পিবিএ,চাঁদপুর: দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। ঈদকে সামনে রেখে চাঁদপুরের বিভিন্ন কারখানায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি হচ্ছে সেমাই। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে নোংরা পরিবেশে কাজ করছে কারিগররা। অস্বাস্থ্যকর ও মানহীণ এসব সেমাই ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন জায়গায়।
চাঁদপুর পুরানবাজার এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখা যায়, ঘর্মাক্ত শরীর ও কোন প্রকার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ছাড়াই কারিগররা সেমাই তৈরির কাজ করে যাচ্ছে। ময়দার খামির তৈরির পাশাপাশি ফুকছে বিড়ি, সিগারেট। স্যাতস্যাতে পরিবেশ কাজ করছে কারিগররা। গরম বেশি থাকায় শরীর থেকে প্রচুর পরিমানে ঘাম বের হয়। যার অনেকটাই মিশছে সেমাই তৈরির ময়দার খামিরে।
গোয়াল ঘরের পাশেই তৈরি করা হয়েছে অনেক কারখানা। গরুর গরু-ছাগলসহ বিভিন্ন প্রাণী যেকোন সময় ঢুকে পড়ছে কারখানায়। নিম্নমানের ময়দা দিয়ে তৈরি করা এসব সেমাই ভাজা হচ্ছে দীর্ঘদিন ব্যবহৃত পাম ওয়েল দিয়ে। কোন প্রকার ঢাকনা ছাড়াই রেখে দেওয়া হচ্ছে খোলা স্থানে। তৈরিকৃত এসব সেমাই খেয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকির আসঙ্কায় রয়েছে সাধারণ লোকজন।
প্রতিদিন চাঁদপুরে বিভিন্ন কারখানায় তৈরি হচ্ছে প্রায় ৫০ মণ সেমাই। এসব সেমাই চরা লসহ চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবং পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হচ্ছে। ঈদের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে চাহিদা বাড়ছে সেমাই এর। ঈদের আগে সেমাই তৈরি আরো বৃদ্ধি পাবে বলে জানান কারখানা মালিকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই জন সেমাই তৈরির কারিগর জানান, সাধারণ সময়ের চেয়ে ঈদকে ঘিরে সেমাই এর চাহিদা বৃদ্ধি পায় কয়েকগুন বেশি। বাড়তি চাহিদা পূরনে দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে তাদের। সেমাই তৈরির পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হলেও তারা চেষ্টা করনে পরিস্কার পরিচ্ছন্নভাবে কাজ করতে। শরীরের ঘাম যথাসম্ভব মুছে কাজ করার চেষ্টা করি।
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কথা স্বীকার করে নিয়ে পুরানবাজারের পাঁচ তারা সেমাই কারখানার মালিক মনসুর মিজি ও মিম লাচ্ছা সেমাই কারখানার ম্যানেজার ইউসুফ তালুকদার বলেন, আমারা চেষ্টা করি মানসম্মতভাবে সেমাই তৈরি করতে। কিন্তু বর্তমানে গরম বেশি পড়ায় কারিগররা হাত গ্লাভস, মুখের মাক্স ব্যবহার করছে না। তারা বলেন, একটি ছোট জায়গায় ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক কাজ করলে কিছুটা ময়লা হবেই। তবে সেমাই এর মান আরো ভালো করতে কাজ করবো।
চাঁদপুর জেলা কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সাধারণ সম্পাদক মোশারেফ হোসেন বলেন, অসাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরা করা কোন ভাবেই উচিৎ নয়। ঈদকে সামনে রেখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি মুনাফার লোভে নোংরা পরিবেশে মানহীণ সেমাই তৈরি করে। মানহীণ এসব সেমাই খেয়ে মানুষ উদরাময়সহ বিভিন্ন পেটের পীড়ায় ভুগছে। কঠোর হস্তে এই সব কারখান বন্ধ করতে আমি প্রশাসনের নিকট দাবি জানাই।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট (এডিএম) আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান বলেন, রমজানের শুরু থেকেই সারা দেশব্যাপী ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের চাঁদপুরেও ভেজাল বিরোধী অভিযান চলছে। জেলার ৮ উপজেলার প্রত্যেকটিতে ১টি টিম ও জেলা প্রশাসনের আরো ২টি টিমসহ মোট ১০টি টিম প্রতিদিন ভেজাল বিরোধী অভিযান এবং বাজার মনিটরিং করছে।
আমরা সম্প্রতি অভিযোগ পেয়েছি চাঁদপুরের কিছু সেমাই কারখান নিম্নমানের উপাদান দিয়ে নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরি করছে। আমরা শীগ্রই এসব কারখানায় অভিযান চালাবো এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
পিবিএ/এসআই/আরআই