পিবিএ ডেস্কঃ কথায় আছে মৃত্যু ব্যতীত সব রোগের ঔষধ কালোজিরা। প্রাচীন কাল থেকে কালোজিরা আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এতে থাকা বিভিন্ন উপাদান শরীরের নানাবিধ অসুখ সারাতে দারুণ কার্যকরী। যেমন-
ক্যানসার প্রতিরোধেঃ ঘরে ঘরেই আজ এই রোগটি নিজের দাঁত-নখ বসিয়ে রোগীকে তো কষ্ট দিচ্ছেই, পরিবারকেও সব দিক থেকে শেষ করে দিচ্ছে। ‘হু’র মতে এই রোগে নতুন কেস ২০২০ সালের মধ্যে ১৫ মিলিয়ন হবে। তাই আমাদের আজ থেকেই সতর্ক থাকা উচিৎ। আমরা জানি এই মারণ রোগের কোনো ওষুধ আজ অবধি তৈরি হয় নি, বা হলেও সাধারণের নাগালের মধ্যে নয় তা। তাই আমাদের বাঁচাতে কালোজিরার ওপর খানিক ভরসা করা যেতে পারে।
এন্টি ক্যান্সারঃ কালোজিরা লিভার ক্যান্সারের জন্য দায়ী ‘আফলাটাক্সিন’ নামের বিষ ধ্বংস করে। জার্মান গবেষকরা দেখিয়েছেন যে কালোজিরার মধ্যে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল আর অ্যান্টি-মাইকেটিক প্রভাব যা বোন ম্যারো ও প্রতিরক্ষা কোষগুলোকে সজাগ রাখে আর শরীরে ক্যানসার উৎপাদক ফ্রি-র্যাডিকেল অপসারিত করে। আমেরিকার বিজ্ঞানীরা প্রথম কালোজিরার টিউমার বিরোধী প্রভাব সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে মতামত দেন। তাই যেমন ভাবে হোক, কালোজিরা খান।
রোগ প্রতিরোধ করেঃ কালো জিরাতে উপস্থিত ফসফরাস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরের যে কোনও জীবাণুর সংক্রমণ প্রতিরোধ করতেও এটি বেশ কার্যকরী।
পেটের সমস্যায়ঃ পেটের সমস্যা নিরাময়ে কালো জিরার তুলনা নেই। আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা অনুযায়ী, আধা কাপ দুধের সঙ্গে এক চিমটে কালোজিরার গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারলে পেটের সমস্যা থেকে দ্রুত রেহাই পাওয়া যায়।
অ্যান্টি টক্সিনঃ কালোজিরা শরীরে অ্যান্টি টক্সিনের মতো কাজ করে। এ কারণে প্রস্রাব স্বাভাবিক, নিয়মিত ও পরিষ্কার রাখতে কালোজিরা যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখেঃ কালোজিরায় থাকা আয়রন ও ফসফেট শরীরে অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা সারাতেও কালো জিরার তুলনা নেই।
ফোঁড়া সারাতেঃ ফোঁড়ার ব্যথা থেকে বাঁচতে কালজিরার কাছে আসতেই পারেন। কালোজিরায় আছে অ্যান্টি-মাইক্রোরিয়াল এজেন্ট মানে যার জন্য আমাদের শরীরের রোগ-জীবাণু ধ্বংস হয়। তাই ফোঁড়া সারাতে বা সংক্রমণ কমাতে কালোজিরা খুব উপকারী।
উপকরণঃ পরিমাণ মতো তিলের তেল, কালোজিরার তেল বা বাটা।
পদ্ধতিঃ তিলের তেল ও কালোজিরার তেল মিশিয়ে ফোঁড়ার জায়গায় লাগান। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যে উপকার পাবেন।
মেদ কমাতেঃ আজকের দিনে অতিরিক্ত মেদ নিয়ে ভ্যাদভ্যাদে চেহারার মানুষ হয়ে ঘুরলে কেউ পাত্তা দেবে না। হতে হবে স্লিম আর ফিট। আর ব্যস্ত সময়ের ফাঁকে জিমেই বা যাবেন কখন! তাই কালোজিরাকে সাথী করে দেখুন, কি খেল দেখায়!
উপকরণঃ পানি, চা পাতা, সম পরিমাণ কালোজিরা।
পদ্ধতিঃ প্রথমে পানি ফুটিয়ে নিন। এবার ওতে চা পাতা আর সম পরিমাণ কালোজিরা দিন আর ফুটতে দিন। এবার রঙ হয়ে এলে নামিয়ে পারলে গরম গরম সাধারণ চায়ের মতোই খেয়ে নিন। চিনি না দেওয়াই ভালো। একটু কষ্ট করে খান, কেষ্ট পাবার গ্যারান্টি আমার।
দাঁতের ব্যথায়ঃ দাঁতে ব্যথা হলে আপনার সব শেষ! ওইরকম ব্যথা যার হয়েছে সেইই বোঝে। কালোজিরা নিজেই অ্যান্টি-বায়োটিক বা অ্যান্টি-সেপটিক। তাই মাড়ি ফোলা বা রক্ত পড়া বা যে কোনো মুখের ইনফেকশনে কালোজিরা অসাধারণ কাজ দেয়।
পদ্ধতিঃ পানিতে কালোজিরা দিয়ে তা ফুটিয়ে নিন। হাল্কা গরম থাকতে থাকতে কুলকুচি করুন। দিনে বেশ কয়েকবার করুন, দেখবেন উপকার হাতে হাতে পাবেন।
মাথা ব্যথা কমাতেঃ অনেকেরই আবহাওয়ার পরিবর্তন বা বর্ষায় ঠান্ডা লেগে মাথা ব্যথার সমস্যা হয়। এই সমস্যা সমাধানে কালোজিরা দারুণ ভূমিকা রাখে। একটা ছোট কাপড়ে কালোজিরা বেঁধে সেটি রোদে শুকোতে দিন। ঘণ্টা খানেক রোদে রাখার পর কালোজিরা ভরা কাপড়ের টুকরাটি নাকের কাছে ধরলে বুকে, মাথায় জমে থাকা কফ তরল হয়ে সহজে বেরিয়ে যায়। এতে মাথা ধরা বা ঝিম ঝিম ভাব দূর হয়ে যায়।
উপকরণঃ ১টা সুতির কাপড়, পরিমাণ মতো কালোজিরা।
পদ্ধতিঃ শুধু একটা সুতির কাপড়ের মধ্যে খানিকটা কালোজিরা নিয়ে পুঁটলি বানান। এবার সেটা নাকের কাছে এনে শ্বাস টানতে থাকুন। দেখবেন মাথা ব্যথা পালানোর পথ পাচ্ছে না।
পিবিএ/এমআর