পিবিএ,ঢাকা: ২০০৭ সালে কনস্টেবল হিসেবে পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার বাসিন্দা মাহফুজুর রহমান ।
বেশীরভাগ সময়ই পরিবারের সদস্যদের মারধর ও ঘরে ভাঙচুর চালাতেন। একসময় অতিষ্ঠ থানায় মামলা করেন মাহফুজুরের বাবা। আর তার বাবার দায়ের করা মামলাতেই গ্রেফতার হন
মাহফুজ। ওই মামলায় ২৮ দিন খুলনা জেলা কারাগারে ছিলেন। আর সেই সময় জেলখানাতে এক ইয়াবা ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয় হয় তার।
পরবর্তীতে ফৌজদারি অপরাধের জন্য ২০১৩ সালে চাকরিচ্যুত হন কনস্টেবল মাহফুজ। জেলখানায় পরিচয়সূত্রে ওই মাদক ব্যবসায়ীর হাত ধরে হয়ে ওঠেন ইয়াবা ব্যবসায়ী। সুবিধা পেতে কনস্টেবল হিসেবে বহিষ্কৃত মাহফুজ সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন। পুলিশের ভুয়া পোশাক ও পরিচয়পত্রের আড়ালে কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান পৌঁছে দিতেন খুলনা এলাকায়।
মঙ্গলবার (৭ মে) দিনগত রাতে রাজধানীর আরামবাগ এলাকা থেকে ১০ হাজার ১০০ পিস ইয়াবাসহ মাহফুজুর রহমানকে আটক করে র্যাব-২। এএসআই র্যাংকের ইউনিফর্ম পরিহিত মাহফুজের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ৩১ হাজার ৮শ টাকা।
বুধবার (৮ মে) রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ।
তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসা দেশ ট্রাভেলসের একটি বাসে তল্লাশি চালায় র্যাব-২। এসময় পুলিশের ইউনিফর্মে এএসআই র্যাংক ব্যাজ পরা এক যাত্রীকে বাসের বি-২ সিটে বসে থাকতে দেখে তার চাকরিস্থল ওআইডি কার্ড দেখতে চান র্যাব সদস্যরা। এসময় তিনি চট্টগ্রামে সাক্ষ্য দিতে গিয়েছিলেন এবং তার পোস্টিং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স বলে জানান।
মাহফুজুর রহমান নামে ওই ব্যক্তির গলায় ঝুলনো পরিচয়পত্রে কনস্টেবল পদ ও পরিচয়পত্রের সঙ্গে জন্ম তারিখ ও পুলিশের বিপি নম্বরে মিল না থাকায় তাকে তল্লাশি করবেন বলে জানান। এক পর্যায়ে মতিঝিল থানা পুলিশ সদস্যদের সামনে তল্লাশি করে তার ব্যাগ থেকে ১০ হাজার ১০০ পিস ইয়াবা ও নগদ ৩১ হাজার ৮শ টাকা উদ্ধার করা হয়।
পরবর্তীতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে কথিত এএসআই মাহফুজুর জানান, তিনি একজন বহিষ্কৃত পুলিশ সদস্য। একটি মামলায় ২৮ দিন জেল খাটেন এবং চাকরিচ্যুত হন। জেল থেকে বেরিয়ে ইয়াবা সেবনকারী থেকে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি।
এখন পর্যন্ত মোট ৬ বার কক্সবাজার থেকে ইয়াবার চালান নিয়ে খুলনা পৌঁছে দিয়েছেন জানিয়ে আশিক বিল্লাহ বলেন, সপ্তমবারের চালান পৌঁছানোর সময় তাকে আটক করা হলো। তিনি খুলনার ওই মাদক ব্যবসায়ীর কথা অনুযায়ী সিভিল পোশাকে কক্সবাজারের গিয়ে হোটেলে অবস্থান করতেন। সেখানে তার কাছে ইয়াবার চালান পৌঁছে দেওয়া হতো। তারপর পুলিশের পোশাক পরে সেসব ইয়াবা ঢাকা হয়ে খুলনা পৌঁছে দিতেন। প্রতিবার চালানের জন্য তাকে ২০-৫০ হাজার টাকা দেওয়া হতো।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সন্দেহের ঊর্ধ্বে থেকে ইয়াবার চালান পৌঁছে দিতে পুলিশ পরিচয় দিতেন মাহফুজুর। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন ও খুলনার ওই মাদক ব্যবসায়ীকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে বলেও জানান র্যাব-২ অধিনায়ক আশিক বিল্লাহ।
পিবিএ/এফএস