যাকারিয়া ইবনে ইউসুফ: উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। অধিভুক্ত সরকারি সাতটি কলেজ হল- ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। কিন্তু উচ্চশিক্ষার মান বৃদ্ধির যে লক্ষ্য নিয়ে সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল সেটি বর্তমানে ব্যাহত হচ্ছে। সেশনজট, সময়মতো পরীক্ষা, রুটিন প্রকাশ, ফলাফল না হওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কলেজগুলোর কয়েক লাখ শিক্ষার্থীর জীবন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাত কলেজের দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি ব্যর্থ ঢাবি প্রশাসন। যদিও বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাত কলেজের উদ্ভূত সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। বিশেষ পরীক্ষা নিয়ে দ্রুত সমস্যার সমাধান ও সাত দিনের মধ্যে একাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরির ঘোষণাও দিয়েছেন তিনি।
সিলেবাস আর পরীক্ষা নিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা
ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে পাঠদান চলছে অন্যদিকে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র করা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়মে। এতে করে ভালো প্রস্তুতি থাকলেও পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল পাচ্ছে না সাত কলেজের কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পরীক্ষা গ্রহণ আর ফলাফল দেয়া ছাড়া ঢাবি দায়িত্বই পালন করছে না। প্রতিবারই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ। ফলে পাঠদান আর পরীক্ষা গ্রহণ নিয়ে একটা হযবরল ব্যাপার দেখা যাচ্ছে।
ইডেন মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী লোপা আক্তার যুগান্তরকে বলেন, ক্লাস করায় আমাদের কলেজের শিক্ষকরা। কিন্তু খাতা দেখে ঢাবির শিক্ষকগণ! প্রশ্নপত্র নির্বাচন করে ঢাবির শিক্ষকগণ? তাহলে আমাদের ওই সাত কলেজের শিক্ষকরা কি যোগ্যতা ছাড়া। এতো বছর তারা কীভাবে খাতা দেখেছেন তাহলে? শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, পরীক্ষার খাতা যদি ঢাবির শিক্ষকরা কাটেন তাহলে শিক্ষার্থীদের সেই সিলেবাস এবং তাদের খাতা কাটার ধরন সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। কেন না তারা ঢাবির সিস্টেমের সঙ্গে পুরোপুরি পরিচিত নন। এজন্য প্রতি মাসে প্রত্যেকটি বিভাগে প্রতি কলেজে দু’দিন করে মোট ১৪ দিন ঢাবির শিক্ষকদের ক্লাস নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী বলেন, সাত কলেজের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কলেজের সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা থাকেন। এ পরীক্ষার ২০ শতাংশ খাতা মূল্যায়ন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা; আর ৮০ শতাংশ মূল্যায়ন করেন কলেজের শিক্ষকরা। অধিভুক্ত হওয়ার পর শিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সব কিছু স্বাভাবিক করতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। নিয়মিত পরীক্ষা ও ফল প্রকাশে নিরলসভাবে কাজ করছে প্রশাসন।
সময়মতো হচ্ছে না পরীক্ষা-ফলাফল
রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাবির অধিভুক্তির বয়স দু’বছরের বেশি হলেও এখনও গতি আসেনি একাডেমিক কার্যক্রমে। এক শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা শেষ করতে সময় লাগছে দেড় থেকে দু’বছর। ফল প্রকাশে সময় নেয়া হচ্ছে মাসের পর মাস। বিভাগওয়ারী ফল প্রকাশে একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের স্নাতক শেষ হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন সময়। ফল প্রকাশের পর সার্টিফিকেট পেতেও ভোগান্তিতে পড়ে শিক্ষার্থীরা। সমস্যা সমাধানে কলেজে গেলে বলা হয় ঢাবিতে যেতে। ঢাবিতে গেলে বলা হয়, কলেজ কর্তৃপক্ষ সার্টিফিকেট সরবরাহ করবে। এতে করে কলেজগুলোর শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ভোগান্তির শেষ নেই।
২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়েছে মাস সাতেক আগে। এখনও ওই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়নি। কবে হবে, সে প্রশ্নেরও উত্তরও কেউ দিতে পারছে না। অথচ সেশনজট দূরীকরণ ও শিক্ষার মানোন্নয়নের উদ্দেশ্যেই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করা হয়েছিল। এ সময়ের মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা অনেকটাই এগিয়ে গেছেন।
অধিভুক্ত হওয়া শিক্ষার্থীরা বলছে, রাজধানীর সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্তির দুই বছর পেরোলেও কোনো সুফল মেলেনি। বরং ভোগান্তি বেড়েছে। বছর শেষে চূড়ান্ত পরীক্ষা, ফল প্রকাশ কিংবা মানোন্নয়নের বিষয়ে কোথাও সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না। কোনো বিষয়ে জানতে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখিয়ে সেখানে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ মেলে। কিন্তু কোনো ফল আসছে না। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনে নেমেছে অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশ, গণহারে অকৃতকার্যের ঘটনায় খাতা পুনঃমূল্যায়ন, স্বতন্ত্র প্রশাসনিক ভবন, ঢাবি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেয়া ও সেশনজট দূরে ক্রাশ কর্মসূচি নেয়ার দাবিতে চলতি মাসেই নীলক্ষেত মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন স্থগিত করেছে শিক্ষার্থীরা।
ঢাবি প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা বলছেন, কোনো পরিকল্পনা ছাড়া হঠাৎ লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর দায়িত্বভার নিয়ে বেকায়দায় পড়ে ঢাবি প্রশাসন। শুরুতে শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রাপ্তিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। সব কিছু স্বাভাবিক করতে আরও কিছু দিন সময় লাগবে।
গণহারে ফেল করানোর অভিযোগ
ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের গণহারে ফেল করানোর অভিযোগ উঠেছে। সরকারি তিতুমীর কলেজের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মাদ আশিকুর রহমান জানান, তিতুমীর আর ইডেন কলেজের ২০১৪-১৫ সেশনের ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের মাস্টার্স ২০১৫ পরীক্ষায় প্রায় ৮০% স্টুডেন্টকে ফেল দেখান হয়েছে। সেশনজটের কবলে পড়ে ১ বছরের মাস্টার্স কোর্স প্রায় ৩ বছর হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘদিন পর প্রকাশিত রেজাল্টে প্রায় ৮০% শিক্ষার্থীকেই কোনো না কোনো সাবজেক্টে অকৃতকার্য দেখান হয়েছে। সাত কলেজের শিক্ষার্থী বনি আমিন জানিয়েছেন, ২০১৫/১৬ শিক্ষাবর্ষের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ইংরেজিতে সবাইকে গণহারে ফেল করানো হয়েছে। এম আর রহমান সরকার জানান, ২০১৭ সালের ২য় বর্ষ পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, গণহারে ফেল এবং নট প্রমোটেড। যা সরকারি বাঙলা কলেজে, ঢাকা কলেজের ইতিহাসে বিরল এক ঘটনা। আমরা রসায়ন বিভাগের ফলাফলে গণহারে ফেলের সব খাতার পুনঃমূল্যায়ন চাই।
বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী সোনিয়া খন্দকার জানান, ২০১৭ সালের ২য় বর্ষের গণিত বিভাগের রেজাল্ট পুনঃমূল্যায়ন চাই। এতো ভালো পরীক্ষা (মানোন্নয়ন) দিয়ে পদার্থবিজ্ঞান (নন মেজর) ফেল আসছে। এতো সময় নেই যে আবার পরীক্ষা দেব। ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী রেশমি ইসলাম জানান, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ইডেন কলেজের ইংরেজি বিভাগের ২৬০ জন পরীক্ষার্থীর সবাই ‘স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস’ বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছিল এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ‘Introduction to Political Theory’ বিষয়ে অকৃতকার্য হয়। অভিযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয় এটি তাদের টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে হয়েছে এবং ১টি বিষয়ে সমাধান করা হয়। এছাড়াও ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ২০১৭ সালের পরীক্ষা হয়েছিল ২০১৮ সালে এবং ফলাফল দেয়া হয়েছে ২০১৯ সালে। প্রায় ১ বছর পর ফলাফল প্রদান করা হয় এবং হঠাৎ করে ইম্প্রুভমেন্ট এর জন্য ১৫ দিন আগে রুটিন দেয়া হয়। এছাড়া প্রশ্নপত্রের প্যাটার্ন পরিবর্তন করা হয় পূর্বনির্দেশনা ছাড়াই।
শিক্ষার্থীদের যত অভিযোগ
ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের নানা অভিযোগ জানতে ‘ঢাবির অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থী-Dhaka University Affiliated Colleges’ নামের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করা হয়েছিল। সেখানে অনেকেই তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। ইডেন মহিলা কলেজের বিবিএস ১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সুমাইয়া নাজিম জানান, ২০১৮ সালের অক্টোবরে পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তারপর আর কোনো খোঁজখবর নেই। কত বছরে লেখাপড়া শেষ করব কিছু বুঝছি না। ঢাকা কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম জানান, অনার্স তৃতীয় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার কোনো খবর নেই। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫-১৬ এর ছাত্ররা ফাইনাল ইয়ারের ক্লাস করতেছে। সরকারি তিতুমীর কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের ১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম বলেন, সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কলেজ শিক্ষকদের কম্বিনেশন নেই। ক্লাস নেয় কলেজের শিক্ষক আর প্রশ্ন এবং খাতা মূল্যায়ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এছাড়া পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর রেজাল্ট প্রকাশ করতে দীর্ঘ সময় লাগে। কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী কাওছার ইশতিয়াক হিমু জানান, সম্মান ২০১৪-১৫ তৃতীয় বর্ষ লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর। এখন পর্যন্ত ২টি ডিপার্টমেন্ট ছাড়া কেউই রেজাল্ট পায়নি। আরও ৫ মাসেও পাব কিনা নিশ্চয়তা নেই।
তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী তাসমিয়া তুলি জানান, সব চেয়ে বড় আর আজব সমস্যা হচ্ছে মাস্টার্স ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ফরম পূরণ শুরু হয়েছে অথচ আমাদের ২০১৪-১৫ প্রাণীবিদ্যার রেজাল্টই দেয় নাই এখনও। এটাও সম্ভব! ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হান্নান জানান, অনার্স ২০১৫-২০১৬ সেশনের ৯ মাস পার হলেও এখনও ২য় বর্ষের সব ডিপার্টমেন্টের রেজাল্ট দিল না। আমাদের সঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা ৩য় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছে ফেব্রুয়ারিতে। ওরা ২ মাস পরে ৩য় বর্ষের রেজাল্ট পাবে। একই কলেজের শিক্ষার্থী ইরফান জানান, ২০১৬-১৭ সেশনের ২য় বর্ষের পরীক্ষার ফর্ম ফিলাপের নোটিশ দেয় চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে, শেষ ৩০ এপ্রিল। এই মাসের ১৭ তারিখ ২০১৫-১৬ সেশনের ২য় বর্ষের রসায়ন বিভাগের রেজাল্ট প্রকাশ করে। যেখানে ঢাকা কলেজের ৪৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৪০ জনকে নট প্রোমোটেড করা হয়, ১২ জনকে সব বিষয়ে ফেল দেখান হয়েছে, ২৮ জনের ৩টি, ৪টি অথবা ৫টি বিষয়ে ফেল দেখান হয়েছে। বাকি ৮ জন প্রোমোটেড হয়েছে তাদের প্রত্যেকেই ১টি, ২টি বা ৩টি বিষয়ে ফেল দেখান হয়েছে। এছাড়া বাংলা কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজের রসায়ন বিভাগের একই অবস্থা ৮০% নট প্রোমোটেড। ২৩-২৪ তারিখ আন্দোলনের পর ২৫ তারিখ রাষ্ট্রবিজ্ঞান, গণিতসহ মোট ৪টি বিভাগের রেজাল্ট প্রকাশ করে যেখানে গণহারে নট প্রোমোটেডের ব্যাপারটি ঘটেনি। এদিকে যাদের নট প্রোমোটেড করা হয়েছে, তাদের খাতা পুনঃমূল্যায়নের আবেদন করার সময় না দিয়ে বাধ্য করা হচ্ছে পুনরায় ২য় বর্ষের ফরম ফিলআপ করার। ২০১৬-১৭ সেশনের ২য় বর্ষের পরীক্ষার তারিখ দেয়া হয়েছে ১৯-০৫-১৯ তারিখে। এখন ৯ মাস পর ২০১৫-১৬ সেশনের রেজাল্ট দিয়ে গণহারে নট প্রোমোটেড করে ১ মাসেরও কম সময়ে তারা কিভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করবে? শেষ ৯ মাস আমরা ৩য় বর্ষের পড়াশোনা করি ও ৩য় বর্ষের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেই। পাবলিক এবং জাতীয়তে অধ্যয়নরত বন্ধু-বান্ধব যখন তৃতীয় বর্ষে, তখন আমাদের কপালে ২য় বর্ষের পরিক্ষার রুটিন পর্যন্ত জুটতেছে না, তার ওপর গণহারে ফেল। ‘বেলা তুমি বিয়ে করে ফেল আমি সেশনজটে আটকে গেছি’ ব্যানার নিয়ে আলোচনায় আসা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সুজয় দাস যুগান্তরকে বলেন, অনার্স ১৬-১৭ ব্যাচ থেকেই অধিভুক্ত হয় সাত কলেজ। প্রথম ব্যাচ ২০১৬ এর নভেম্বর মাসে ভর্তি হয়েও আমাদের পরীক্ষা শুরু হয় ২০১৮ এর ফেব্রুয়ারি মাসে। ব্যবহারিক পরীক্ষাসহ সব শেষ হতে হতে এপ্রিল মাস চলে যায়। এরপর রেজাল্ট আসে ২০১৮ এর নভেম্বর এ। কোনো কোনো বিষয়ে গণহারে ফেল! আবার অনেকে প্রমোশনও পায় নাই ২য় বর্ষে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে ২য় বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে এখন ৩য় বর্ষে। সেখানে আমরা এখনও ২য় বর্ষের পরীক্ষা দিতে পারিনি।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়েও পিছিয়ে
শিক্ষার মান উন্নয়নের যেই লক্ষ্যে ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে ঢাবির অধিভুক্ত করা হয়েছিল সেই লক্ষ্য চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। একই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হলেও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষার্থীরা বর্তমানে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন সাত কলেজের ছাত্রছাত্রী। ঢাকা কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. জাহিদুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, আমাদের তৃতীয় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষা নেয়ার কোনো খবর নেই। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্ররা ফাইনাল ইয়ারের ক্লাস করছে। ইডেন মহিলা কলেজের মার্কেটিং বিভাগের অনার্স ১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তানজিলা বলেন, আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে ২০১৮ সালের ৫ ডিসেম্বর। কিন্তু এখনও রেজাল্টের দেখা নেই, কবে পাব জানি না। কলেজটির আরেকজন শিক্ষার্থী ইশিতা ইশি জানান, তাদের এই পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০ মাস পর।
কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থী আবু ফাহাদ বলেন, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে সাত কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। এখনও অনার্সই শেষ করতে পারিনি। ১৫ মাসের ব্যবধানে চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছি। অন্যদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের অনার্স শেষ। মাস্টার্সও প্রায় শেষের দিকে।
২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ঢাবি অধিভুক্ত ইডেন মহিলা কলেজে ইতিহাস ভর্তি হন খাদিজা বিন ইউসুফ ইভা। তার প্রথমবর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে। পরীক্ষার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়নি। কবে ফলপ্রকাশ হবে সেটিও জানেন না। অন্যদিকে একই শিক্ষাবর্ষে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পঞ্চগড় মহিলা কলেজে দর্শন বিভাগে ভর্তি হন সানজারাহ বিনতে আলবী। তিনি যুগান্তরকে বলেন, তার প্রথম বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৮ সালের আগষ্ট-সেপ্টেম্বরে আর ফল প্রকাশ হয়েছে চলতি বছরের শুরুতে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় সাত কলেজের পিছিয়ে পড়ার চিত্র আগের শিক্ষাবর্ষগুলোতে আরও ভয়াবহ।