খামার করে স্বাবলম্বী ঝিনাইদহের মধু

পিবিএ,ঝিনাইদহ: বসত বাড়ির এক খন্ড জমিতে পরিকল্পিত ভাবে ক্ষুদ্র খামার গড়ে তুলতে পারলে দারিদ্রতা হার মানে সেই কাজটি করে দেখিয়েছেন ঝিনাইদহের মধু বেগম নামে এক গ্রামীণ নারী। তার প্রচেষ্টায় তার পরিবারের দারিদ্রতা এখন যাদু ঘরে। তার পোতা পুতনি এখন ঝিনাইদহ সরকারি বালক ও বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের ভূপতিপুর গ্রাম। ঝিনাইদহ- মাগুরা মহাসড়কের ধারে চৌরাস্তা নামক বাজারের পূর্ব পাশে রাস্তার উত্তরে লেখা আছে আল্লার দান নার্সারি।

এই অঞ্চলের অনেকেই জানে যে এই নার্সারিতে উন্নত জাতের পেপের চারা পাওয়া যায়।খোঁজ নিয়ে জানা গেল নার্সারি মালিকের নাম মধু বেগম। অত্যন্ত দরিদ্রতার মাঝ দিয়ে ১৯৮৮ সালে স্বামী বেলাল মিয়ার সাথে ১০ কাঠা জমিতে ফলজ ও বনজ বৃক্ষের নার্সারি গড়ে তোলে। নিজের অন্য কোন জমি নেই। এই নার্সারির চারা বিক্রয় করে সংসার চালায় বেলাল মিয়া। এক ছেলে ৩ মেয়ে এক মেয়ে মানসিক প্রতিবন্ধি।

খামার করে স্বাবলম্বী ঝিনাইদহের মধু
মধু বেগম

২০০৩ সালে মধু বেগম কে ছেড়ে পরকালে পাড়ি দেয় বেলাল মিয়া। মধু বেগম ছেলে মেয়ে নিয়ে একা হয়ে পড়ে। সন্তানদের সাথে নিয়ে নার্সারির হাল ধরে। সময় বদলে যায় তার সাথে বদলে যেতে থাকে মধু বেগমের চিন্তা ভাবনা। শুধু গাছের চারা বিক্রি নয় তার সাথে শুরু করে পেঁপের চারা উৎপাদন। সে জানায় ১১ শতক জমিতে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার পেঁপের বিক্রয় করে লক্ষাধিক টাকা উপার্জন করে মধু বেগম।পাশেই ৪০ শতক জমি ক্রয় করে পুকুর কেটে মাছ চাষ করে।

সেখান থেকে বছরে সংসারের মাছের চাহিদা পূর্ণ হয়। গড়েছেন ছোট্ট একটি গরুর ফার্ম । ফার্মে ৩ টি গাভী প্রতিদিন গড়ে ২ কেজি দুধ উৎপাদন হয়। তাহাতে বছরে এই গরুর ফার্ম থেকে লক্ষাধিক অর্থ আয় হয়। মধু বেগমের ভাবনা আর কি করা যায়? পাশে এগিয়ে এসে পোড়াহাটী ব্লোকের উপ- সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রাজিয়া খাতুন। মধু বেগম কে পরামর্শ দেয় কেঁচো সার উৎপাদনের।

শুধু পরামর্শ নয় ১ কেজি কেঁচো অফিস থেকে দেয় বিনা টাকায়। এই দিয়ে মধু বেগম প্রথমে ৩ টি চাড়িতে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করে। তারপর ব্রাক থেকে ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ঘর বানিয়ে সেখানে কেঁচো সার উৎপাদন শুরু করে। এখন প্রতিমাসে ৩ শত কেজি কেঁচো সার উৎপাদন করে সেখান থেকে প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকার কেঁচো সার বিক্রয় করে। সর্ব সাকুল্যে মধু বেগম বসতবাড়ির খামার থেকে বছরে ৪ লক্ষাধিক টাকা আয় করে।

সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে মধু বেগম ভীষণ খুশী হয়ে বলে যে কোন একটি বাড়ীতে ২/৩ গাভী পালন করে তার গোবরের সাথে কলা গাছের টুকরা ও ইপিল গাছের পাতা দিয়ে অতি সহজেই এই কেঁচো সার উৎপাদ করে একটি পরিবার ভাল ভাবে চলতে পারে। এই সার সম্পূর্ণ রাসায়নিক ক্রিয়া মুক্ত হওয়ার কারনে উৎপাদিত ফসলের খাবার খেলে মানুষ অনেকটা রোগ বাইল মুক্ত জীবন যাপন করতে পারবে।

জীবনে অনেক কষ্ট করেছি এখন আর কষ্ট নেই। এই বাড়ির ক্ষুদ্র খামারের আয় থেকে আমার পরিবারের সকল খরচ চলে। এই খামারের আয় থেকেই আমি ৪০ শতক জমি রেখেছি। খামারে যে কোন সমস্যা হলে সর্বদা ঝিনাইদহ কৃষি অফিসের রাজিয়া খাতুন আমার সহযোগিতা করে থাকে।একটি বাড়ীতে এই ভাবে সকলেই এক একটি খামার গড়ে তুলুক প্রত্যাশা করি।

পিবিএ/আরআই/আরআই

আরও পড়ুন...