পিবিএ,নোয়াখালী: ধেয়ে আসছে ঘর্ণিঝড় ফনি। আতঙ্ক বিরাজ করছে সর্বত্র। পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র ও বেড়িবাঁধ না থাকায় নোয়াখালীর মেঘনা নদী উপকূলের ১০ লাখ লাখ মানুষ দুর্যোগ ঝুঁকিতে রয়েছে। জেলার উপকূলীয় উপজেলা হাতিয়া, কোম্পানীগঞ্জ, সুবর্নচর, কবিরহাট ও সদর আংশিক চরাঞ্চলের মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে। এদিকে ঘুর্ণিঝড় ফনির মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রেখেছে ৩৫৪টি আশ্রয়ন কেন্দ্র ও প্রায় ৭ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অভ্যন্তরিন নৌ যোগাযোগ। মাছ ধরার ট্রলারসহ সকল নৌযান উপকূলে অবস্থান করছে।
মহা বিপদ সংকেত নিয়ে বঙ্গপোসাগর থেকে নদী উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে ঘুর্ণিঝড় ফনি। ফনির সম্ভাব্য গতিবেগ বিবেচনা করে ইতোমধ্যে আবহাওয়া অধিদপ্তর নোয়াখালী, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে বয়ে যাওয়া স্মরণকালের ১০টি ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ভয়াবহ আঘাতে হাতিয়া দ্বীপে নিহত হয় প্রায় দেড় লাখ নিরীহ মানুষ।
পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র, ভেড়িবাঁধ ও সচেতনতা সৃষ্টি না হওয়ায় এ হতাহতের কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পাশাপাশি উপকূল তীরবর্তী এলাকার সাধারণ মানুষকে নিরাপদ ও আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে বলা হলেও ঘুণিঝড় সম্পর্কে তাদের ধারনা না থাকায় অনেকে বাড়ি ঘরে রয়ে যাচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাত লাখ মানুষের জন্য অন্তত ১ হাজারটি আশ্রয়ন কেন্দ্র থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ২৫০টি। ফলে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া ও সুবর্নচরের কিছু এলাকার ৯০ ভাগ মানুষ রয়েছে ঝুকিতে। কোন বড় ধরনের ঝড় আসলে আশ্রয় খুঁজে পায়না অধিকাংশ মানুষ। ফলে এসব এলাকার মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই।
হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন জানান, গভীর বঙ্গপোসাগরে সৃষ্ট ঘুর্নিঝড় ফনি প্রভাবে উত্তাল রয়েছে মেঘনা উপকূল ও নদী তীরবর্তি এলাকা। ফনির প্রভাবে উপকূলে বিরাজ করছে ঘুমোট আবহাওয়া। কখনো কখনো মাঝারি ও ঝড়ো হওয়া বইছে। সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে উপকূলে। আমাদের ইউনিয়নের চারপাশে বেড়ি বাঁধ না থাকায় আমরা নদীর পাশে অবস্থিত বাড়ি ঘর থেকে বাসিন্ধাদের নিরাপদ দুরত্বে মুজিব কেল্লায় সরিয়ে এনেছি।
হাতিয়ার ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইফুর রহমান জানান, ঘুর্ণি ঝড় ফনির মোকাবেলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি। আমরা সবাই সতর্ক আছি। সবাইকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে সরে যাওয়া ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সতর্ক রাখতে মাইকিং করা হচ্ছে।।
বৃহস্পতিবার সন্ধায় বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ম্যানেজিং বোর্ডের সদস্য ও জেলা ইউনিট সাধারণ সম্পাদক শিহাব উদ্দিন শাহিন জানান, উপকূলীয় অঞ্চলে ঘুর্ণিঝড় ফণি মোকাবেলায় রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নিজস্ব ১০৪ আশ্রয়াণ কেন্দ্র, ৩২ মাটির কিল্লা ও সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি শুকনো খাবার, সুপেয় পানি ও দুর্যোগকালীন তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে নগদ তিন লক্ষ টাকাও হস্তমজুদ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে রেড ক্রিসেন্টের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে মাইকিং, পতাকা উত্তোলণ করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক তন্ময় দাস জানান, ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ফণি মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের আওয়াতাধীন ২৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র ও সাড়ে ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও ৬ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার, ২০০ মেট্রিক টন চালসহ প্রয়োজনীয় সংখ্যক যানবাহন ও মেডিকেল টিমও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উপকূলীয় চার উপজেলা হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাটে লাল পতাকা উত্তোলন ও প্রচার মাইক বের করা হয়েছে। যে কোন প্রাণ হানি এড়াতে জেলায় সব ধরণের নৌ চলাচলা বন্ধ রাখা হয়েছে।
ই.এন ইমন/এএইচ