ইসলামি সংস্কৃতি: তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ

ফকির আব্দুল্লাহ আল ইসলাম

ইসলাম আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ আনুগত্য ও আত্মসমর্পণ, সন্ধি, শান্তি, নিরাপত্তা, সুস্থতা, যথার্থতা, দোষত্রুটি ও বিপদমুক্ত ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে রহস্যময় এ জগতের কেবলমাত্র খালিক বা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করে তাঁর কাছে পূর্ণমাত্রায় আত্মসমর্পণ করা। আর যিনি এ কাজগুলো করেন তিনি হলেন মুসলিম বা আত্মসমর্পণকারী। ইসলামই হচ্ছে মানবজাতির জন্য একমাত্র পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এবং এহলোক ও পরলোকের একমাত্র মুক্তির দিশা। সৃষ্টিজগতের অদ্বিতীয় ¯্রষ্টা আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা হিসেবে সৃষ্টি করেছেন ও মর্যাদা দিয়েছেন। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাঁর সুস্পষ্ট চির উন্নত বিধান থাকার পরেও যাঁরা তাঁর বিধান লঙ্ঘন করে চরম সীমা অতিক্রম করে চির অন্ধকারে ডুবে গিয়েছে, তাদেরকে আল্লাহতায়ালা আবার সৃষ্টির অধম হিসেবে উল্লেখ করেছেন! এবার আসি কৃষ্টির আলোচনায়: কৃষ্টি, সংস্কৃতি মূল সংস্কৃত ভাষা থেকে বাংলায় এসেছে। ইংরেজিতে কৃষ্টির প্রতিশব্দ কালচার, আরবিতে সাকাফাহ্ তাহজিব, উর্দূতে তামাদ্দুন। সংস্কৃতি শব্দের অর্থ সংস্কার, শুদ্ধিকরণ, অনুশীলনে অর্জিত জ্ঞান-বুদ্ধির উৎকর্ষ ইত্যাদি। সামাজিক নৃবিজ্ঞানীদের মতে মানব সৃষ্ট সব কিছুই সংস্কৃতি অর্থাৎ মানব সৃষ্ট মার্জিত-সজ্জিত- উন্নত জীবনবোধ ও জীবনাচারকে সংস্কৃতি বলা হয়। সংস্কৃতির অর্থগত দিক থেকে কুসংস্কার, ভ্রান্ত ইত্যাদি মুক্ত, স্বচ্ছ জীবনধারাকেই বোঝানো হয়ে থাকে। যেমন চরিত্র বলতে সুচরিত্রের সমষ্টিকেই বোঝানো হয়ে থাকে।

সামাজিক নৃবিজ্ঞানীরা সংস্কৃতিকে প্রধানত দু’টি উপকরণে বিভক্ত করেছেন যথা- বস্তুগত উপকরণ – উৎপাদন কৌশল, হাতিয়ার বা যন্ত্রকে সংস্কৃতির অন্তর্র্ভুক্ত করা এবং অবস্তুগত উপকরণ মানব সৃষ্ট কাব্য, সঙ্গীত, শিল্পকলা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ইত্যাদি।

ব্যাপক অর্থে, মানবের ভাবধারা, বিশ্বাস, নীতিবোধ, আইন, ভাষা এবং মানুষের ব্যবহৃত হাতিয়ার বা যন্ত্রপাতি এমন কি বেঁচে থাকার জন্য মানুষ যে সকল কৌশল অবলম্বন করে সে সব-কিছুর সামষ্টিক রূপই হল সংস্কৃতি। এখন তাহলে ইসলামে কৃষ্টির বিধান পরিষ্কার হওয়া দরকার। সংস্কৃতিকর্মীদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা সূরা আশ্ শোয়ারায় স্পষ্ট বিধান নাজিল করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আশরাফুল মাখলুকাত সংস্কৃতিকর্মীদের মাত্র চারটি শর্ত দিয়েছেন সংস্কৃতি জীবন পরিচালনা করতে।প্রথমে- আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে বলেছেন, তারপর সৎকর্ম করা, আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা ও নিপীড়িত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করা।

ইসলামে কৃষ্টির মূলভিত্তি তাওহিদ, রিসালাতের সমন্বয় করে মানবজাতি এহকাল ও পরকালীন মুক্তি- সুখ- সমৃদ্ধি – প্রগতির দিকে অগ্রসর হোক এটিই ইসলামের বিধান। স্রষ্টাপ্রদত্ত নিয়ম-কানুন বহির্ভূত শুধু মানব কল্পনা কিরূপ হতে পারে? তা এরূপ হতে পারে-মাও সেতুং (যদিও তিনি মানব মুক্তির জন্য কাজ করেছেন) গণচিনের ক্ষততায় থাকাকালীন নস্যাৎ করেন চড়ুই, তাঁর ধারণা ছিল চড়ুই পাখি যেহারে খাদ্য শষ্য খায় তাতে টনকে টন খাবার তাঁরা গায়েব করে ফেলে।

তাই তাদের নিধন করার ব্যবস্থা করা হল! এভাবে চড়ুই শূন্য রাজ্য হওয়ার পর চিনের উৎপাদনে সংকট দেখা দিল! কারণ কি? কারণ হল চড়ুই পাখি ক্ষেতের পোঁকা-মাকড় খেয়ে শষ্য দানার বৃদ্ধি সাধন করে। অবশেষে তাঁর ভুল বুঝতে পেরে বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) থেকে চড়ুই পাখি আমদানি করে সৃষ্টির ধারা অব্যাহত রাখার ব্যবস্থা করলেন। ভারত খুশিমতো নদীতে বাঁধ দেয় এর ফলওতো ভালো হয়! এখন কথা হল মুসলিমরা কি সংস্কৃতিকে সঠিকভাবে লালন-পালন করতে পারছে বা করছে? ইসলাম একক মুসলিমদের তালুকদারী নয়, ইসলাম গোটা সৃষ্টি জগতের একমাত্র চির শান্তি ও মুক্তির পথ! ইসলামের ভাষায় প্রতিটি শিশুই ইসলামের ওপর জন্মগ্রহণ করেন। এ থেকে স্পষ্ট যে জন্মগতভাবে সবাই ইসলামের যাত্রী তারপর যাঁর যাঁর বিবেকের-ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয় ওপরওয়ালা! কথাটা বলার কারণ এই যে আমাদের উপ-মহাদেশের অধিকাংশ ইসলামি বোদ্ধা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো কথা বলে থাকেন! ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই তাদের কাছে উপেক্ষিত থাকে! তার মধ্যে সংস্কৃতি-রাজনীতি-অর্থনীতি- অন্যতম এগুলোর যে ইসলামি নিয়ম-নীতি আছে তা তারা আমলেই আনতে নারাজ! এটি তাদের মানসে সংকট, ইসলামের নয়! আর ইসলামের দৃষ্টিতে তাঁরা পূর্ণ মুসলিম নয়! এমন কি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মোটেও মুসলিম নয়! সর্বকালের, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহম্মদ (সা:)কে জ্বিন ও ইনসানের চির মুক্তির দূত হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছিল আরব ভূখন্ডে। কারণ আরব হল পৃথিবীর মধ্যবর্তী স্থান। এখান থেকে পৃথিবীর সব প্রান্তে কালেমার দাওয়াত পৌঁছানো সহজ ছিল দ্বিতীয় কারণ আরবে তখন একটি উন্নত নগর ব্যবস্থা ছিল, বর্তমানের বাঘা বাঘা অধিকাংশ দেশে তখনো সভ্যতার ছোঁয়া পায় নি! তৃতীয় কারণ রাসূল (সা:)কে যেহেতু পাঠানো হয়েছে মানব মুক্তির জন্য সেহেতু পৃথিবীর যে প্রান্তে মানবতা সবচেয়ে বেশি বিপন্ন, সে প্রান্তে তাকে প্রেরণ করাই ছিল বেশি যুক্তিসঙ্গত।

তাই আরবভূমিকে সোনার মদিনা বলে পূজা করার কোনো কারন নেই! রাসূল (সা:) তাই স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন আরবের ওপর অনারবের কোনো প্রাধান্য নেই, অনারবের ওপর আরবের কোনো প্রাধান্য নেই, ধলার ওপর কালোর কোনো প্রাধান্য নেই, কালোর ওপর ধলার কোনো প্রাধান্য নেই, এই হল ইসলাম! মরুভূমিতে জন্মগ্রহণ করেও পানিতে সাঁতার কাটতে পছন্দ করতেন বিশ্ব নবি! মরুভূমির মাঝে থেকেও সবুজ তাঁর চির প্রিয় রঙ ছিল! এর কারণ কি? এর কারণ হল আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি হল অক্সিজেন, অক্সিজেনের উৎস গাছপালা আর গাছপালার রঙ সবুজ! তিনি চেয়েছিলেন পৃথিবী সবুজ প্রকৃতিতে ভরে উঠুক, পৃথিবীর সবাই সবুজকে ভালবাসুক, তাহলে মানব জাতি আদর্শগত ভাবে ঠিক থাকতে পারবেন! ইসলামে গাছ লাগানো সদকায়ে জারিয়া, এইতো ইসলাম! রাসূল (সা:) পুরুষের জন্য তিনি শুধু লাল ও হলুদ রঙের সমষ্টিযুক্ত পোশাক ব্যবহারে নিষেধ করেছেন। এর কারণ কি? এর কারণ হল লাল রক্তের রঙ লাল রঙের পোশাকে পুরুষের আসক্তি হলে পুরুষের মধ্যে খুনি হওয়ার আশঙ্কা থাকে! দ্বিতীয়ত লাল ও হলুদ রঙের পোশাক নারীদের আকৃষ্ট করে, তাই নারীদের নিরাপত্তার জন্যও এটি করা হয়েছে! রাসূল (সা:) এর পূর্বে আরবে সবাই গোঁফ-দাড়ি সমভাবে রাখতেন। রাসূল (সা:) বললেন, গোঁফটাকে ছোট করতে, দাড়ি যেমন আছে তেমন থাক। আবার তিনি নিজ হাতে এক সাহাবীর অতিরিক্ত লম্বা দাড়ি কেটে ছোট করে দিলেন। এবং তিনি গোঁফ দাড়ি চুল সৌন্দর্য সহকারে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

মরু এলাকায় অত্যাধিক রোদ ও বালুর প্রকট রোধ করার জন্য টুপি, পাগড়ি ব্যবহার করতেন, এটি আরবের নিজস্ব সংস্কৃতি। তাহলে সালাতের সময় কেন পাগড়ি ব্যবহার করতেন? সালাতের সময় যদি শত্রুপক্ষ আক্রমণ করে তাহলে মাথাটা যেন অনেকাংশে রক্ষা পায় সেজন্য পাগড়ি ব্যবহার করা হত। জোব্বা রোদ বালু থেকে রক্ষার জন্য আদিকাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত কাফের মুনাফিক ঈমানদার আরবের সকলে ব্যবহার করে। আগেই বলেছি এটি আসলে আরবের নিজস্ব ঐতিহ্য, জাতীয় পোশাক। পোশাক পরিচ্ছদ ভৌগোলিক পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত। শীত প্রধান অঞ্চলের মানুষ মোটা কাপড় বা গরম পশমী কাপড় ব্যবহার করবে এটাই স্বাভাবিক। গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের মানুষ হালকা সুতির কাপড় ব্যবহার করে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের মানুষ ভিন্ন ধরণের পোশাক পরে থাকে এটিও স্বাভাবিক কথা। তবে কেউ চাইলে তার মতো যেকোনো পোশাক পরতে পারে এটি তার মানবাধিকার (শালীনতা বজায় রেখে) সুন্নাত হিসাবেও রাসূল (সা:) পরিহিত পোশাক পরিধান করা যায় ভালোবেসে। তবে তাই বলে বিশ্বের সব প্রান্তের সব মানুষের জন্য তা বাধ্যতামূলক ফরজে আইন তূল্য ব্যাখ্যা দেওয়ার এখতিয়ার ইসলাম কাউকেই দেয় নি। আবার রাসূল (সা:) সারা দিন এদেশীয় আলেমদের মতো একই ধরনের জোব্বা পরিহিত থাকতেন না, তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পোশাক পরিধান করতেন। আর আমাদের দেশে নারীদের ক্ষেত্রে আরো বেশি সমস্যা, বোরকা ছাড়া যেন পর্দা হয় না! অথচ আজকাল বোরকা শুধু যে নারীদের ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে তা দেখলেই বোঝা যায়। পর্দা মূলত একটি ফরজ হুকুম। নামাজ যেমন ফরজ, রোজা যেমন ফরজ তেমনি পর্দাও ফরজ। তবে এটা শুধু নারীদের জন্য নয়, পুরুষের জন্যেও এবং পুরুষের পর্দার কথাই আগে বলা হয়েছে। কেননা কুরআনুল কারীমে নারী পুরুষ উভয়ের পর্দার কথা আলোচিত হয়েছে এবং পর্দার উপকারীতা ও ক্ষতির দিকও আলোচনায় এসেছে। তাই ইসলামের সঠিক একটি মাপকাঠি রয়েছে। কারণ পর্দার বিধান লঙ্ঘন হওয়ার কারণে পৃথিবীর অনৈতিক সকল কর্মকা- সংঘটিত হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল আজ আমরা বুঝি না পর্দা কী? পর্দা কীভাবে করতে হয়? পুরুষের পর্দা কেমন? নারীর পর্দা কেমন? প্রত্যেকের ইসলাম কি বিধান দিয়েছে? আমাদের মুসলিম হিসেবে পর্দার সঠিক ব্যাখ্যা জেনে নেওয়া দরকার। যেহেতু এটা কৃষ্টি বিষয়ক আলোচনা তাই বিস্তারিত পর্দা সম্পর্কে আলোচনা করা গেল না। এসব বিষয়ে অতিরঞ্জিত অপব্যাখ্যা দেওয়ার কারণে প্রগতিশীল বেশিরভাগ লোকই ইসলামকে ভূতোরাজ সেকেলে ধর্ম হিসেবে মনে করে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে! আরবিয়দের খাবার রুটি-গোস্ত-সবজি ইত্যাদি। আর আমাদের ভাত- মাছ- ডাল- সবজি ইত্যাদি। কই এটিতো নাজায়েজ হল না? আসল কথা হল ইসলাম বৈধ-অবৈধ এর কিছু মৌলিক নির্দেশনা দিয়েছেন যা ভৌগোলিক সীমারেখা নির্বিশেষে সবারই মানা সম্ভব! আরবে প্রাচীন কাল থেকে লোকদের একত্রিত করার জন্য দফ বাজানো হতো! ততকালীন বিবাহসহ সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে মুসলিমেরা গানের ক্ষেত্রেও দফ ব্যবহার করতেন। এটি ছিল তখনকার দিনের সবচেয়ে উন্নত ব্যবস্থাপনা। (ওহি নাজিলের একটি মাধ্যমও ছিল ঘণ্টা ধ্বনির ন্যায় শব্দ করে) এর আধুনিক রুপ কি হতে পারে?

আরো কথা হল তৎকালে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল কাব্যসাহিত্য। কবিতা-গান-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধ-নিবন্ধ-নাটক-চলচ্চিত্র এসব ভালো কিছু দিয়ে তৈরি-রচিত হতে পারে। আবার মন্দ কিছু দিয়েও তৈরি হতে পারে। ইসলাম চায় মানবীয় দিকটিই। শুধু মানুষ নয় যেকোনো সৃষ্টি অনাহারে থাকবে আর মানুষের মধ্যে কেউ-কেউ আনন্দ-বিনোদনে মেতে থাকবে এটি মানবতার সাথে মহাকৌতুক! আবার কেউ অলস-মাতাল হয়ে শুধু বসে-বসে অযথা বিনোদনে লিপ্ত থাকবে এটিও ইসলাম তথা বিশ্বের বিবেকবান কারোর কাম্য নয়! ইসলামে প্রেম শুধু আল্লাহর প্রতি এমন উদ্ভট কথাও অনেকে বলে থাকেন! ইসলামই রোমান্টিকতার সর্বোত্তম ক্ষেত্র! তাই বলে প্রেমের নামে প্রতারণা, বেহায়াপনা, পরকীয়া, এগুলোর কোনোই স্থান নেই! (ইসলাম শিশু কিশোর থেকে শুরু করে সকল সৃষ্টির প্রতি অনন্য প্রেমের রূপরেখা পেশ করেছেন) বর-বধূর গভীর ভালবাসার ফলে গোনাহ পর্যন্ত মাফ হতে থাকে! চলন্ত সমাজে সাড়ে তিন বছরের ফুলের মতো কন্যা গেয়ে ওঠে- আমি দেখতে লালে লাল/ রূপে গোল মরিচের ঝাঁল! এ জাতীয় গানও কোমলমতি শিশুদের মধ্যে বিতরণ করা হয়! এগুলো ইসলাম সমর্থন দূরে থাক, সংস্কৃতির সংজ্ঞা অনুযায়ী সংস্কৃতির দূর বারান্দায়ও এগুলোর কোনো স্থান নেই!

মানবীয় সবকিছু ইসলাম সমর্থিত। সত্য ও সুন্দর ইসলাম সমর্থিত। বাজনা ছাড়া মন্দ গান তৈরি হতে পারে না? অবশ্যই পারে। আবার বাজনা দিয়েও ভালো মন্দ দু’ধরনের গানই তৈরি হতে পারে। বাজনা কথা নয় কথা হল যে গান সমাজ জীবনকে ধ্বংস করবে, নীতিবোধকে ধ্বংস করবে, সেটি অবশ্যই বর্জনীয় আর যেটি মানুষকে পরিচ্ছন্নতার মধ্য থেকে বিনোদনের ব্যবস্থা করবে সেটি অবশ্যই গ্রহণীয়। মজার ব্যাপার হল হারাম গান বলতে আমাদের ওলামা সমাজ বাজনাযুক্ত গানকেই বুঝে থাকেন! (যদিও কিছুকাল আগে তাঁরা “গান” কথাটিও নাজায়েজ মনে করত! এখনো অনেকে তাই মনে করে!) আর হালাল গান বলতে সমাজবিচ্ছিন্ন বাজনাহীন বেসুরো গলায় সেকেলে মার্কা … ইত্যাদি গানকেই বুঝে থাকেন। সকল বিদ্যার সমষ্টিই ইসলাম শিক্ষা, অথচ ইসলাম শিক্ষা বলতে আমাদের কিসে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে! সবুজ ভূমিতে জন্ম নিয়েও সবুজ আমাদের হৃদয়ে ধারণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে নি! এমনকি অধিকাংশ ওলামায়ে কেরাম মাতৃভাষা বাংলার সঠিক উচ্চারণ জানেন না কি লেখায় কি বলায়! যদিও এখন কিছুটা উন্নতি হয়েছে! তারা আজ বাংলা চর্চার প্রয়োজনীয়তা টের পেয়েছে! (সেকেলে তাদের ধারণা মনে হয় এটি হিন্দুদের ভাষা!) অথচ বাংলা ভাষার উৎকর্ষতা মুসলিমরাই সাধন করেছে। ওয়াজ মাহফিলে প্রতিনিয়ত মিডিয়া মিডিয়া কালো মিডিয়া, হলুদ মিডিয়া, ইসলাম ধ্বংসকারী মিডিয়া আওয়াজ শুনতে পাই, মনে হয় মিডিয়া হাত পা ওয়ালা কোনো জন্তু বিশেষ? আবার চরম নির্লজ্জের মতো আমরা তাদের (অমুসলিমদের) উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে যাচ্ছি (যদিও কুরআন ও ইসলামের মোজেজার আলোকে তারা সকল আবিষ্কার করছে) তারপরও যারা ইসলামের নির্দেশমতো মিডিয়াকে পরিচালনা করতে চেষ্টা করছে তাদেরকে লম্বা-লম্বা কাফের ফতোয়ার বানে উড়িয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করছি না! উন্নত কোনো প্রযুক্তি বর্জনের মতো সংকীর্ণ ইসলাম নয়! ইসলাম এতটা কাপুরুষ মার্কাও নয় যে মিডিয়া-মিডিয়া বলে চেঁচিয়ে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে তাসবিহ- তাহলিলে মাশগুল থাকবে! তাই যদি হয় তাহলে অন্য বিপুল সংখ্যক কয়েকশ’ কোটি লোক অন্ধকারে ডুবে যাবে? আর মুসলিমরা ঘরে বসে খোশগল্প করবে! চক্ষুকে নিম্নগামী রেখে নিজের ঈমান রক্ষা করবে? এই কি ইসলাম? এতো ইসলাম দূরে থাক বিশ্বমানবতার সাথে মহাফাজলামো! এতো মুসলিম নামধারী শয়তানের পদচারণা! ইসলাম মন্দের বিপরীতে ভালোর জিহাদে অবতীর্ণ আবারো বলছি ইসলাম এমন কাপুরুষ মার্কা ইসলাম নয়! প্রকৃতপক্ষে আমরাই পথভ্রষ্ট হয়ে গেছি! মানবজাতির মুক্তির জন্য আল্লাহ প্রদত্ত সর্বশেষ ওহি গ্রন্থ আল কুরআনে জীবনের প্রতিটি বিষয়েরই সঠিক-পূর্ণ-গাইড-লাইন রয়েছে! যে নমুনা রাসূল (সা:) , সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ, তাবে তাবেঈন বাস্তবে পেশ করে গেছেন! পরিশেষে আসুন দম ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই কুসংস্কারকে ফুরিয়ে ফেলি! এখন থেকেই চির সত্যের ওপর জীবন-যাপন শুরু করি সকল প্রকার ভন্ডামী পরিহার করে।

লেখক: কলামিস্ট সাংবাদিক

আরও পড়ুন...