খুলনায় মজুরি আদায়ের লড়াইয়ে দিন কাটে শ্রমিকদের

পিবিএ.খুলনা: শিল্পনগরী খুলনায় ষাটের দশকে গড়ে ওঠে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি মিল কলকারখানা। সেগুলোর অধিকাংশরই চাকা ঘোরে না এখন। আর যে গুলো চালু আছে সেখানে নিয়মিত মজুরি পাচ্ছেন না শ্রমিকরা। ফলে হাজার হাজার শ্রমিকের দিন কাটে বকেয়া মজুরি আদায়ের লড়াইয়ে।

আবার অনেক শ্রমিক চাকুরি হারিয়ে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। নিরুপায় শ্রমিকদের কিছু অংশ দিনমজুরীর কাজ ও অনেকে গ্রামে যেয়ে ক্ষেতের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এদিকে রাষ্ট্রায়াত্ব পাটকল শ্রমিকদের ১০ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া থাকায় তাদের মাঝেও অসন্তোষ বিরাজ করছে। ফলে বছরের অধিকাংশ সময় এসব শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবী নিয়ে রাজপথে নামতে দেখা যায়।

আন্দোলন
মজুরি আদায়ের লড়াইয়ে দিন কাটে শ্রমিকদের

সূত্র অনুযায়ি, খুলনা অঞ্চলে সরকারি ও বেসরকারি জুট মিল রয়েছে ৩৫টি। এর মধ্যে বেসরকারি ২৫টি ও সরকারি আছে ১০টি। এছাড়া রয়েছে হার্ডবোড মিল, নিউজপ্রিন্ট মিল, দাদাম্যাচ ফ্যাক্টরী, মাছ কোম্পানিসহ বিভিন্ন ছোট বড় প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে দীর্ঘদিনেও চালু হয়নি খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল, দাদা ম্যাচ ফ্যাক্টরী ও হার্ডবোর্ড মিল।

খালিশপুর ও দৌলতপুর জুট মিল চালু হলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের চাকুরি স্থায়িকরণ হয়নি। বেসরকারি স্পেশালাইজড এ্যাজাক্স জুট স্পিনার্স, মহসেন জুট মিল দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি আফিল জুট মিল ও সোনালী জুট বন্ধ হয়েছে। এছাড়া নওয়াপাড়া মিলের বিভিন্ন ইউনিট বন্ধ রয়েছে।

এসব জুট মিলের শ্রমিকদের চাকুরি থেকে ছাটাই করা না হলেও তাদের বেতন বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। যে কারনে অনেক শ্রমিক মিল চালু হওয়ার আশায় দিন গুনছেন। সেই বকেয়া মজুরি আদায়ের জন্য রাজপথে লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। বেসরকারি পাট ও বস্ত্রকল সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রিয় সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সবুজ বলেন, খুলনা অঞ্চলের শ্রমিকরা আজ ভালো নেই। তারা নিয়মিত বেতন পাচ্ছে না। মিলগুলোতে শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকা বকেয়া পাওনা রয়েছে। দীর্ঘদিন বন্ধ করে রাখা মিলগুলো চালু করার কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না মালিকরা।

এ অবস্থায় শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংগঠনের কেন্দ্রিয় সভাপতি শেখ আনছার উদ্দিন বলেন, বেসরকারি অধিকাংশ মিল এখন বন্ধ। আর যে মিলগুলো চালু রয়েছে তার অনেক ইউনিট বন্ধ রয়েছে। ফলে সেখানে শ্রমিক ছাটাই করা হচ্ছে। এ অবস্থায় শ্রমিকরা অর্ধাহারে-অনাহারে রয়েছে। যে কারণে অধিকার আদায়ের জন্য তারা রাজপথে অবস্থান নিতে বাধ্য হচ্ছে।

বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৯টি পাটকলে শ্রমিকদের ৬ থেকে ১০ সপ্তাহের মজুরি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। তাদের পাওনার পরিমাণ প্রায় ৫২ কোটি টাকা। শ্রমিকদের মজুরি কমিশন কার্যকর সংক্রান্ত দাবির সাথে একমত বিজেএমসি এবং পাটকলের কর্মকর্তারাও।

তারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদা কমে গেছে। বর্তমানে ৩০০ কোটি টাকা মূল্যের পাটজাত পণ্য বিক্রির অপেক্ষায় রয়েছে। সে কারণে সময়মতো শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। তারা জানান, ৯টি পাটকলে স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন ১৩ হাজার ১৭০ জন এবং বদলি শ্রমিক সংখ্যা ১৭ হাজার ৪১৩ জন।

প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মোঃ নাছির উদ্দিন বলেন, ১১ সপ্তাহের মজুরি নেই। মজুরি কমিশন তো দূরের কথা নিয়মিত মজুরিও পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে অর্থ সংকটে দিশেহারা হয়ে পড়েছি আমরা। করুণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ পাটকল শ্রমিক লীগের খুলনা-যশোর আঞ্চলিক কমিটির আহবায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন বলেন, ‘আজ মে দিবসেও মজুরি আদায়ের জন্য রাজপথে নামতে হয়েছে। শ্রমিকের মনে শান্তি নেই। পরিবার পরিজনের মুখে আহার দিতে পারছি না। দিশেহারা হয়ে পড়েছি আমরা। বেতন নেই, মজুরি নেই, ঘরে খাবার নেই। এ অবস্থায় সুস্থ্য জীবন-যাপনের অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে খুলনার শ্রমিকরা।’

পিবিএ/এইচআর/আরআই

আরও পড়ুন...