পিবিএ,আখাউড়া (ব্রাহ্মণবাড়িয়া): ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চলতি মৌসুমের ইরি-বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষকরা এখন ধান কাটা ও মাড়াই’এ ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে শ্রম,সময় ও অর্থনেতিক সাশ্রয় হওয়ায় চলতি ইরি-বোরো ধান মাড়াই কাজে আধুনিক পদ্ধতির মেশিন ব্যবহার করছে স্থানীয় কৃষকরা। ইতিমধ্যে উপজেলার সর্বত্র ধান মাড়াই আধুনিক মেশিন এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ।
স্থানীয় কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে অতি সহজে ধান মাড়াই করে শুকিয়ে গোলায় তুলছেন। ইরি-বোরো ধান কাটা পুরোদমে শুরু হওয়ায় ধান মাড়াই মেশিন মালিকদের যেন দম ফেলার সময় নেই। তারা সকাল থেকে রাত পযর্ন্ত ধান মাড়াই করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় পৌর শহরের তারাগন,দেবগ্রাম, খরমপুর, দূর্গাপুরসহ উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ, ধরখার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় স্থানীয় কৃষকরা ধান মাড়াই আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে ধান মাড়াই করছেন। বর্তমানে এলাকায় ধান মাড়াই মেশিনের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক সময় কৃষকরা ইরি-বোরো ও রোপা-আমন পাকা ধান জমি থেকে কেটে এনে বাড়িতে তোলা হতো। তারপর ধান মাড়াই করতে গরু দিয়ে ধান মাড়াই করা হতো। আবার কেউ কেউ পিড়ি, ড্রাম বা গাছের গুলে পিটিয়ে ধান মাড়াই করতো। এসব ছাড়া ধান মাড়াই কল্পনা করা যেত না। এরপর ধান মাড়াই কাজে এলো পা দিয়ে ব্যবহৃত মেশিন। দুজনে পা চাপাতো আর কয়েকজনে ধান আনার কাজে সাহায্য করতো।
পরবর্তীতে কৃষকদের কাছে এলো শ্যালোমেশিনের মাধ্যমে ধান মাড়াই। সময়ের পরিবর্তে দিন দিন মানুষ আধুনিকতার ছোয়ার মাধ্যমে যন্ত্র চালিতের দিকে এগিয়ে যায়। এখন আর গরু, পিড়ি, ড্রাম বা গাছের গুল পা চালিত মেশিন আর চোখে পড়ছে না। এখন কৃষকরা ধান মাড়াই কাজে ব্যবহার করছেন হাইভেস্টার অটো মেশিন। যা বোমা মেশিন নামে এলাকায় পরিচিতি ।
হাইভেস্টার অটো মেশিনে ৩-৪ জন লোক কাজ করে। দুজন মেশিনে আর দুজন ধানের আঁটি মাড়াই মেশিনে দিয়ে থাকে। উপর দিয়ে অনেক দুরে পড়ে যায় খড়, আর নিচে ধান মাড়াই হয়ে ফ্যানে বাতাস দিয়ে আবর্জনা পরিস্কার হয়ে ধান বস্তায় তোলা হয়। সময় শ্রম ও অর্থনৈতিক সাশ্রয়ে গ্রাম গঞ্জে পাড়া মহল্লায় সর্বত্র স্থানীয় কৃষকরা আধুনিক পদ্ধতি ধান মাড়াই মেশিনের মাধ্যমে ধান মাড়াই করছেন।
প্রতিবিঘা জমি ধান মাড়াই করতে মেশিন মালিককে দিতে হচ্ছে ৭শ টাকা। আধুনিক মেশিনের ব্যাপক চাহিদা থাকায় আগ থেকেই মেশিন মালিকদের সাথে যোগাযোগ করতে হয় বলে স্থানীয় কৃষকরা জানায়। কৃষক মো. আলম খাঁ বলেন, হাইভেস্টার অটো মেশিন ছাড়া অন্য মেশিন দিয়ে ১ বিঘা ধান মাড়াই করতে ২ঘন্টা সময় লেগে যায়।
তাছাড়া ধান জমানো,খড় আবর্জনা পরিস্কার করতে শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। এতে অনেক সময় ব্যয় হয়। কিন্তু আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে প্রতিবিঘা জমি ১৫-২০ মিনিটেই ধান মাড়াই কাজ শেষ হয়। এতে নিজেদের বা কোন শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। মো. সবুজ মিয়া বলেন, এক দিকে শ্রমিক সংকট, অন্য দিকে ধান মাড়ায়ে অতিরিক্ত খরচ হয়। তাই দ্রুততার সাথে আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে ধান মাড়াই করাতে পারায় তিনি খুবই খুশি বলে জানায়।
কৃষক খোরশেদ মিয়া বলেন , এমৌসুমে ৮ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো ধান আবাদ করা হয়। ধান কাটা শুরু হয়েছে। সময় কম লাগা ও পরিশ্রম না থাকায় আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে ধান মাড়াই কাজ করবে বলে জানায়। মেশিন মালিক মো. শাহআলম জানায়, এ মৌসুমে ধান মাড়াই মেশিনের ভাল চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন ১৫-২০ বিঘা জমির ধান মাড়াই করা যায়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্ত মো: মো.একরাম হোসেন পিবিএকে বলেন, আবহাওয়া অনুকুল ও পরিচর্যার কারনে চলতি মৌসুমে উপজেলায় ইরি- বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। পৌর শহরসহ উপজেলার সর্বত্রই পুরুদমে ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষি কাজে শ্রম সময় ও অর্থনৈতিক সাশ্রয় করতে স্থানীয় কৃষকরা আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার করছেন বলে জানায়।
পিবিএ/কেএমআই/আরআই