মুহাম্মদ আবুল হুসাইন
রমজান মাসের ইফতারিতে বেগুনি না হলে যেন চলেই না। তবে শুধু বেগুনিই নয়; ভাজি, তরকারী, ভর্তা – সব ধরনের আইটেমেই বেগুন হয়ে ওঠে অত্যন্ত সুস্বাদু খাবার। বেগুনের নাম বেগুন হলেও আসলে সব্জিটি গুনে ভরা, অত্যন্ত মজাদার ও পুষ্টিকর খাবার।এতে ক্যালরির পরিমাণ অত্যন্ত কম, সেই সাথে এটি ফাইবার বা আঁশ সমৃদ্ধ।অনন্য টেক্সচার এবং হালকা ফ্লেভারের কারণে বেগুন সারা বিশ্বেই অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে শুধু স্বাদ নয়, বেগুনের কয়েকটি বিষ্ময়কর স্বাস্থ্যগুণও রয়েছে।এখানে আমরা বেগুনের ৭টি স্বাস্থ্য-উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করবো।
১.বহু পুষ্টিতে সমৃদ্ধ
বেগুন একটি পুষ্টি-ঘন খাদ্য। এর মধ্যে ভাল পরিমাণেই রয়েছে ক্যালোরি, ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার। এক কাপ (৮২ গ্রাম) কাঁচা বেগুনের মধ্যে নিম্নলিখিত পুষ্টি রয়েছে:
● ক্যালরি: ২০
● কার্বস: ৫ গ্রাম
● ফাইবার: ৩ গ্রাম
● প্রোটিন: ১ গ্রাম
● ম্যাংগানিজ: ১০% RDI
● ফোলেট: ৫% RDI
● পটাসিয়াম: ৫% RDI
● ভিটামিন ক: ৪% RDI
● ভিটামিস সি: ৩% RDI
এছাড়াও বেগুনে স্বল্প পরিমাণে নিকোটিনিক অ্যাসিড (niacin), ম্যাগনেসিয়াম এবং কপার (তামা) সহ অন্যান্য পরিপোষক পদার্থ (nutrients) রয়েছে; যা দেহের বৃদ্ধি এবং জীবনের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায়।
সংক্ষিপ্ত: বেগুনে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ এবং স্বল্প পরিমাণে ক্যালরি রয়েছে।
২. উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ ছাড়াও বেগুনে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হচ্ছে এমন সব পদার্থ যা শরীরকে ফ্রী র্যাডিক্যালস (free radicals)নামক ক্ষতিকর পদার্থের আক্রমণ থেকে নিরাপদ রেখে শরীরকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে।ফ্রি র্যাডিক্যালস মানুষের কোষকে ধ্বংস করে দেয়।গবেষণা রিপোর্টে দেখা যায়, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অনেক ধরনের ক্রনিক রোগ যেমন, হৃদরোগ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
বেগুন বিশেষ করে অ্যানথোকিয়ানিন (anthocyanins) সমৃদ্ধ। এটি একটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য রঞ্জক যা বেগুনের স্পন্দনশীল উজ্জ্বল রংয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে।
৩. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়
কয়েকটি গবেষণায় বলা হয়েছে, বেগুনের এন্টিঅক্সিডেন্ট উপাদানের কারণে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে।এছাড়া এটি হার্টের সুরক্ষায় গঠনমুখি ভূমিকা পালন করতে পারে। একটি গবেষণায় পশুদেরকে কাঁচা এবং ভাজা উভয় প্রকার বেগুন এক মাস খাইয়ে দেখা গেছে, উভয় প্রকার ফিডই তাদের হার্টের ফাংশন ভাল করেছে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়েছে।বেগুন হার্ট ফাংশন উন্নত করতে এবং এলডিএল কলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৪. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে
বেগুন রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে। এর প্রাথমিক কারণ, এর মধ্যে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার রয়েছে। আর ফাইবার শরীরের মধ্যে শর্করার হজম এবং শোষণের হার হ্রাস করে রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। কারণ, এই ধীর শোষণ রক্তের শর্করার মাত্রা স্থির রাখে এবং হজম প্রতিরোধ করে।
অন্য গবেষণায় দেখা যায়, বেগুনে পলিফেনল বা প্রাকৃতিক উদ্ভিদ যৌগ সমূহ পাওয়া যায় যেগুলো শর্করা শোষণ কমায় এবং ইনসুলিন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে- এই উভয় অবস্থাই রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
গবেষণাগারে বেগুনের পেঁপেনিল-সমৃদ্ধ নির্যাস পরীক্ষা করে দেখা গেছে, এটি রক্তের শর্করা নিঃসরনে প্রভাব বিস্তার করে এমন নির্দিষ্ট এনজাইমের মাত্রা কমাতে পারে যার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ হ্রাস পেতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য সুপারিশকৃত বর্তমান খাদ্যতালিকার মধ্যে বেগুন মানানসই ভাবেই জায়গা করে নিয়েছে।
৫. ওজন কমাতে
বেগুনে উচ্চ মাত্রায় ফাইবার রয়েছে, আবার এতে কোলেস্টোরেলও অনেক কম। তাই এটি ওজন কমানোর পক্ষে একেবারে আদর্শ। প্রতি কাপ (৮২ গ্রাম) কাঁচা বেগুনে থাকে ৩ গ্রাম ফাইবার এবং ক্যালরির পরিমাণ থাকে মাত্র ২০। এ কারণে স্বাস্থ্যসম্মত রেসিপিগুলিতে উচ্চ-ক্যালোরি উপাদানগুলির প্রতিস্থাপন হিসাবে উচ্চ-ফাইবার, কম ক্যালোরি যুক্ত বেগুন ব্যবহার করা হয়।
৬. ক্যান্সার প্রতিরোধক
বেগুনে এমন কিছু পদার্থ রয়েছে যেগুলো ক্যান্সার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে। যেমন, এতে আছে সলাসোডাইযন রমনোসিল গ্লাইকোসাইড (solasodine rhamnosyl glycosides (SRG) যা ক্যান্সার কোষের মৃত্যু ঘটাতে এবং কয়েক ধরণের ক্যান্সারের পুনরাবৃত্তি হ্রাস করতেও সাহায্য করতে পারে। এটি স্কিন ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও বিশেষভাবে কার্যকরী বলে মনে করা হয়, যখন তা সরাসরি ত্বকে প্রয়োগ করা হয়।
প্রায় ২০০ গবেষণার এক রিভিউ বা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আন্ত্রিক, পেট, কোলোরক্টাল-কোলন ও রেক্টাম সম্পর্কিত, মূত্রস্থলী, গ্রীবাসংবন্ধীয় এবং স্তন -এর সুরক্ষায় এবং এসবের ক্যান্সার প্রতিরোধে বেগুনের মত ফল এবং সবজি অত্যন্ত সহায়ক।
৭. সহজ খাবার
বেগুন অত্যন্ত বিষ্ময়কর একটি ফল বা সবজি যা নানাভাবে এবং অত্যন্ত সহজে খাদ্য-তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এটি যেমন মাছ বা গোস্তের তরকারীতে ঝোল করে বা ঝোল ছাড়া রান্না করে খাওয়া যায়, তেমনি পোড়া বা শেকা দিয়ে ভর্তা করেও খাওয়া যায়। আবার তেলে ভেজে ভাজি করেও খাওয়া যায়। বেগুনকে যেভাবেই খাবারের প্লেটে উপস্থাপন করা হোক না কেন, সর্বাস্থাতেই এটি অত্যন্ত মজাদার খাবার। আর বেগুনের রেসিপি তৈরিও করা যায় খুব দ্রুত ও ঝটপট।তাই বেগুন খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলে আপনি সহজেই আপনার কার্ব এবং ক্যালরি গ্রহন কমাতে পারেন। সেই সাথে আপনার খাদ্য তালিকায় বাড়াতে পারেন ফাইবার বা আঁশ এবং পুষ্টির পরিমাণ।
পিবিএ/ এএইচ