পার্ক পুকুরের নাম ‘সুলতানা সরোবর’

পিবিএ,কুড়িগ্রাম: খুব দ্রুত দেশের জেলা ও মফস্বল শহরগুলো ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। যান্ত্রিকতার চাপে আজ নগর জীবন যেন হাঁসফাঁস করে। এতটুকু নির্জনতার অন্বেষায় মানুষ স্বস্তি খুঁজে, ছাঁয়া সুনিবিড়ের সন্ধানে ছুটে যেতে চায়। বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রাম। দেশ স্বাধীনের পূর্বেই পুরাতন কুড়িগ্রাম থেকে শহরকে স্থানান্তর করা হয় নতুন শহর খ্যাত ”নিউ টাউনশিপ” এ ।কিছুটা পরিকল্পনার অভাব অথবা কিছুটা সরকারি অফিসগুলোর দখলদারী চরিত্রের কারণে দ্রুত নিউ টাউনশিপ এর অবয়বে দেখা যায় এলোমেলো, অপরিকল্পিত অট্টালিকা। দ্রুত এর চিত্র পাল্টে যায়। সরকারি ভবনের পাশাপাশি বিভিন্ন সমিতি, সংগঠন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও দখল করে নেয় কুড়িগ্রাম নিউটাউন এর জায়গা জমি।

সব কিছুই হতে থাকলেও হয়নি কুড়িগ্রাম শহরে একটি পার্ক বা সুষ্ঠ বিনোদনের স্থান গড়ে উঠতে পারেনি । হয়নি নাগরিক কোলাহল থেকে নিষ্কৃতির এতটুকু অবকাশ স্থল। কুড়িগ্রামের প্রধান দুটি রাস্তা আরকে রোড ও কেসি রোডকে কেন্দ্র করে কুড়িগ্রাম শহরের নগরায়ন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। এই দুটি রাস্তা ছাড়াও পৌরসভার রাস্তাগুলো আরো বেশি ব্যস্ত হয়ে পরে। ঢাকা সহ সমগ্র দেশের বিভাগীয় ও বড় বড় শহর গুলোতে অসংখ্য যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে। কুড়িগ্রামের নিরীহ মানুষ এই রাস্তা গুলোতে হাঁটতে এখন ভয় পায়।

দুর্ঘটনার প্রবল ঝুঁকির কারণে অনেকেই প্রভাতকালীন অথবা বৈকালিক হাঁটা, চলাফেরা বন্ধ করে দিয়েছে।এর মাঝে আরেকটি বিড়ম্বনার জন্ম দিয়েছে ব্যাটারি চালিত রিক্সা, অটো রিক্সা এবং থ্রি হুইলার। এই বাহনগুলোর উপদ্রপে শুধু বয়স্করাই নয়, যে কেউ পথে হাঁটতে ভুলে গেছে। স্বাস্থ্য উদ্ধার, ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ, ওজন কমানোর মত চিকিৎসকের পরামর্শ যখন উপেক্ষা করে এখানকার মানুষ শুধু ঔষুধ নির্ভর হয়ে পড়ছে ঠিক তখনই কুড়িগ্রাম শহরের মানুষ নাগরিক জীবন থেকে বের হওয়ার একটু আলোর ঝলকানি দেখতে পেল।

পার্ক পুকুরের নাম ‘সুলতানা সরোবর’
জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন ও পার্ক পুকুর

”সুলতানা সরোবর” ধীরে ধীরে তার রূপ, তার অবয়ব দেখতে পাচ্ছে এখন কুড়িগ্রাম শহরবাসী। মরুভূমির মাঝে যেন একখন্ড ওয়েসিস ধারা। কুড়িগ্রাম কালেক্টরেট ভবন ও জর্জকোর্টের মধ্যবর্তী স্থানে পার্ক পুকুরটি সংস্কারের পদক্ষেপ নিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন। কাজ প্রায় শেষের পর্যায়ে। কোন এক সময় এই পুকুর পাড় ছিল ভাসমান ও উদ্বাস্তুদের আড্ডাখানা।

এখন পুরো পুকুর পাড় হবে জেলা শহরের সেরা বিনোদন ও হাঁটাহাঁটি করার স্থান। এখনও উদ্বোধন হয়নি। কাজও শেষ হয়নি। কিন্তু এরই মাঝে সকাল বিকাল ভর দুপুরেও কিছু লোক দাঁড়িয়ে এখানকার কর্মযজ্ঞ দেখে। দ্রুত গতিতে শহরের প্রাণ কেন্দ্রে একটু বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস, স্বস্তির অবকাশ নেয়ার একখন্ড ছাঁয়া সুনিবিড় পরিপাটি পুকুর পাড় নির্মাণের কাজ চলছে। এই পার্ক পুকুর পাড়ের নাম ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সকলের মুখে মুখে।

কুড়িগ্রামের কৃতজ্ঞ মানুষগুলো এই পার্ক পুকুরের নাম দিয়েছে ”সুলতানা সরোবর ”। সরকারি চাকুরীর বাস্তবতায় একদিন বর্তমান জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রামে থাকবেন না। তাঁর নামবিহীন অনেক সুকর্মই কুড়িগ্রামে থাকবে। কিন্তু এই একটি কীর্তি থাকুক না তাঁর নিজ নামে। কারো ঘোষণার তোয়াক্কা না করে এরই মাঝে এই পার্ক পুকুরের নাম দিয়েছে কুড়িগ্রামবাসী ‘সুলতানা সরোবর ‘।

কুড়িগ্রামের ইতিহাসে প্রথম মহিলা জেলা প্রশাসক হিসাবে যোগদান করেই আলোচিত হয়ে যান জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন। একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মূল পুঁজি করে একটার পর একটা পদক্ষেপ গ্রহণ করেন অবহেলিত কুড়িগ্রাম জনপদের নিরীহ মানুষগুলোর জন্যে। উন্ন্যয়নমূলক কর্মসূচীর পাশাপাশি কুড়িগ্রাম শহরবাসীর জন্যে অতি আবশ্যক এই নির্মল বিনোদন স্থানটির কাজ শুরুর প্রাক্কালে তিনি বলেন, সকল ধরণের উন্নয়ন, সময়ের দাবির প্রেক্ষাপটে একদিন ঘটবে।

কিন্তু উন্নয়নের পাশাপাশি মানসিক উৎকর্ষতার বৃদ্ধি না ঘটালে একদিন সকল উন্নয়ন যান্ত্রিকতায় বন্দি হয়ে পড়বে। কুড়িগ্রাম শহর কেন্দ্রীক ভারসাম্য রক্ষায় আমি এই কাজটি শুরু করেছি। সকলের সমর্থন ও সহযোগিতা পাচ্ছি। ইনশাআল্লাহ কুড়িগ্রামের মানুষের কাছে এই পার্ক পুকুর পাড় হবে একটি প্রিয় স্থান।

”সুলতানা সরোবর” একটি পরিত্যক্ত পার্ক পুকুর আজ আলোঝলময় হয়ে উঠছে। আলোকিত নান্দনিক রূপে মনে হয় যেথা রামধনু উঠবে হেসে। কুড়িগ্রামের মানুষেরা আজ জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীনের প্রতি কৃতজ্ঞ। কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক, বিশিষ্ট্ ব্যবসায়ী এবং কলেজ মোড়স্থ ”রূপসী বাংলা” হোটেলের স্বত্বাধিকারী জিল্লুর রহমান চৌধুরী টিটু এই পুকুরের উন্নয়ন সম্পর্কে বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ এই পরিত্যক্ত পুকুর পাড়টি ছিল উদ্বাস্তু, ভাসমান পতিতা ও সাপ খোপের অভয়াশ্রম।

বর্তমান জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন এই পুকুরটি শুধু সংস্কারই না, এর আমূল পরিবর্তনে ব্যাপক উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন। অনেক ডিসিই এর আগে এই জেলার দায়িত্বে ছিলেন। তাঁদের চোখের সামনে এই দৃষ্টিকটু বিষয়টির সুরাহা হয়নি। অবশেষে আমাদের প্রিয় জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন মহোদয় এই মহতী কাজটি শুরু করেছেন এবং এ জন্যে সারাজীবন তিনি কুড়িগ্রামের মানুষের দোয়া পাবেন।

আরেক স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও খাদ্য ব্যবসায়ী, কুড়িগ্রাম নতুন শহরবাসী আলহাজ্জ্ব শহিরুজ্জামান সাজু বলেন, ডিসি সুলতানা পারভীন কুড়িগ্রামের উন্নয়নের জন্যে অনেক কিছুই করে যাচ্ছেন। পার্ক পুকুরটি আজ ”সুলতানা সরোবর”। অনেক বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ মানুষ হাঁটাহাঁটি করার জন্যে এবং নির্মল পরিবেশ উপভোগের জন্যে তাঁর কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকবে।

পিবিএ/এমআইবি/আরআই

আরও পড়ুন...