বেকারত্বকে ‘গুডবাই’ জানালেন সালাম

পিবিএ,লালমনিরহাট: ২০১০ সালে সরকারী আজিজুল হক বিশ্ববিদ্যাালয় কলেজ থেকে পদার্থ বিজ্ঞানে মাস্টার্স শেষ করার পর স্বপ্ন ছিল বিসিএস ক্যাডার হয়ে ভাল চাকুরী করবেন। সে স্বপ্ন পূরণ না হওয়ায় বেকারত্বকে ‘গুডবাই’ জানাতে চাকুরীর বিকল্প হিসেবে নিজবাড়িকে ঘিরেই নিয়েছেন নানা কর্মমূখী উদ্যোগ। ক্রমেই বিস্তৃতিলাভ করছে স্বাবলম্বীতার সে সব উদ্যোগের আর তা পরিচিতি পাচ্ছে খামার বাড়ি হিসেবে।

যার উদ্যম,একাগ্রতা ও কঠোর শ্রমে বাড়িটি এখন খামারবাড়ি তিনি মো.আব্দুস সালাম। যিনি হতে চলেছেন বেকারত্বকে বিদায় জানানোর অদম্য এক সৈনিক। বাড়ী লালমনিরহাটের কাকিনার পাল পাড়ায়। লালিত স্বপ্ন যখন স্বপ্নই থেকে যায় তখন তিনি স্বপ্ন দেখেন ভিন্ন পথে। আর তা পূরণে এগিয়ে আসেন চাকুরীজীবি বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ। সাড়া মিলেছে উপজেলা প্রাণি সম্পদ দপ্তরেরও। ফলে নিজ বাড়িটিকে ঘিরেই একের পর এক গড়ে তোলেন গাভী,কবুতরের খামার ও মাছ চাষ প্রকল্প।

বেকারত্বকে 'গুডবাই' জানালেন সালাম
মো.আব্দুস সালাম ও তার খামার বাড়ি

সরেজমিন সালামের খামারবাড়ীতে গেলে দেখা যাবে ঝাক ঝাক কবুতরের মেলা আর শোনা যাবে বাক বাকুম শব্দগুঞ্জন। যেনো কবুুুতরগুলো স্বাগত জানাচ্ছে আগন্তুক যে কাউকে ওই সকল শব্দগুঞ্জনে। এরপর চোখ ঘুরালেই দেখা যাবে দক্ষিণের একটি উঁচু ঘরে খড়ের স্তূপ, পশ্চিমে ঘাস ও উত্তরে মাছ চাষ আর পূর্বে গাভীখামার।

বাক বাকুমের দল কবুতরগুলোর বাসস্থান করা হয়েছে থাকার ঘরের ঠিক উপরের দ্বিতল অংশে । এদের দেখাশোনার জন্য নীচ থেকে উপরতলা পর্যন্ত রয়েছে একটি লম্বা মই। মাছ,কবুতর ও গাভী পালনের ৮০ ভাগ কাজ করতে হয় সালামকেই।

ব্যস্ত থাকতে হয় সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। বাকী ২০ ভাগ কাজে সহযোগিতা করেন মা ও ভাবী। বিশেষ কওে প্রতিদিন প্রায় ২০ লিটার পরিমান দুধ দোহনের কাজটি করতে হয় ভাবী মৌসুমী আক্তারকেই। মৌসুমী বলেন, এসব করতে অনেক কষ্ট হয়, কিন্তু দুধ বিক্রির টাকা হাতে এলে তখন আর সেটা মনে হয়না।

সালাম ও মৌসুমীর সাথে আলাপ চারিতায় উঠে আসে চলাচলের রাস্তা,বিদ্যুৎবিভ্রাট,জনবলের স্বল্পতা, আধুনিক ও প্রযুক্তিগত নানা যন্ত্রপাতি এবং প্রশিক্ষণ না থাকা সহ বেশ কিছু সমস্যার কথাও। তবে প্রশিক্ষণ না থাকলেও খামার পরিচালনায় সালাম নানা পদ্ধতি,তথ্য,উপাত্ত ও প্রযুক্তিগত দিক সম্পর্কে জানতে সাহায্য নেন তার ব্যবহৃত একটি স্মার্টফোন ও প্রাণি সম্পদ দপ্তর থেকেই।

সালাম আরো যে সমস্যাটির প্রতি জোর দেন তা হলো দুধ বাজারজাতকরন। এজন্য দুধ সংগ্রহে সরকারের উদ্যোগ কামনা করেন তিনি। সালামের খামারবাড়ি নিয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.নুরুল ইসলাম বলেন,শুধুমাত্র চাকুরীর পেছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগেও যে ভালো কিছু করা যায় সালাম ও সালামের পরিবারটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

তাঁদের উদ্যোগ ও আন্তরিকতা দেখে আমাদের প্রাণিসম্পদ দপ্তর প্রয়োজনীয় যোগাযোগ রাখছে এবং খামার উন্নয়নে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। আশাকরি তারা ভালো কিছু করবে।সালামদের মতো স্ব উদ্যোগীদের স্বপ্ন পূরনে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহনের এখনই সময় বলে মনে করছেন ভুক্তভোগী সহ সচেতন মহল।

পিবিএ/এএইচআর/আরআই

আরও পড়ুন...