খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

পিবিএ, কুড়িগ্রাম: নানা সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চিকিৎসা কার্যক্রম। কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও রোগীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়িত। হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্সসহ জনবল সংকটে রয়েছে। ফলে সেবা নিতে আসা রোগীরা কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে জেলা সদর ও বিভাগীয় হাসপাতালে চলে যান।


রাজারহাট উপজেলা হাসপাতালটি ২০০৫ ইং জনসাধারণকে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষে সরকার অত্যাধুনিক মানের একটি এক্সরে মেশিন বরাদ্দ দেন। মেশিনটি আসার পর থেকে কয়েকদিনের মধ্যে যান্ত্রিক ক্রুটি দেখা দেয়। কর্তৃপক্ষ একাধিকবার মেশিনটি মেরামত করেও তা কাজে লাগেনি। ফলে মেশিন স্থাপনের পর থেকেই তা বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে। ইসিজি মেশিনটির একই অবস্থা। এক মাস চালু থাকলেও বন্ধ থাকে ছয় মাস।

প্রায় ৩ লাখ জনসংখ্যার অধ্যুষিত রাজারহাট উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা স্থল ৫০শয্যা বিশিষ্ট এই সরকারি হাসপাতালটি। সরকারি সহায়তায় স্বল্প খরচে এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন উপজেলার ৭ ইউনিয়নের নানা বয়সী মানুষজন। কিন্তু মিলছে না কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে ১৫ জন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের বিপরীতে বর্তমান আছেন মাত্র ৩ জন এবং ১৭ জন সাধারণ চিকিৎসকের বিপরীতে বর্তমান আছেন ৪ জন। অত্র হাসপাতালে অভিজ্ঞ ও সাধারণ মিলে ২৭ জন চিকিৎসকের স্থলে বর্তমান মাত্র ৭ জন চিকিৎসক রয়েছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মহিলা ওয়ার্ডে মাত্র ৭ জন ও পুরুষ ওয়ার্ডে মাত্র ১০ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য কাতরাচ্ছেন। এলাকাবাসী জানান, হাসপাতালটিতে একটি এক্সরে মেশিন দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। রোগীরা জানান,একটু পেট ব্যথা হলে যেতে হয় জেলা হাসপাতালে। সরকার বলছে, উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতাল গুলোতে ফ্রি চিকিৎসা দেয়া হয়,কই এখানে আমরা তো সেটি দেখছি না। চিকিৎসারত রোগীরা অভিযোগ করে বলেন, ২৪ ঘন্টায় ডাক্তার মাত্র ১ বার (রাউন্ড) ঘুরে যায়। এমনকি কখনও ২দিন পর ১ বার ডাক্তার (রাউন্ড) দেয়। আর বাহির হতে সব ধরনের ঔষুধ কিনতে হয়। এখানে সব ধরনের রোগের জন্য একটাই ঔষুধ ফ্রি মিলে সেটি হল প্যারাসিটামল ট্যাবলেট। তাছাড়া আর কোন ঔষুধ সহজে মিলছে না এই হাসপাতালে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভর্তিকৃত একাধিক রোগী জানান,ছোট- খাটো একটু সমস্যা দেখা দিলেই কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সঙ্গে সঙ্গেই ওই রোগীকে রেফার্ড করে দেন। অপরদিকে প্রতিদিন সকাল ৯ থেকে বেলা ২ ঘটিকা পর্যন্ত হাসপাতালের চিকিৎসকের অফিসের সামনে বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিভদের অত্যাচারে রোগী ও রোগীর সঙ্গে আসা আপনজনরা বিরক্তিকর অবস্থায় পড়ে যান। হাসপাতালের নার্স ও চিকিৎসকরা জানান, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জনবল সংকটে সেবা দিতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডাঃ আতিকুর রহমান বলেন, প্রতিদিন আসলে তিনজন মেডিকেল অফিসারের পক্ষে সেবা দেয়া খুবই কষ্টকর।

রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ এ.এইচ.এম. বোরহান-উল-ইসলাম বলেন, হাসপাতালটিতে ১৫ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও সেখানে বর্তমান রয়েছে মাত্র ৭ জন। হাসপাতালটিতে বর্হিবিভাগে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০০/৪০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। পাশাপাশি ভর্তি থেকে চিকিৎসা নেন ৪০/৫০ জন রোগী। তাই সেবা দিতে চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হয়। কুড়িগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ এস.এম .আমিনুল ইসলাম বলেন, রাজারহাট হাসপাতালটির সমস্যা নিরসন কল্পে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। আশা করছি অতি শীঘ্রই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে।

পিবিএ/আ্রআই/হক

আরও পড়ুন...