ওয়ালটন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়ায়, সম্পর্কচ্ছেদ : ইলিয়াস কাঞ্চন

পিবিএ,ঢাকা: ওয়ালটনকে জানিয়ে ডিআরইউতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে চলচ্চিত্রের তারকা নায়ক ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের পথিকৃৎ ইলিয়াস কাঞ্চন ঘোষণা দিয়েছেন এখন থেকে তার সাথে ওয়ালটন গ্রুপ এবং পণ্যের কোন সম্পর্ক নেই।

এর আগে তিনি ২০০৫-২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি ‘ওয়ালটন’ গ্রুপের সাথে যুক্ত ছিলেন।

ওয়ালটন ছাড়ার কারণ নিয়ে তিনি বলেন, আমার ভক্তকূলসহ দেশবাসীর অনেকে মনে করতেন ওয়ালটনের সাথে আমার মালিকানাগত কোন বিষয় রয়েছে। অর্থ্যাৎ আমি ওয়ালটনের একজন মালিক। যে কারণে প্রায়ই আমার কাছে বিভিন্ন লোকজন চাকরির তদবিরসহ বিভিন্ন আবদার নিয়ে আসতেন, শুনতে হতো মালিকানার কথাটি। অবশ্য আমি তাদের বুঝিয়ে বলতাম। সে সময় হয়তো কারো কারো ভুল ভাঙতো। আবার অনেকে মনে করতো আমি এভয়েড করছি।

কথাটি যে ওয়ালটন কর্তৃপক্ষের কানে যায়নি তা নয়, তারা শুনলেও তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে আমার ইমেইজ, আমার বিশ্বাসযোগ্যতাকে জনগণের কাছে কাজে লাগানোর জন্য কিছু বলতেন না। অথচ আমি ওয়ালটনের ব্র্যান্ড এ্যাম্বেসেডর ছিলাম। মূলত ওয়ালটনের সাথে আমি যুক্ত হয়েছিলাম তাদের একটি কথায়। তারা বলেছিল ‘ওয়ালটন মানে নিরাপদ সড়ক চাই’, ‘নিরাপদ সড়ক চাই মানে ওয়ালটন’। যে কারণে আমি তাদের কথায় অনুপ্রাণিত হই। তাছাড়া আমি দেশের বিভিন্ন স্থানে ওয়ালটনের শো রুম উদ্বোধন করতে গিয়ে শুধু শো রুম উদ্বোধন করেছি তা নয়, সেখানে একটি জনসমাবেশের আয়োজন করতো তারা। আমি জনসমাবেশে গিয়ে দেশীয় পণ্য ওয়ালটন ও নিরাপদ সড়ক সম্পর্কে বলতাম। দীর্ঘ পথচলায় মূলত আমার মূল উদ্দেশ্যই ছিল নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকা এবং দেশীয় পণ্য ওয়ালটন ঘরে ঘরে পৌঁছে দেয়া। আমার মনে হয় ওয়ালটনকে ঘরে ঘরে পৌাঁছানোর জন্য আমি অবদান রাখতে পেরেছি।


সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন জানান গত ৩/৪ বছর ধরে ওয়ালটন শো রুম উদ্বোধনে তাকে আর ডাকা হচ্ছেনা। যে কারণে জনসমাবেশের মাধ্যমে জনগণকে সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা যেত সেটা যদি বন্ধ হয়ে যায়। এতে তার লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাছাড়া ওয়ালটনের সাথে নিরাপদ সড়ক চাইয়ের একটা যৌথ প্রজেক্ট ছিল। প্রজেক্টটি হলো দরিদ্র এসএসসি পাশ বেকার শ্রেণীকে গাড়িচালক হিসেবে তৈরি করে বিনা ফিতে লাইসেন্স করিয়ে দিয়ে কর্মক্ষম করা। প্রজেক্টটির উদ্দেশ্য হলো সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা ও নিরাপদ সড়ক প্রতিষ্ঠায় শিক্ষিত চালক তৈরি করা। এই প্রজেক্টেই ওয়ালটন ২০১১ সাল থেকে সহায়তা করতো। কিন্তু আজ তারা এসব আয়োজন বন্ধ করে দিয়েছে। যা আমায় বেশ কষ্ট দিয়েছে।

ইলিয়াস কাঞ্চন সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন, আমি একজন সেলিব্রেটি এবং একটি সামাজিক আন্দোলন করে যাচ্ছি তাই সংগঠনের জন্য বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে।

কিন্তু এ কথাটি এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত যে আমি এবং ওয়ালটন আলাদা কোন সত্ত্বা নই। কিন্তু সবার ধারণা যদি প্রতিষ্ঠিত থাকে যে ওয়ালটনের সাথে আমার মালিকানা আছে বা অন্য কোন সম্পর্ক আছে তাহলে কোন প্রতিষ্ঠানই বিশেষ করে ওয়ালটন পণ্যের চরিত্র বহনকারী অন্য প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে না। ফলে কারও যদি ইচ্ছে থাকে সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে কাজ করবে তারা নিরাপদ সড়ক চাই’র কাছে আসবেন না। এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আহবান জানাই কোন প্রতিষ্ঠান যদি নিরাপদ সড়ক আন্দোলনকে সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসেন তাহলে দেশে সড়কে বিদ্যমান নানা সমস্যা নিরসনে এবং দেশে যে পরিমাণ চালক ঘাটতি আছে তাতে ভূমিকা রাখতে পারবেন। এছাড়া নিসচার দরিদ্র এসএসসি পাশ বেকার শ্রেণীকে গাড়িচালক হিসেবে তৈরি করে বিনা ফিতে লাইসেন্স করিয়ে দিয়ে কর্মক্ষম করার প্রজেক্টে সংশ্লিষ্ট হওয়ার সুযোগ রয়েছে।

ইলিয়াস কাঞ্চন দুঃখ করে বলেন, একটি সামাজিক আন্দোলনের সাথে আজীবন থাকার ঘোষণা দিয়ে ওয়ালটন কি করে সরে আসে তা বোধগম্য নয়। আসলে আমি কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে এভাবে জড়াতাম কিনা সেটা ভাবনার বিষয় ছিল। কিন্তু ওয়ালটন কর্তৃপক্ষ যখন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনকে পৃষ্টপোষকতা করবে বলেছিল এবং প্রতিষ্ঠানটি দেশীয় পণ্য উৎপাদন করছে তাই দেখে তাতে আমি বিনা বাক্য ব্যয়ে রাজী হয়ে যাই। অথচ তারা নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিবে তেমন কোন ইঙ্গিত আমায় দেয়নি। একদিন হঠাৎ করেই দেখি তারা সরে গেছে। যা আমি মেনে নিতে নিতে পারছিনা। আমি পরিস্কার ভাষায় বলছি যতদিন বাঁচি নিরাপদ সড়কের জন্য কাজ করে যাবো। কারও সাথে কেন বিবাদ নয়, পারস্পরিক স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে এগিয়ে যাবো। পরিশেষে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিরাপদ সড়ক চাই’র যুগ্ম মহাসচিব লিটন এরশাদ, লায়ন গনি মিয়া বাবুল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মিরাজুল মইন জয়, প্রচার সম্পাদক কেএম ওবায়দুর রহমান, কার্যনির্বাহী সদস্য কামাল হোসেন খান, নজরুল ইসলাম ফয়সাল, আজীবন সদস্য জেবুন্নেসা, সাধারণ সদস্য আনজুমান আরা তন্নি, মোহসিন খান প্রমুখ।

 

পিবিএ/জেডআই

আরও পড়ুন...