খুলনায় ফুটপাত দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে রাজনৈতিক কার্যালয়

পিবিএ, খুলনা: খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন সড়কের ফুটপাত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে রাজনৈতিক দলের শতাধিক কার্যালয়। এসব রাজনৈতিক কার্যালয় উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তেমন কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। যদিও সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে সম্প্রতি নগরীতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)। এ সময় বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেওয়া হলেও রাজনৈতিক দলের কোনো কার্যালয় উচ্ছেদ করা হয়নি।

শুধু সিটি করপোরেশন নয়, সরকারি জমিতে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক দলের কার্যালয় উচ্ছেদের ব্যাপারে খুব একটা তৎপরতা নেই সরকারের অন্যান্য সংস্থারও। রেলওয়ে এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখল করে নির্মিত রাজনৈতিক দলের কার্যালয় অপসারণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের পাশে নির্মাণ করা হয়েছে রাজনৈতিক দলের শতাধিক কার্যালয়। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়ই বেশি। তবে দলীয় কার্যালয় নির্মাণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই বিএনপিও।

বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার মজিদ সরণিতে কেডিএ মসজিদের বিপরীতে গড়ে উঠেছে ১৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়। এই এলাকার সৈয়দ আলী হোসেন সড়কের পাশে রয়েছে আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগের সোনাডাঙ্গা থানা কমিটির কার্যালয়, করিমনগর মোড়ে নির্মাণ করা হয়েছে ১৭নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের কার্যালয়। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান গেটের পূর্ব পাশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ এবং পশ্চিম পাশে ১৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয় বানানো হয়েছে। একই সড়কের বয়রা বাজারের কাছে রয়েছে ১৬নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের কার্যালয়। বয়রা বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকার মুজগুন্নি সড়ক ঘেঁষে গড়ে উঠেছে ১৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের কার্যালয়।
খুলনা-যশোর মহাসড়কের পাশে বৈকালী মোড়ে রয়েছে ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং ১৪নং ওয়ার্ড যুবলীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, অটো-শ্রমিক লীগের কার্যালয়। একই এলাকায় রয়েছে ১৪নং ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়ও। জোড়াগেট এলাকায় রেললাইন ঘেঁষে বঙ্গবন্ধু ইজিবাইক মালিক পরিষদ এবং মৌলভীপাড়া মোড়ে খানজাহান আলী সড়কের উত্তর পাশে ২৭নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়া নগরীর পুরনো রেলস্টেশনের পাশে রয়েছে ২১নং ওয়ার্ড বিএনপির কার্যালয়। খালিশপুরে নিউজপ্রিন্ট মিলের কাছে বিআইডিসি সড়কে রয়েছে বিএনপির আরেকটি ওয়ার্ড কার্যালয়। এ ছাড়া দৌলতপুর, রেলগেট, মানিকতলা, ফুলবাড়িগেট, খালিশপুর, নতুন রাস্তার মোড়, ৬ ও ৭ নং ঘাটসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে সরকারি জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে রাজনৈতিক দলের আরও একাধিক কার্যালয়।

এর আগে জানুয়ারি মাসেও নগরীর অধিকাংশ সড়ক ও ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান চালায় কেসিসি। অজানা কারণে সেই সময়ও এসব কার্যালয় উচ্ছেদ করা হয়নি। এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত ই খুদা বলেন, অবৈধভাবে নির্মিত দলীয় কার্যালয় উচ্ছেদ করা উচিত ছিল। এখনও উচ্ছেদ করার সময় ও সুযোগ রয়েছে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, অবৈধভাবে গড়ে তোলা দলীয় কার্যালয়ের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। ঈদের পর এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তাপসী দাস জানান, তারাও অবৈধ দখলদারের তালিকা তৈরি করছেন। এরপর উচ্ছেদ অভিযান শুরু করবেন। রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, তারাও ঈদের পর উচ্ছেদ চালাবেন।

সরকারি জমি দখল করে বিভিন্ন এলাকায় দলীয় কার্যালয় নির্মাণের বিষয়টি স্বীকার করে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিজান জানান, সম্প্রতি তারা সভা করে নেতাকর্মীদের নিজ উদ্যোগে এসব কার্যালয় ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। তাতে কাজ না হওয়ায় সিটি করপোরেশনকে অবৈধভাবে নির্মিত কার্যালয় উচ্ছেদ করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।সরকারি জমিতে দলীয় কার্যালয় থাকা ঠিক নয় বলে মন্তব্য করে মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, নেতাকর্মীদের শিগগিরই এসব কার্যালয় উচ্ছেদ করতে বলবেন। সিটি করপোরেশন যদি অবৈধভাবে নির্মিত সব দলের কার্যালয় উচ্ছেদ করে এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই বলেও জানান মঞ্জু।

পিবিএ/এমএস

আরও পড়ুন...