হাটহাজারীতে ট্যাংকার দূর্ঘটনায় খালে ছড়িয়ে পড়ছে ফার্নেস অয়েল


খোরশেদ আলম শিমুল,পিবিএ, হাটহাজারী: হাটহাজারী পৌরসভার দেওয়াননগর এলাকার মরাছরা খালের রেলের সেতুতে লাইনচ্যুত হয়ে তিনটি ট্যাংকার খালে পড়ে যাওয়া দূর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রেল বিভাগের পৃথক তিনটি তদন্ত দল। মঙ্গলবার(৩০এপ্রিল) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে তদন্ত দলের সদস্যেরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

তাছাড়া রেলওয়ের ব্যবস্থাপক সৈয়দ ফারুক আহম্মদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তদন্ত দলের সদস্যদের নির্দেশনা প্রদান করেন। দূর্ঘটনায় পড়ে যাওয়া ফার্নেস অয়েল খালের পানির সাথে মিশ্রিত হয়ে মরাছরা খালে ছড়িয়ে পড়ে এতে মাছ ও জীববৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকর। এসব ক্ষতিকর তৈল যাতে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য উপজেলা প্রশাসন পদক্ষেপ গ্রহন করেছেন। ছড়ায় পড়া তৈল যাতে হালদা নদীতে যেতে না পাড়ে সে জন্য প্রশসনের লোক ও স্থানীয়রা এসব তৈল উত্তোলন করে যাচ্ছে। উত্তলোন কৃত তৈল উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজন থেকে পদ্মা অয়েল কোম্পানী কিনে নিচ্ছেন প্রতি লিটার ২০ টাকা দরে। তাছাড়া দূর্ঘটনার পর চট্টগ্রাম- নাজিরহাটের সাথে বন্ধ ট্রেন যোগাযোগ চালু করার জন্য রেল কর্তৃপক্ষ দ্রুত কাজ করে যাচ্ছেন।

জানা যায়, গত সোমবার আড়াইটার দিকে হাটহাজারী ১১মাইল ১০০ মেগাওয়াট পিকিং বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ফার্নেস অয়েলবাহী ট্যাংকার পৌরসভার দেওয়ান নগর এলাকার মরাছরা খালের রেলের সেতুতে লাইনচ্যুত হয়ে তিনটি ট্যাংকার খালে পড়ে যায়। এসব ট্যাংকারে প্রতিটিতে ২৪ হাজার লিটার করে ফার্নেস অয়েল ছিল। তাছাড়া আরো চারটি ট্যাংকার লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। মরাছরা খালে পড়ে গিয়ে ট্যাংকারে রক্ষিত ফার্নেস অয়েল পানির সাথে মিশ্রিত হয়ে যায়। তবে মাছ ও জীববৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকর ফার্নেস অয়েল যাতে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে গিয়ে পড়তে না পরে সেজন্য খালের দীর্ঘ আড়াই কিলোমিটার এলাকা জুড়ে উপজেলা প্রশাসন দূর্ঘটনার পর দিবাগত রাত পর্যন্ত ১১ টি স্থানে বাঁধ দিয়ে খালে পানি সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। তাছাড়া ক্ষতিকর এ তৈল সরানোর জন্য উদ্যেগ গ্রহন করেছেন।

এমনকি স্থানীয় জনসাধারণকে এব্যাপারে সহযোগীতা করতে ইউএনও গত সোমবার সন্ধ্যায় মাইকিং করেছেন। ছরা থেকে সংগৃহীত তৈলের বিক্রিলব্ধ অর্থ সংগ্রহকারীদের প্রদান করা হবে বলে ও প্রচার করা হয়। মাইকিং শুনে সোমবার থেকে অসংখ্য লোক তৈল সংগ্রহ করতে ছরাখালে নেমে পড়ে। গত সোমবার থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত খালের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় ১৫ হাজার লিটার ফার্নেস অয়েল সংগ্রহ করা হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংগৃহীত এসব ফার্নেস অয়েল পদ্মা অয়েল কোম্পানীর নিকট বিক্রির করার প্রস্তাবনা প্রদান করা হয়। প্রস্তাবনা পেয়ে কোম্পানীর ব্যবস্থাপক অপারেশন আবু সালেহ ইকবাল কোম্পানীর স্টাফ,গাড়ী ও তৈল পরিবহনের সরঞ্জাম নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। স্থানীয় জনগণ কর্তৃক সংগৃহীত প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েল ২০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। রেল কর্তৃপক্ষের কর্মীরা নাজিরহাটের সাথে রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক করতে দুর্ঘটনার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল সোমবার খালে পড়ে যাওয়া ট্যাংকার গুলো থেকে লাইনচ্যুত চারটি ট্যাংকার বিচ্ছিন্ন করে রেলকর্মীরা রেল লাইনে প্রতিস্থাপন করেছেন। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত খালে পড়ে যাওয়া ট্যাংকার গুলো উদ্ধার করা হয়নি।

এদিকে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমীন মঙ্গলবার ৬টায় পিবিএকে বলেন ফার্নেস তেল ভর্তি তিনটি ওয়াগন থেকে মরাছড়া খালে প্রবাহিত তৈল গত সেমাবার বিকাল থেকে মঙ্গলবার বিকাল ৬টা পর্যন্ত ১৫হাজার লিটার ফর্নেস তেল খাল থেকে অপসারিত করেছে স্থানীয়রা। যতক্ষণ ছড়ায় তেল থাকবে ২৪ ঘন্টা তেল অপসারন করা হবে।
তিনি আরও বলেন ছড়া থেকে তেল অপসারনে ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সত্তর বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত নেমে পড়েছে। সবাই একটি মাত্র উদ্দেশ্যে কে সামনে রেখে এ তেল অপসারন করেছে। পরিবশে দূষণ বন্ধ করতে। পদ্মা ওয়েল কোম্পানি মানুষ থেকে সংগ্রহকৃত তেল ২০টাকা দরে কিনে নিচ্ছে।
পিবিএ/এমএসএম

আরও পড়ুন...