রোহিঙ্গা আতঙ্কে খুলনার সাধারণ মানুষ

পিবিএ,খুলনা: খুলনায় গত কয়েকদিন ধরে সাধারণ মানুষের মনে রোহিঙ্গা আতঙ্ক বিরাজ করছে। এলাকায় রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে এবং তারা বাচ্চাদের ধরে নিয়ে যাবে এমন আতঙ্কে গ্রামে গ্রামে পাহারা বসিয়েছে মানুষ। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।

এলাকায় কোনো অপরিচিত নারী বা পুরুষ দেখলেই মানুষ সন্দেহ করছে। বিভিন্ন প্রশ্নে জর্জরিত করা হচ্ছে তাকে। আবার বেশি সন্দেহ হলে ধরে পুলিশে সোপর্দ করা হচ্ছে। কোন কোন এলাকায় মারধরের ঘটনাও ঘটছে। সন্দেহের বশে মানসীক প্রতিবন্ধীরাও মারপিটের শিকার হচ্ছে।
কিছুদিন আগে ডুমুরিয়া উপজেলায় ‘বোরকা পার্টি’ আতঙ্ক দেখা দেয়। এরপর থেকে এ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে জেলার অন্যন্য উপজেলায়। বর্তমানে পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় এমন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে এলাকাবাসির। অনেকেই ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সতর্ক বার্তা প্রচার করছেন।

রুহুল আমীন নামে এক ব্যাক্তি তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, বোরকা পার্টি সন্দেহে ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বাজারে চার যুবককে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিয়েছে এলাকাবাসি।
মনিরুজ্জামান মনি নামে এক ব্যাক্তি তার নিজের ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘কয়রা উপজেলাবাসীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে কয়রা সদর ইউনিয়নের পুকুরপাড় গ্রামে একটু আগে ৫ সদস্যে একটি রোহিঙ্গা দল (তাদের মধ্যে একজন মহিলা ৪ জন পুরুষ) এলাকায় ঢুকে একটি ছেলেকে অপহরণ করার চেষ্টা করলে এলাকাবাসি তাদের ধাওয়া দিয়ে এক রোহিঙ্গা মহিলাকে আটক করেছে বাকি চার জন পুরুষ পালিয়ে গেছে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘আমি এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলছি আপনারা আপনাদের বচ্চাদের দেখভাল করে রাখবেন এবং অপরিচিত কাউকে দেখলে থানায় খবর দেবেন।’

অরবিন্দু মন্ডল নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সারাদেশে রোহিঙ্গা আতঙ্কে জর্জরিত। গত ৯ মে সন্ধ্যায় কয়রার চাঁদআলী ব্রীজ, আমাদী বাজার, চন্ডীপুর মোড়, সুড়–ইখালি বাজার ও বাশখালি থেকে রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে। এছাড়া গতকাল সকালে চান্নিরচক গ্রামের দুটি ছেলে প্রাইভেট পড়তে যেয়ে আর ফিরে আসেনি। সকলে সতর্ক থাকুন, বাচ্চাদের চোখে চোখে রাখুন।’
খুলনার ডুমুরিয়া, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার বিভিন্ন শেণি পেশার মানুষের সাথে কথা হলে অনেকেই রোহিঙ্গা আতঙ্কের কথা জানিয়েছেন। তাদের কেউ কেউ বলেছেন, রেহিঙ্গারা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে মানুষকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে, অনেক সময় অজ্ঞান করে টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গাদেরকে ভয়ংকর সন্ত্রাসী বলেও মনে করেন তারা।
বিকাশ মন্ডল নামে একজন স্কুল শিক্ষক বলেছেন, এলাকায় ইদানিং অপরিচিত মানুষের ঘোরাঘুরি বেশি দেখা যাচ্ছে। ওই অপরিচিত মানুষেরা রোহিঙ্গা হতে পারে বলে স্থানীয় মানুষ মনে করছেন। যে কারণে আতঙ্কিত মানুষ পাড়ায় মহল্লায় পাহারা বসিয়েছেন।
খুলনার কয়রা থানার ওসি তারক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গত কয়েকদিন ধরে এ গুজবটি ছড়িয়ে পড়েছে। কোথাও বাচ্চাদের চুরি করে নিয়ে গেছে, এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। থানায়ও কেউ এখনো অভিযোগ করেনি। তবে এলাকাবাসী কিছু মানসিক ভারসাম্যহীন লোককে রোহিঙ্গা ভেবে মারধর করছে। তিনি আরও বলেন, কিছু মানুষ ফেসবুকে গুজব ছড়াচ্ছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর চলছে।

পাইকগাছা থানার ওসি এমদাদুল হক বলেন, আতঙ্ক ছড়ানোর পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন এলাকা থেকে ফোন করে বোরকা পরা মানুষ ঘোরাঘুরি করছে বলে জানাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় পুলিশ গিয়ে কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না। তিনিও বিষয়টিকে গুজব বলছেন।

খুলনার পুলিশ সুপার এস,এম শফিউল্যাহ জানিয়েছেন, কোনো একটা সংঘবদ্ধ চক্র মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়ার চেষ্টা চলছে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসীকে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

পিবিএ/এইচআর/হক

আরও পড়ুন...