পিবিএ ডেস্ক : আজ মঙ্গলবার (৭ মে) থেকে সারাদেশে সিয়াম বা সংযম সাধনার পবিত্র মাস – মাহে রমজান শুরু হয়েছে।সোমবার চাঁদ দেখা যাওয়ায় গতরাতই ছিল মাহে রমজানের প্রথম রাত। গতকাল রাতে তারাবির নামায ও শেষরাতে সেহরি খাওয়ার মধ্য দিয়ে পবিত্র রমজান মাস শুরু হলো।আজ সারাদিন সব ধরনের খাদ্য-পানীয় গ্রহণ এবং যৌনতা-অশ্লীলতা থেকে সব ধরনের অন্যায় ও পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখার মধ্য দিয়ে রোজা রাখবেন প্রাপ্তবয়স্ক সব ধর্মপ্রাণ প্রকৃত মুসলমান।সন্ধ্যার পর ইফতার গ্রহণের মাধ্যমে রোজা ভাঙবেন তারা।এরপর এশারের ফরজ নামাজের পর শুরু হবে তারাবীর দীর্ঘ নামায।এরপর সামান্য ঘুমের পর আবার শেষরাতে উঠে নফল (তাহাজ্জুদ) নামাজ ও শেহরি গ্রহনের মাধ্যমে আবার পরের দিনের রোজা শুরু।এভাবে চলবে দীর্ঘ এক মাসের আধ্যাত্মিক সাধনা।
মুসলমানরা এই মাসটিতে প্রতিদিন রোজা রাখার মাধ্যমে আত্মিকউন্নয়নের সাধনা করেন, যার নির্দেশনা এসেছে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে।পুরো রমজান মাস জুরে সারা বিশ্বের মুসলমানরা একযোগে স্রষ্টার নৈকট্য লাভে মগ্ন থাকেন।তাই প্রত্যেক মুসলিমের নিকট এই মাস অত্যন্ত পবিত্র মাস হিসেবে গণ্য হয়, তারা অত্যন্ত ভাব-গাম্ভির্যের মাধ্যমে মাসটি অতিবাহিত করেন।
সারা বিশ্বের মুসলমানরা এই পবিত্র মাসের মর্যাদা রক্ষার ব্যাপারে খুব সজাগ ও সচেতন থাকেন।
পৃথিবীর অনেক দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও রোজাদারদের সেবায় বহু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান আত্মনিয়োগ করেন।তারা মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের ইফতরির জন্য বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী সরবরাহ করেন।অনেকে আবার মসজিদের বাইরেও রাস্তার পাশে রোজাদারদের জন্য বিশুদ্ধ পানি, শরবত ও ইফতারি বিতরণ করে থাকেন।অনেক মুসলিম দেশে রোজার সময় ব্যবসায়িরা মুসল্লিদের কষ্ট লাঘবের জন্য দ্রব্যমূল্য কমিয়ে দেন।এই পবিত্র মাসটিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং তাঁর রহমত, বরকত ও ক্ষমা লাভের আশায় তারা এটি করে থাকেন।কিন্তু অত্যন্ত লজ্জার বিষয় হলো, আমাদের দেশে এ সময় দেখা যায় সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র দেখা যায়।একশ্রেণির ব্যবসায়ী অতি মুনাফার আশায় এ সময় দ্রব্যমূল্য ইচ্ছাকৃতভাবে বাড়িয়ে দেয়।
আমাদের মাসে এমন এক সময় মাহে রমজানের আগমন ঘটলো যখন নৈতিক অবক্ষয় ও অপরাধ প্রবণতা মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।নারীত্বের অসম্মান করা হচ্ছে এবং নিষ্পাপ শিশুরাও মানুষ নামের পশুদের লালসার হাত থেকেও রেহাই পাচ্ছে না।পুরুষদের মধ্যে বেকারত্ব বৃদ্ধি, বিয়েকে কঠিন করে অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও জেনা-ব্যাভিচারকে সহজ করে তোলাই এ অবস্থার জন্য দায়ী বলে সমাজ-বিজ্ঞানীরা মনে করেন।সর্বেোপরি, নৈতিক শিক্ষার অভাব এবং ভোগবাদি মানসিকতা বিস্তার লাভও এজন্য দায়ী বলে অনেক আলেমরা মনে করেন।
তবে, পবিত্র রমজান মাসে এ অবস্থার অনেকটা পরিবর্তন হবে বলে আশা করা যায়। হাদীসে এসেছে, প্রিয়নবী বলেছেন, যেসব যুবকদের বিয়ে করার সামর্থ নেই তারা যেন রোজা রাখে।কেননা, মুসলমানদেরক আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়, তাদের মধ্যে খোদাভীতি বা স্রষ্টার কাছে জবাবদিহীতার অনুভূতি জাগ্রত করে ।
রমযান রহমত (আল্লাহর অনুগ্রহ), মাগফেরাত (ক্ষমা) ও নাজাত (দোষখের আগুন থেকে মুক্তি)- এ তিন অংশে বিভক্ত। এ মাসে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, যৌনতা ও যে কোন ধরনের পাপ কাজ থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে রোজা পালন করেন মুসলমানরা।
এ মাসের শেষ অংশে রয়েছে হাজারো মাসের এবাদতের চেয়েও উত্তম লাইলাতুল কদরের রাত। ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, রমজান মাসে প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ পাক ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেন।
রমজান শেষেই আসবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর।
এদিকে রোববার পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে গতকাল সোমবার থেকে রমজান শুরু হয়েছে।
পবিত্র রমযান মাস উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বানীতে দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে রমজানের মোবারকবাদ জানান। তিনি রমজান মাসের পবিত্রতা রক্ষার পাশাপাশি জীবনের সর্বস্তরে পরিমিতিবোধ, ধৈর্য্য ও সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, রমজানের মহান আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সকল অকল্যাণকর কাজ পরিহার করতে হবে সবাইকে। একইসঙ্গে দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত মানুষের কষ্ট-যন্ত্রণা উপলব্ধি করতেও সবার প্রতি আহবান জানান তিনি।
পিবিএ/এএইচ