুলনার কয়েকটি সরকারি স্কুলে আসনের অতিরিক্ত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। জেলা ভর্তি কমিটি ‘মানবিক ও প্রশাসনিক’ কারণ দেখিয়েছে। এ ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুযায়ী মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমোদনের প্রয়োজন হলেও সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। পরীক্ষা ছাড়াই শুধুমাত্র ভর্তি কমিটির সভার মাধ্যমে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে, এ ঘটনার দায় খোদ ভর্তি কমিটির সদস্য সচিবও নিতে চাননি। এমনকি সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকরাও তাদের দীর্ঘ চাকরি জীবনে এ ধরণের ঘটনার সম্মুখিন হননি বলে জানিয়েছেন। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েও উল্লিখিত সরকারি স্কুলগুলোতে ভর্তির সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরাও এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, খুলনা জিলা স্কুলে বিভিন্ন শ্রেনিতে ১৬ জন, করোনেশন সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ৩০ জন, খুলনা সরকারি মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে (মন্নুজান) ৭ জন, ইকবাল নগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ৪জন এবং গভঃ ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৩ জন অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির তথ্য পাওয়া গেছে। তবে, সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি মহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কে.ডি.এ খানজাহান আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও অনিয়মের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র মতে, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে খুলনার সরকারি স্কুলগুলোতে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং প্রতিযোগিতার মধ্যে দিয়ে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয় শিক্ষার্থীরা। এ ভর্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই স্কুলগুলোর নির্দিষ্ট সংখ্যক আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। কিন্তু চলতি বছরের তিন মাস অতিক্রমের পর উল্লিখিত স্কুলগুলোর ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ,৭ম এবং ৮ম শ্রেনীতে প্রথমবারের মতো একসঙ্গে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য সুপারিশ করেন ভর্তি কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক। চলতি মাসের ২০ ফেব্রুয়ারী ভর্তি কমিটির এক সভায় এ সুপারিশ করা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, ‘ইতোমধ্যে ভর্তি পরীক্ষার মধ্যমে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও আবেদনের বিষয়ে খুলনার জনপ্রতিনিধিসহ অন্যান্য সরকারি গুরুত্বপুর্ণ কর্মকর্তা ও ব্যক্তির সুপারিশের প্রেক্ষিতে আবেদনপত্র সমূহ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির নীতিমালার আলোকে যাচাই-বাছাই করা হয়। অতঃপর ‘মানিবক ও প্রশাসনিক’ কারণে আবেদনসমূহ ভর্তির জন্য অনিবার্য হওয়ায় উপস্থিত সদস্যবৃন্দ ভর্তির জন্য একমত পোষণ করেন।’
জেলা ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব, খুলনা জিলা স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, কোন স্কুলেই আসন শূণ্য ছিল না। কিন্তু ভর্তি কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সদস্য সচিব হিসেবে তিনি রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেছেন মাত্র। এ বিষয়ে তার কিছুই করার ছিল না। এর বাইরে মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, খুলনা জিলা স্কুলে বিভিন্ন শ্রেনিতে ১৬জন, করোনেশন সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ৩০জন, খুলনা সরকারি মাধ্যমিক বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে (মন্নুজান) ৭জন, ইকবাল নগর সরকারি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ৪জন এবং গভঃ ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৩জন অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ দেওয়া হয়।
একাধিক স্কুলের শিক্ষক জানিয়েছেন ভর্তি কমিটির সভাপতি (জেলা প্রশাসক) ভর্তির জন্য চিঠি দিয়েছেন, সে কারণে আমরা নিরুপায় হয়ে ভর্তি করেছি। ভর্তি কমিটির সভাপতি ও খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ হেলাল হোসেন বলেন, ভর্তি কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ি কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থিকে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় ‘গণ্যমান্য’ ব্যাক্তির সুপারিশে ও মানবিক কারণে এটি করা হয়েছে।
পিবিএ/এইচআর/আরআই