পিবিএ,মৌলভীবাজার: বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতিকে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রস্তুতি বলা চলে । প্রস্তুতি দূর্বল কিংবা যুদ্ধের হাতিয়ার ভোতা হলে তোমাদের চান্স পাওয়া কঠিন হবে। তাই এই বিষয়ের উপর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে স্টুডেন্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের আয়োজনে এক বিশেষ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৬ মে) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে এইচ এস সি পরীক্ষার্থীদের সামনে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া ১০জন শিক্ষার্থী তাদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিভিন্ন কলা কৌশল বলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া নিয়ে একেক জনের একেক অভিজ্ঞতা শুনে মনে হয়েছিলো এক একটি ছোট গল্প।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে নিচে একেক জনের একেক অভিজ্ঞতা ও তাদের প্রস্তুতি কেমন ছিলো তা তুলে ধরা হলো, এগুলো যে কোন শিক্ষার্থীদের তাদের জীবনে লেখাপড়ায় অনেক সাহায্য হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ ব্যাচের ২য় বর্ষের ছাত্র স্বাধীন আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি নিয়ে বলেন, বিজ্ঞানী আইনস্টনের যে মাথা আছে ঠিক তেমনি আমাদেরও আছে।
কিন্তু আমরা আমাদেরে মেধাটাকে কাজে লাগাই না। তাই নিজের মেধাটাকে কাজে লাগিয়ে একটু মন দিয়ে লেখাপড়া করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া সহজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ ব্যাচের ২য় বর্ষের ছাত্র এসএম আলম বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার আগ পর্যন্ত সময় পাওয়া যায় মাত্র তিন মাস।
এই সময়টুকু প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিন মাস সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। এই তিন মাস সময় শুধুই পড়তে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ ব্যাচের ২য় বর্ষের ছাত্র মনোয়ার হোসেন বলেন, পাবলিক পরীক্ষা আর ভর্তি পরীক্ষা এক নয়, পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের কোন সীমাবদ্ধতা নেই। ভর্তি পরীক্ষায় একটি নির্দিষ্ট নম্বরের ও শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা যাচাই করা হয়।
ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করার সাথে সাথে ভালো নম্বর তুলতে হয় এবং এখানে মেধা তালিকায় যারা এগিয়ে থাকে তারাই চান্স পায়। তাই তোমরা কখনও পাবলিক পরীক্ষা ও ভর্তি পরীক্ষা এক ধরে নিবে না। পাবলিক পরীক্ষা সফলতায় অতি আনন্দিত হয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অবহেলা করলে সফলতার পরিবর্তে ব্যর্থতা সৃষ্টি হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ ব্যাচের ২য় বর্ষের ছাত্রী পূজা রানী কুন্ড বলেন, এইচ এসএসসি পরীক্ষার পর পরই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে হবে। একটু মন দিয়ে পূর্বের ক্লাসের বইগুরো একটু ভাল করে ঘাটাঘাটি করলে আর মনোযোগ সহকারে লেখাপড়া করে শতভাগ প্রিপারেশন নিলেই পরীক্ষায় পাশ করা সহজ হবে।
চট্ট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ২০১৭-১৮ ব্যাচের ২য় বর্ষের ছাত্র সুমন পাল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে নিজের মেধাটাই যথেষ্ট। আমার মতে বেসিক নলেজ, কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা ও ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় সফলতা অর্জন করা যায়। বেসিক নলেজ যা তোমরা আগে থেকে নিয়ে এসেছ। কঠোর পরিশ্রম যা তোমাদের এই তিন মাস করতে হবে। সর্বশেষ হচ্ছে তোমার ভাগ্য। তাই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি ভালো করার জন্য এই তিনটি বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ ব্যাচের ২য় বর্ষের ছাত্র আজিজুর রহমান জাফর বলেন, আমার জীবনে তেমন ভাল করে লেখাপড়া করি নাই। কিন্তু যখন দেখলাম এইচ এসসিতে একটু ভাল করে পড়ে ভাল রেজাল্ট করতে পারলাম তখন মনের মনে ইচ্ছা জাগলো আর স্বপ্ন দেখলাম যে আমিও পারবো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে।
এইচ এসসি পরীক্ষার পর সব বাদ দিয়ে তিন মাস ভাল করে একটু লেখাপড়া করলাম বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেয়ার পর দেখলাম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সুযোগ হয়েছে। তাই আমি বলবো যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাও একটু মন দিয়ে পড়লেই সহজ হবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ২০১৮-১৯ ব্যাচের ১ম বর্ষের ছাত্র প্রীতম রায় বলেন, আমি ছোট থেকেই লেখাপড়ায় তেমন মনযোগী ছিলাম না। এসএসসি ও এইচ এসসি পরীক্ষা দিয়েছি তাও তেমন ভাল করে পড়ি নাই শুধু পরীক্ষার আগে কয়েক মাস একটু মন দিয়ে লেখাপড়া করেছি। আর চেষ্টা করে মনের মধ্যে সাহস রেখে একটু মনযোগ দিয়েছি।
আমার কাছে মনে হয়েছিল যে আমি যদি আরও ভালো করে পড়ি তাহলে আমিও পারবো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে। সব বাদ দিয়ে দিন রাত পরিশ্রম করে এইচএসসি শেষে তিন মাস সব বাদ দিয়ে লেখাপড়া শুরু করলাম আর মনের মধ্যে জেদ তৈরী করলাম। যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবই। সব শেষে আমি রাজশহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চান্স পেলাম। আমি বলবো যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে একটু মনযোগ দিয়ে পড়লেই যথেষ্ট।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জাপানিজ ইস্টাডি বিভাগের ২০১৮-১৯ ব্যাচের ১ম বর্ষের ছাত্র ইকবাল মাহি বলেন, মা, বাবার অনেক স্বপ্ন ছিলো আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বো। সে স্বপ্ন পূরনের লক্ষ্যে আমি এইচএসসি পরীক্ষার পর মনযোগ দিয়ে লেখাপড়া শুরু করি। আমার মতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে হলে নিজের মেধাটাকে কাজে লাগিয়ে একটু মনযোগী হলেই কাজে আসবে। আর অন্য কোথাও কোচিং করার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা অধ্যয়নরত আছেন তাদের একটু পরামর্শ নিয়ে পড়লেই ভাল ফলাফল আসবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ২০১৮-১৯ ব্যাচের ১ম বর্ষের ছাত্র জয়দ্বীপ দাস বলেন, গতানুগতিক পড়াশোনার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি আলাদা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কোচিং করে বা প্রাইভেট টিউটরদের কাছে পড়েন। অনেকে কোচিং না করেও ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পান।
তবে সবচেয়ে বড় কথা, ভর্তি পরীক্ষায় সফল হতে একটি ভালো গাইডলাইন অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। তা না হলে প্রস্তুতিতে বড় রকমের ঘাটতি থেকে যায়। চট্ট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আই আর বিভাগের ২০১৮-১৯ ব্যাচের ১ম বর্ষের ছাত্র মো: নাইম বলেন, নিজের সামর্থের যাচাই করে লক্ষ্য ঠিক করা উচিত। লক্ষ্য অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজিয়ে অগ্রসর হলে সাফল্য অর্জনের পথ সহজ হয়।
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ ব্যাচের ১ম বর্ষের ছাত্র ফারহান হাসান বলেন, লেখাপড়ার কোন বিকল্প নেই, আসলে নিজের মেধাটাকে কাজে লাগিয়ে আর চেষ্টা অব্যাহত রেখে একটু পরিশ্রম করে লেখাপড়া করলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া ব্যাপার না। তাই নিজের মেধাটাকে সঠিক সময়ে কাজে লাগানো দায়িত্ব নিজের।
উল্লেখ্য যে সেমিনারে এবাবের এইচ এস সি প্রায় অর্ধ শতাধিক পরীক্ষার্থীদের সামনে শ্রীমঙ্গলের দশজন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী তাদের গাইড লাইন দেন। যা অবশ্যই যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার স্বপ্ন দেখেন তাদের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজে আসবে।
পিবিএ/টিপি/আরআই