নয় মাসে বাণিজ্য ঘাটতি এক লাখ কোটি টাকা

বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ।

পিবিএ,ঢাকা: চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) দেশের পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি ১ হাজার ১৯২ কোটি ৮০ লাখ ডলার বা প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এ ছাড়া বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ সব তথ্য জানা গেছে।

আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রফতানি আয় কম। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। বৈদেশিক বাণিজ্যের এ অবস্থা অর্থনীতির জন্য বড় উদ্বেগের বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বর্তমানে বেশকিছু মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এর মধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্যতম। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি করে জোগান দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া রফতানি বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স কিছুটা ইতিবাচক হলেও তা আমাদানি ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম। এতে করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। যার ফলও দেখা গেছে। ইতোমধ্যে ডলারের তুলনায় টাকা অনেক দুর্বল হয়েছে। কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আমদানি ব্যয় বেড়ে এখন মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের নয় মাস শেষে ইপিজেডসহ (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা) রপ্তানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩ হাজার ৪৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে ৪ হাজার ২৩৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে মার্চ মাস শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৯২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৭৯১ হাজার কোটি টাকা (বিনিময় হার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে) ছাড়িয়েছে।

তবে গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্যে ঘাটতি আরো বেশি ছিল। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে বাণিজ্য ঘটতি ছিল ১ হাজার ৩১৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতনভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৭৭২ কোটি ডলার। এর বিপরীতে বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ৫০৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে সেবাখাতে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৬৮ কোটি ডলার। যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৫৮ কোটি ডলার।

অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ১৮৬ কোটি ডলার। যার প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। পণ্য ও সেবা বাণিজ্যে যে পরিমাণ ঘাটতি হয়েছে, তা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের চেয়ে অনেক বেশি।

এ কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব ঋণাত্মক রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ ঋণাত্মক কিছুটা কমেছে। এ ছাড়া অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪২৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬৪৮ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত মানে হলো নিয়মিত লেনদেনে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকা মানে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হবে। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আমদানির চাপের কারণে ডলারের দাম বাড়ছে। ফলে চলতি বছরে কয়েক দফা ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বছর শুরুর দিন আন্তঃব্যাংক রেটে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। এখন ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ২৮৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার, এর মধ্যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২১ শতাংশ, নিট বেড়েছে ২১ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

সর্বশেষ গত ১৫ মে’র হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ১১২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। যা গত বছর একই সময়ে ছিল ৩ হাজার ২০২ কোটি ২০ লাখ ডলার।

বাণিজ্য ঘাটতি প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘যে হারে আমদানি হচ্ছে সেই হারে রফতানি আয় হয়নি। যার ফলে বাণিজ্য ঘাটতি হচ্ছে। এখন এটি কমাতে হলে রফতানি বাড়াতে হবে; এর কোনো বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, ‘দেশে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এবং আগামীতে হবে। তার মানে আমদানি বাড়বেই; এটি কমানোর কোনো উপায় নেই। তবে সঠিক নিয়মে আমদানি হলে ব্যয় অনেকটা কমে আসবে।’

আমদানির নামে অর্থপাচার হচ্ছে কিনা সন্দেহ প্রকাশ করে প্রবীণ এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বর্তমানে আমদানি তুলনামূলক বেড়েছে। এটি যদি মূলধনী যন্ত্রপাতি বা পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল হয়ে থাকে তাহলে ভালো। তবে যে হারে আমদানি ব্যয় বেড়েছে সেই হারে দেশে বিনিয়োগ বাড়েনি। তাই আমদানির নামে অর্থপাচার হচ্ছে কিনা তা সংশ্লিষ্টদের খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...