“ভোটার হতি হয় কেম্বা বাবা”

পিবিএ,কুষ্টিয়া:“আসমানীদের দেখতে যদি তোমরা সবে চাও রহিম উদ্দিন ছোট্ট বাড়ী রসুল পুরে যাও বাড়ী তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার সানি ইকটুখানি বৃষ্টি হলে গড়িয়ে পড়ে পানি” না এটি আমাদের পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের কবিতার কথা বলছি না, এটি বলছি কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশনের বারান্দায় জীবন কাটানো প্রায় ৪ যুগ বসবাস করা বাতাসি (৪৮) ও তার মা খোদেজা বেগমের (৬৮) গল্প।

যুদ্ধের আগে স্বামি মারা যাওয়ার পর যুদ্ধ শেষে জীবনর যুদ্ধে নেমে পড়েন খোদেজা বেগম । মেয়েকে নিয়ে ১৯৭১ সালের শেষ দিকে প্রথমে ফরিদপুর তারপর রাজবাড়ী জেলার পাংশা বাগদুলি গ্রাম ছেড়ে জীবিকার উদ্দ্যেশে চলে আসেন কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশনে । সেই থেকে সংগ্রাম, খেয়ে না খেয়ে রাত কাটিয়ে দেন কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশনের বারান্দায়। বাতাসির যৌবন কৈশর একে একে ৪৭ বছর পার করেছেন। এখন তাকে সবাই বাতাসি পাগলি নামে চেনে।

“ভোটার হতি হয় কেম্বা বাবা”
বাতাসি (৪৮) ও তার মা খোদেজা বেগম (৬৮)

ষ্টেশনের কখোনো পুর্ব দিকে আবার কখোনো পশ্চিম দিকে চায়ের দোকানে দিনে ৫ কাপ চান খান বাতাসি বেগম। সহজ সরল কথা নিয়ে ব্যাস্ত থাকেন বাতাসি বেগম। কোর্ট ষ্টেশনে সামান্য বেতনে ষ্টেশন ঝাড়–দারের কাজ করে আর মা খোদেজা বেগমের হাত পাতা টাকা দিয়ে চলে তার খাওয়া পড়া । খোদেজা বেগম অস্পষ্ট কথায় বলেন যুদ্ধের সময় খাওয়া লোক গুলোই তখন ফ্যানপানি খাইয়ে দিন কাটায়ছে আর আমরা তো না খাওয়া মানুষ যুদ্ধ শেষ হলিই মিয়াডা নিয়ে চলি আসি কুষ্টিয়া কোর্ট ষ্টেশনে। মিয়া থুয়ে কাজ কাম করতাম আর এ ষ্টেশনে রাত কাটাতাম জীবনের সাথে যুদ্ধ করে রাতে থাকতে হতো এ ষ্টেশনে।

এর সাথে থাকতো রাতের হায়নারা। তারপর অনেকক্ষন চুপ থেকে বলেন, বেশি কথা বললে বৃদ্ধ বয়সে গলা ধরে আসে। ভাতার কার্ডের কথা বলতেই তিনি বলেন, বাবা মরার আগে কি ভাতা কার্ড পামু-নি। বাবা ভাতা কার্ড কারে কয়, আর আমি তো ভোট দিইনে, ভোটার হতি হয় কেম্বা বাবা।

তিনি আরো জানান মিয়াডারে নিয়া চিন্তা আমি নাই মিয়াডারে পাহারা দিয়ে গেলাম। আমার তো মরনের সময় কি হইবো বাতাসির, আল্লাছাড়া উপায় নাই। এ ষ্টেশনই আমার এখন মাথা গুজার একমাত্র ঠাঁই। পানি ধুলা নিয়ে পড়ে থাকি স্টেশনে এই ডা যেনো না হারায় বাবা । বাতাসির সাথে কথা বললে জানায়, আমার একটা ঘরের ব্যবস্থা করলি আমি ঘরে থাকতি পারতাম। সেই ছোট কালে আইছি আজও ঘর হলোনা আর আমারে ঘর দিবি কিডা, আমিও তো ভোটার না কেম্বা করে ভোটার হবো সমবাদিক ভাই।

আমারে আরো ধরে নিয়ে যায় কতো কষ্ট করে মাকে ছারাইছি । ষ্টেশনের সদ্দার মুকুল বলেন, আমার বাবা ছিলেন সদ্দার আমিও সদ্দার গিরি করছি। আমি সেই ছোট বেলা থেকেই মা মেয়েকে দেখছি, ওরা জীবনে মরার আগে ঘর দেখে যেতে পারলো না। ষ্টেশনের বই বিক্রেতা কামাল বলেন, আমিও প্রায় ৩০ বৎসর ব্যবসা করছি। স্টেশনেই দেখে গেলাম তাদের, তবে মা মেয়ের মাঝে কোনো খারাপ কিছু দেখলাম না। স্টেশনেই কাটিয়ে দিচ্ছে এতো গুলো বছর তবে দেখার কেউ নেই। উচ্চ বৃত্তরা একটু এদের সহায়তা দিলে এরা একটু ভালো থাকতে পারতো।

এ ব্যপারে সমাজ সেবা অফিসের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মুরাদ হোসেন বলেন, আগে জানতে হবে সে বাংলাদেশের নাগরিক কিনা, তার এন আইডি আছে কিনা। তিনি বলেন, নাগরিক জরিপ চলছে আগে নাগরিক হতে পরামর্শ দেন।

পিবিএ/কেএস/আরআই

আরও পড়ুন...