মাথায় টাক ও তার প্রতিকার

 

পিবিএ,ডেস্ক: মাথার কোনও কোনও অংশে টাক পড়ে যাওয়া নিয়ে আমাদের যতটা ভাবনা আছে, তার চেয়েও বেশি আছে ভুল ধারণা। বেশির ভাগ মানুষ এই মাথার মাঝে মাঝে চুল উঠে যাওয়াকে বলেন ‘টাকপোকা’। কিন্তু এই ছোট ছোট একাধিক টাকের সঙ্গে পোকামাকড়ের কোনও সম্পর্কই নেই, বলছিলেন ত্বক বিশেষজ্ঞরা । বরং ত্বক বিশেষজ্ঞরা এই অসুখের একটা গালভারি নাম দিয়েছেন, ‘অ্যালোপেশিয়া অ্যারিয়েটা’। আসলে এটা এক ধরনের অটো ইমিউন ডিজিজ। অর্থাৎ কোনও এক অজ্ঞাত কারণে শরীরের নিজস্ব ইমিউন সিস্টেম অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা মাথার হেয়ার ফলিকলদের শত্রু মনে করে। আর এই কারণে সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে চুল তো ঝরে পড়েই, নতুন করে চুল গজাতেও পারে না।

তবে এই টাকের একটা মজা আছে। পুরুষালি টাক যার ডাক্তারি নাম ‘অ্যালোপেশিয়া অ্যান্ড্রোজেনেটিকা’, তার (অর্থাৎ পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের প্রভাবে যে টাক হয়, মাথার পিছনে ও কপালের দু’ধারে) থেকে একেবারে বিপরীত। পুরুষালি টাক মাঝবয়সি পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়। আর এক বার টাক পড়া শুরু হলে বিশেষ চিকিৎসা না করালে চুল ঝরে গিয়ে মাথাজোড়া টাক পড়ে, এই ‘অ্যালোপেশিয়া অ্যারিয়েটা’ নামক টাক কিন্তু সে রকম নয়। ডা সন্দীপন ধর জানালেন যে অনেক সময় এই অটো ইমিউন টাকে আপনা থেকেই চুল গজানোর সম্ভাবনা থাকে।

তবে এই ধরনের অসুখের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। অসুখ সারাতে গেলে এগুলোও মাথায় রাখতে হবে।

এই টাকের ঝুঁকি আবার কয়েকটি ক্ষেত্রে মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।

প্রসবের পর, জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওষুধ বন্ধ করে দিলে ইস্ট্রোজেন প্রোজেস্টেরন হরমোনের তারতম্যে অটো ইমিউন টাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

তবে সাধারণত ৩০ বছর থেকে ৬০ বছর বয়সি নারী-পুরুষ নির্বিশেষ অ্যালোপেশিয়া অ্যারিয়েটা অর্থাৎ মাথায় ভর্তি ইতস্তত টাক বেশি দেখা যায়।

মাথা ছাড়াও ভুরু ও শরীরের অন্যান্য অংশে যেখানে ঘন লোম আছে সেখানেও দেখা যেতে পারে।

চুলের এই সমস্যা মোটেও ছোঁয়াচে নয়।

অটো ইমিউন হওয়ায় কিছুটা বংশগত এই সমস্যা।

অল্প হলেও যাদের পরিবারে বাড়াবাড়ি রকমের থাইরয়েডের সমস্যা, শ্বেতি, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, লুপাস অথবা আলসারেটিভ কোলাইটিস আছে তাঁদের এই সমস্যা কিছুটা বেশি দেখা যেতে পারে।

অনেক সময় স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যেও চুল ঝরে যাওয়ার এই সমস্যা দেখা যেতে পারে। কিন্তু তার জন্যে মন খারাপ করার কিছু নেই। সঠিক চিকিৎসায় হারিয়ে যাওয়া চুল আবার ফিরিয়ে আনা যায়। ভবিষ্যতে টাক ফিরে আসার সম্ভাবনাও যথেষ্ট কম।

অসুখের হানা শুরু হয়েছে বুঝলেই নানা টোটকা ও ঘরোয়া উপায় অবলম্বন না করে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে চোখে দেখেই ত্বক বিশেষজ্ঞরা এই অসুখ চিনে নেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্ক্যাল্পের কয়েকটি টেস্ট করাতে হতে পারে।

প্রতিকারের উপায়:

আসলে‌ ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করে এর যথেষ্ট ভাল ফল পাওয়া যায়। ওষুধের সাহায্যে মাথার ত্বকের ফাঁকা অংশে ইরিটেশন সৃষ্টি করা হয়। এর ফলে হেয়ার ফলিকল সক্রিয় হয়ে নতুন করে চুল গজায়। অনেক সময় চিকিৎসকরা ৫% মিনক্সিডিল লাগিয়ে উল্লেখযোগ্য ভাল কাজ হয়। তবে এর সঙ্গে আরও কিছু ওষুধ লাগাতে হতে পারে। অ্যানথ্রালিন নামক এক বিশেষ ওষুধ শর্ট কন্ট্যাক্ট থেরাপি হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শও দেন অনেক চিকৎসকরা। তবে এই অসুখে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ওষুধ খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।

তবে একটা কথা মনে রাখবেন, নিজেরা ওভার দ্য কাউন্টার ওষুধ কিনে ব্যবহার করবেন না। এতে ভালর বদলে মন্দ হবার ঝুঁকি থাকে। এই অটো ইমিউন সমস্যা প্রতিরোধের উপায় নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে। তাই রোগ এড়াতে সামগ্রিক ভাবে ভাল থাকার উপরে জোর দিতে হবে। পর্যাপ্ত জল পান করুন। ধুমপান মদ্যপান এড়িয়ে চলুন, রোজকার খাবারে থাকুক পর্যাপ্ত পরিমাণে সবুজ শাক-সব্জি। ডায়াবিটিস, থাইরয়েড থেকে দূরে থাকুন।

 

পিবিএি/এবি/হক

আরও পড়ুন...