প্রিয়াংকা জাদুর আসল পরীক্ষা সোমবার

 

ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের ট্রাম্পকার্ড প্রিয়াংকা-জাদুর আসল পরীক্ষা আজ
প্রিয়াংকা জাদুর আসল পরীক্ষা আজ

পিবিএ,ডেস্ক: ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের ট্রাম্পকার্ড প্রিয়াংকা-জাদুর আসল পরীক্ষা সোমবার । পঞ্চম পর্বের লোকসভা ভোটে সোমবার ‘ছোট ইন্দিরা’র ক্যারিশমা দেখা যাবে। এ দফায় গতবার উত্তর প্রদেশের যে দুটি আসনে কংগ্রেস জয় পেয়েছিল, সেই আমেথি ও রায়বেরিলিতে ভোট হবে।

সবচেয়ে বেশি ভোট আসনের রাজ্য উত্তর প্রদেশের নির্বাচনী দায়িত্ব তুলে দেন বোন প্রিয়াংকার হাতে। উদ্দেশ্য মোদি-অমিত শাহদের ঘাঁটি থেকে কয়েকটি আসন ছিনিয়ে নেয়া। নিজেদের দুর্গ দখলে রাখার পাশাপাশি কতটুকু সফল হতে পারেন প্রিয়াংকা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

পঞ্চম পর্বে উত্তর প্রদেশের ১৪ আসন, রাজস্থানে ১২, মধ্যপ্রদেশে ৭, পশ্চিমবঙ্গে ৬, বিহারে ৫, ঝাড়খণ্ডে ৪ এবং জম্মু-কাশ্মীরের ২টি কেন্দ্রে ভোট হবে। ৬৭৪ জন প্রার্থীকে প্রায় ৮ কোটি ভোটার ভোট দেবেন। এ দফায় হিন্দিভাষী অধ্যুষিত এলাকায় ভোট হবে, যেখানে মূল লড়াই হতে চলেছে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে।

এরই ফাঁকে কিছু আসনে জয় ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন প্রিয়াংকা। দায়িত্ব পাওয়ার পর গ্রামের পর গ্রাম চষে বেড়িয়েছেন। দাদি ইন্দিরা গান্ধীর ভুবনভোলানো হাসিতে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা ছিল তার।

কংগ্রেসের গোড়া সমর্থকদের মতে, দলের সব স্তরের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে আমজনতার মধ্যে প্রিয়াংকার গ্রহণযোগ্যতা দাদি ইন্দিরা গান্ধীর মতোই। পরীক্ষিত না হলেও তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার ওপর অনেকেই আস্থা রাখেন।

কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি উত্তর প্রদেশের রায়বেরিলিতে ২০০৪ সাল থেকে টানা চারবারের এমপি সোনিয়া। শেষবার ২০১৪ সালে বিজেপি প্রার্থী অজয় আগারওয়ালকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ ভোটে হারিয়েছিলেন সোনিয়া। এবার তার প্রধান প্রতিপক্ষ সম্প্রতি কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেয়া দীনেশ প্রতাপ সিং।

সোনিয়ার শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধী, স্বামী ফিরোজ গান্ধীর এ আসনে ১৯৫৭ সাল থেকে ১৯ বার জিতেছে কংগ্রেস। মাত্র তিনবারই কংগ্রেসকে পরাজয়ের মুখ দেখতে হয়েছে। কংগ্রেসের আরেকটি ঘাঁটি আমেথিতে প্রার্থী হয়েছে দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী।

বিজেপির প্রার্থীও নেহাত কম হেভিওয়েট নয়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। ১৯৮০ সাল থেকেই এ কেন্দ্রটি দখলে রেখেছে কংগ্রেস। ২০১৪ সালেও রাহুলের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্মৃতি। প্রবল মোদি হাওয়ার মধ্যেও রাহুলের কাছে প্রায় ১ লাখ ভোটে হেরে যান। তবে এবারের লড়াইটা বেশ শক্ত হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।

উত্তর প্রদেশেরই লক্ষৌতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এবারও বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী পুনম সিনহা (শত্রুঘ্ন সিনহার স্ত্রী) এবং কংগ্রেসের প্রমোদ কৃষ্ণম। ১৯৯১ সাল থেকে কেন্দ্রটি বিজেপির দখলে। এ কেন্দ্রে টানা পাঁচবার জিতে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপেয়ি।

এখানে অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে রাজনাথ। এ ছাড়া উত্তর প্রদেশের গোন্ডা, ফাইজাবাদ, বারাবাঙ্কি ও ফতেহপুরে বিজেপি সহজ জয় পাবে বলে আভাস। তবে বাহরাইচ, মোহনলালগঞ্জ, সীতাপুর, কায়সারগঞ্জ, কাউসাম্ভি, বান্দা ও ধাউরাহরা আসনে মূল লড়াই হবে মহাজোট ও বিজেপির মধ্যে।

তিন দলের ভোট একত্রে হলে বিজেপিকে ধরাশায়ী করাটা সহজ হবে বলে মানছেন বিশ্লেষকরা। বাহরাইচে গতবার বিজেপির সাবিত্রি বাই ফুলে প্রায় ৯৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলেন সপার সাব্বির আহমেদকে। সেই এক লাখ পূরণে গতবারের বসপার ৯৭ হাজার ভোট যোগ হবে এবার। ফলে সাব্বির আহমেদের জয় নিশ্চিত। হাতে রয়েছে আরএলডির ভোট।

একইভাবে মোহনলালগঞ্জ, সীতাপুর, কায়সারগঞ্জ, কাউসাম্ভি, বান্দা ও ধাউরাহরাও সপা-বসপা-আরএলডি মহাজোট এগিয়ে থাকছে। তবে কংগ্রেস আলাদা প্রার্থী দেয়ায় ভোট কাটাকাটির একটা খেলা তো রয়েছে।

আসন ভাগাভাগি নিয়ে বিরোধের জেরে মহাজোটে আসেনি কংগ্রেস। তবে ভোটের পর জোট বন্ধনের সুযোগ রেখে আমেথি ও রায়বেরিলিতে কোনো প্রার্থী দেয়নি অখিলেশ-মায়াবতীর জোট। কংগ্রেসও সেই সুযোগটা বাঁচিয়ে রেখে মহাজোটের বিরুদ্ধে ৬ আসনে প্রার্থী দেয়নি।

এদিকে বিহারে জাতপাতই বড় নির্বাচনী ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদব, কুর্মি, অনগ্রসর, মুসলমান জাতির এ মিলনমেলায় সবাইকে প্রাধান্য দিচ্ছে দলগুলো। রাজ্যে হাজিপুর, সরন, মুজাফফারপুর, সীতামারহি ও মধুবানীতে এদিন ভোট হবে। এ পাঁচ রাজ্যই তিনটি বিজেপি ও দুটিতে তাদের শরিক লোক জনশক্তি পার্টি (আরজেডি) পায়।

এবারও জয়ে আশাবাদী তারা। আরজেডি নেতা শক্তি যাদব বলেন, ‘জাতপাতের সমীকরণ কষে জয়ের পথে রয়েছে এনডিএ জোট। জয়ের জন্য জাত অস্ত্রই এখানের আসল হাতিয়ার।’

বিজেপি মধ্যপ্রদেশ ও ঝাড়খণ্ডে দখলে থাকা আসন হারানোর সংশয়ে রয়েছে বলে আভাস মিলছে। শেষ মুহূর্তে তাই জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন মোদি-অমিত শাহরা। রোববার চান্দিগড়ে প্রচারণায় নামেন অমিত। ঝাড়খণ্ডের চার আসন- রাঁচি, কোদারমা, খুনতি ও হাজারীবাগে ভোট হবে।

রাঁচিতে এপ্রিলের প্রথমে বিজেপি ছাড়েন বিজ্ঞ রাজনীতিক রাম তাহাল চৌধুরী। দলের টিকিট এবার পেয়েছেন ব্যবসায়ী সঞ্জয় শেঠ। তার প্রতিপক্ষ সাবেক পর্যটক মন্ত্রী কংগ্রেসের সুবোধ কান্ত শাহী। বিজেপির নতুন মুখের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থীর লড়াই, বোঝাই যাচ্ছে কতটা টালমাটাল গেরুয়া শিবির।

কোদারমা আসনে কংগ্রেস, আরজেডি ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা মহাজোট গড়েছে বিজেপির বিরুদ্ধে। হাজারীবাগে বিজেপির টিকিটে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়ন্ত সিনহার প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের গোপাল সাহু এবং সিপিআই প্রার্থী ভুবনেশ্বর প্রসাদ মেহতা।

রাজস্থানের বিকানে বিজেপি ও কংগ্রেসের লড়াই হতে চলেছে। যা চলে আসছে ১৯৮০ সাল থেকে। এখানের বর্তমান সংসদ সদস্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল। এবার তার প্রতিদ্বন্দ্বী নিজের চাচাতো ভাই সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা কংগ্রেসের মদন গোপাল মেঘওয়াল।

ভৌগোলিকভাবে ভারতের সবচেয়ে বড় লোকসভা কেন্দ্র জম্মু-কাশ্মীরের লাদাখেও হবে ভোট। ২০১৪ সালে স্বতন্ত্র পার্থী গুলাম রাজাকে মাত্র ৩৬ ভোটে হারান বিজেপির থুপসান চেওয়াং। গত বছর বিজেপি ও সংসদ-উভয় জায়গা থেকেই চেওয়াং ইস্তফা দিলে বিপাকে পড়েন বিজেপি।

এবার ওই কেন্দ্রটিতে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে চলেছে গেরুয়া শিবির। চতুর্মুখী লড়াইয়ে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন জামইয়াং সেরিং নামগিল, কংগ্রেসের রিগজিন স্পালবার, স্বতন্ত্র দলের দুই প্রার্থী আসগার আলি কারবালাই ও সাজ্জাদ কারগিলি। এবার পিডিপি বা ন্যাশনাল কনফারেন্স-কেউই তাদের প্রার্থী দেয়নি, তারা সাজ্জাদকে বাইরে থেকে সমর্থন করছে।

পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, হুগলি, শ্রীরামপুর ও আরামবাগ- সাতটি আসনেও ভোট হবে। পাঁচটি আসনই মমতা ব্যানার্জির তৃণমূলের দখলে। এগুলোতে তৃণমূল, বিজেপি, কংগ্রেস ও বাম মিলিয়ে চতুর্মুখী লড়াই হবে।

পিবিএ/এইচটি

আরও পড়ুন...