পিবিএ, কিশোরগঞ্জ: কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার শাহিনুর আক্তার তানিয়া হত্যাকান্ডের নমুনা সংগ্রহ হয়েছে। পালক্রমে ধর্ষন করা হয় নার্স তানিয়াকে। প্রথমে ড্রাইভার নূরুজ্জামান নূরু তারিয়াকে ধর্ষন করে, হেলপার লালন ও বোরহান পালক্রমে ধর্ষন করে। ঘটনাটিকে নেহাত দূর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে তানিয়াকে বাস থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়া হয়। এতে তানিয়ার মাথা ফেটে গুরুতর আহত হয় তানিয়া।
নিহত শাহিনুর আক্তার তানিয়া কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের মেয়ে। তিনি ঢাকার ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন ডিপ্লোমা নার্স ছিলেন। প্রথম রোজা রাখার উদ্দেশ্যে গত সোমবার (৬মে) স্বর্ণলতা পরিবহন নামের বাসে করে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি কটিয়াদীর লোহাজুরী ইউনিয়নের বাহেরচরে ফিরছিলেন তানিয়া।
নার্স তানিয়া ধর্ষন ও হত্যাকান্ডের ঘটনা অনুসন্ধানে জানা যায়, সোমবার (৬মে) বিমানবন্দর এলাকা হতে তানিয়া স্বর্ণলতা পরিবহনের একটি বাসে উঠেন। বিমানবন্দর এলাকা থেকেই ড্রাইভার নূরুজ্জামান নূরু তানিয়াকে টার্গেট করে রাখে বলে জানা যায়। পরে রাত ৮টার দিকে বাজিতপুর উপজেলার গজারিয়া নামক স্থানে একটি কলা বাগানের পাশে বাস দাড় করিয়ে নূরুজ্জামান তানিয়াকে ধর্ষন করে। হেলপার বোরহান তানিয়াকে চেঁঁপে ধরে রাখে। তানিয়ার চিৎকার যাতে বাসের বাইরে না যায় সেজন্য বাসের প্রত্যেকটি দরজা জানালা বন্ধ করে দেয়া হয়। অপর হেলপার লালন মিয়া তখন বাসটি ধীর গতিতে চালাতে থাকে। পরে পালক্রমে বোরহান ও লালন ধর্ষনকান্ডে অংশ নেয়।
ঘটনার রাতে কটিয়াদী বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসটি পিরিজপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়ার সময় হেলপার লালন মিয়া বাসটি চালিয়েছিলো। লালনকে ড্রাইভারের আসনে রেখে বাসচালক নূরু মিয়া তানিয়ার উপর হামলা করে। তানিয়া প্রাণপন চেষ্টা করে নিজেকে রক্ষা করতে গেলে বাসে থাকা অপর হেলপার বোরহান তানিয়াকে জোরপূর্বক চেঁপে ধরে রাখে। চলন্ত বাসে নূরুজ্জামান, বোরহান ও লালন তিন নরপিশাচ ধর্ষকের অত্যাচারে বাসেই জ্ঞান হারান তানিয়া। পরে ঘটনাটিকে সড়ক দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দিতে তানিয়াকে বাস থেকে নিচে ফেলে দেয় জড়িতরা। এতে মাথায় গুরুতর আঘাত পান তানিয়া। তানিয়া বাস দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন জানিয়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পিরিজপুর স্থানীয় বাজারের সততা ফার্মেসিতে নেয়া হয়। সততা ফার্মেসির হাবিবুর রহমান মেয়েটিকে দেখে তাকে দ্রুত কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। বাসের চালক ও হেলপার মেয়েটিকে একটি সিএনজিতে তুলে দিয়ে হাসপাতালে পাঠানোর চেষ্টা করে। কিন্তু অচেনা কোন মেয়েকে একা হাসপাতালে নিতে অস্বীকার জানায় সিএনজি চালক। সিএনজি যেতে রাজি না হওয়ায় তানিয়াকে আবারও বাসে তুলে নেয় ধর্ষকরা।
টানা দুই ঘন্টা মুমূর্ষু তানিয়াকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাফেরা করে ধর্ষকদল। ততক্ষণে তানিয়া চলে যান না ফেরার দেশে। পরে কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে স্বর্ণলতা পরিবহনের কটিয়াদীর কাউন্টার মাস্টার মো. রফিকুল ইসলাম রফিক এবং সুপারভাইজার আল আমিন একটি সিএনজিতে করে তানিয়ার নিথর দেহ কটিয়াদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাজিতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোঃ সারোয়ার জাহানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ধর্ষনকান্ডে জড়িত ড্রাইভার নূরুজ্জামান নূরু ও হেলপার লালন মিয়া রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত স্বর্ণলতা পরিবহনের বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৫-৪২৭৪) পুলিশ জব্দ করেছে। বাসিটি বর্তমানে বাজিতপুর তানায় আটক রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা ঐদিনের ঘটনায় ঘটে যাওয়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। সেসব তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তারা জানিয়েছে, ঘটনার সময়ে বাসটিতে ড্রাইভার নূরু ও হেলপার লালন মিয়া ছাড়াও বোরহান নামে আরেক ব্যক্তি ছিল। বোরহান নূরুর খালাতো ভাই হয়। বোরহানের বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ায়। বোরহানকে ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শীঘ্রই গ্রেফতার হবে বলে আশা করি।
শনিবার (১১মে) ময়মনসিংহের সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিটের একটি টিম ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত বাসটির ভেতর থেকে ধর্ষনের নমুনা ও আলামত সংগ্রহ করেছে বলে জানা গেছে।
স্বর্ণলতা পরিবহনের বাস ঢাকার মহাখালী থেকে কটিয়াদী হয়ে বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত চলাচল করে। বাসে ওঠে তানিয়া তার বাবাকে মুঠোফোনে জানান, তিনি পিরিজপুর বাসস্ট্যান্ডে নামবেন। কিন্তু বাড়িতে ফিরতে দেরি হওয়ায় রাত সাড়ে ৮টায় তানিয়ার মোবাইলে ফোন করলে নম্বরটি বন্ধ পান বাবা গিয়াস উদ্দিন। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফোন করে এক ব্যক্তি গিয়াস উদ্দিনকে জানায়, তার মেয়ে বাস দুর্ঘটনায় পড়েছে এবং গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে সে কটিয়াদী হাসপাতালে রয়েছে। এ খবর পেয়ে স্বজনেরা হাসপাতালে গিয়ে মৃত অবস্থায় তানিয়াকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে পড়ে থাকতে দেখেন।
ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ মামলার তদন্তের সর্বশেষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য আজ রোববার (১২ মে) ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কিশোরগঞ্জে এসেছেন। পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ, বিপিএম (বার) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পিবিএ/টিএ/হক