ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে প্রস্তুত হচ্ছে ৪০টি বগি

পিবিএ,সৈয়দপুর (নীলফামারী): এবারের ঈদে যাত্রীসেবায় রেলবহরে যুক্ত হচ্ছে ৪০টি বগি(ক্যারেজ)। আর এসব বগি তৈরির কাজ জোড়েশোড়ে চলছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়। ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে ২০টি বগি প্রস্তত হয়েছে এখানে। যা দ্রুত হস্তান্তর করা হবে রেলের পরিবহণ পুলে। রেলওয়ে কারখানা সুত্র জানায়, ঈদে ঘর মুখো যাত্রীদের সেবা দিতে রেলের বিভিন্ন বহরে ৪০টি বগি সংযুক্ত করণের উদ্যোগ নেয় রেলবিভাগ। অতি পুরাতন, চলাচলের অনুপযোগী এসব কোচ মেরামত করা হচ্ছে কারখানাটিতে। কারখানার ২২টি উপ-শপে এসব মেরামতের কর্মযজ্ঞে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সহস্রাধিক শ্রমিক।

ঈদে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনে প্রস্তুত হচ্ছে ৪০টি বগি
মেরামত করা হচ্ছে ট্রেনের বগি

সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরামহীন চলছে বগি মেরামত কাজ। কেউ বা ওয়েল্ডিং, কেউ বা রং, কেউ বা আসন(বসার সিট) মেরামত আবার কেউবা চাকা মেরামতে ব্যস্তে নিয়োজিত। ক্যারেজ শপের খালাশি উজ্জল বিশ্বাস জানান, এখানে বছরের অন্যান্য সময় যেভাবে কাজ হয় ওই সময়ের চেয়ে ঈদ ঘিরে বেশি ব্যস্ত থাকি আমরা। কারণ ঈদে লক্ষ্যমাত্রা আলাদা ভাবে নির্ধারণ করে দেয়া হয় আমাদের।

এজন্য নির্ধারিত সময়ের চেয়েও(অফিস টাইম) অতিরিক্ত সময় দিয়ে কাজ করি এখানে। আরেক শ্রমিক নাজমুল হাসান বলেন, রমজান মাসে আমরা কোন ছুটি ভোগ করি না। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটি থাকলেও সেটিও। আমাদের মাথায় তখন একটি চিন্তা থাকে ঈদের জন্য আমাদের এখানে তৈরি হওয়া বগিগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যাত্রীরা বাড়িতে ফিরবেন। একারণে কাজটাকে বেশি প্রাধান্য দিয়ে থাকি।

তবে শ্রমিকরা আক্ষেপ করে বলেন, লোকবল সংকট প্রকট হওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। প্রতিটি শপে প্রয়োজনের বেশির ভাগই লোক নেই। যার কারণে সময় বেশি দিতে হচ্ছে। অতিদ্রুত কারখানার জনবল সংকট পূরণ করা না হলে অনিশ্চিয়তা পড়বে প্রতিষ্ঠানটি। ক্যারেজ শপের উর্দ্ধতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বলেন, এই বিভাগে ৩৯৫জন শ্রমিকের প্রয়োজন হলেও রয়েছে মাত্র ১১৮জন।

এতকম লোকজন নিয়েও শ্রমিকরা সর্বোচ্চ শ্রম দিয়ে মেরামত কাজ করে চলেছেন। তারপরও আমরা ঈদের আগেই কোচগুলোর কাজ সম্পন্ন করে বের করে দিতে পারবো। পেইন্টিং বিভাগের ইনচার্জ সিনিয়র উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফুর রহমান, এখানে কাজ কোন বিষয় নয় কিন্তু মুল সমস্যা জনবল ঘাটতি।

যতদিন না জনবল ঘাটতি পূরণ হবে ততদিন বেগ পোহাতে হবে আমাদের। উপরন্ত যে সমস্ত শ্রমিক রয়েছেন তাদের মধ্য থেকে প্রায়ই অবসরে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে যাত্রী সেবা। ঈদ আসলেও তো কোন কথাই নেই। তখন আলাদা বিষয় হয়ে দাড়ায় আমাদের মধ্যে। একটি বগির রঙ এর কাজ সম্পন্ন করতে অন্তত নয়দিন লাগে। জনবল সংকটের কারণে ধাপে ধাপে এখন সময় লাগছে ১৩/১৪দিনের মত।

কারখানার সহকারী কর্ম ব্যবস্থাপক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, লক্ষ্য নির্ধারণ হওয়া ৪২টি বগির মধ্যে ইতোমধ্যে ২০টি বগি প্রস্তত হয়েছে। সেগুলো পরিবহন পুলে দ্রুত হস্তান্তর করা হবে।
তিনি বলেন, পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করা রেলগাড়ির যাবতীয় কাজ এই কারখানায় সম্পাদন হয়ে থাকে। তৈরি হওয়া কোচগুলো প্রথমে পার্বতীপুরে হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে চাহিদা অনুযায়ী যুক্ত করা হয় বিভিন্ন বহরে।

কারখানা সুত্র জানায়, ঈদে নীলসাগর এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, একতা, দ্রুতযান, তিতুমীর এক্সপ্রেস, বরেন্দ্র এক্সপ্রেস, সীমান্ত এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন বহরে অতিরিক্ত বগি যুক্ত করা হবে যাত্রীদের সুবিধায়। যাত্রীদের অতিরিক্ত চাপের কারণে রেল বিভাগ এটি করে থাকে প্রতি বছর।

জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা বিভাগীয় তত্বাবধায়ক জয়দুল ইসলাম জানান, পবিত্র ঈদ উল ফিতরের ছুটি হওয়ার আগেই অর্থাৎ জুনের ২তারিখের আগে এখানে প্রস্তুত হওয়া বগিগুলো হস্তান্তর করা হবে পরিবহণ পুলে।

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে শতকরা ৬৭ভাগ শ্রমিক ঘাটতি রয়েছে এছাড়া ঘাটতি রয়েছে বাজেটেও। তিনি বলেন, যান্ত্রিক ও বৈদ্যুতিক মিলে দুই বিভাগে ৩১৭১জন শ্রমিক প্রয়োজন হলেও রয়েছেন মাত্র ১০২০জন। তারপরও আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে।

জয়দুল ইসলাম বলেন, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা যাতে নির্বিঘ্নে নিরাপদে বাড়িতে ফিরে পরিবারের সাথে ঈদ উদযাপন করতে পারেন এটিই বড় পাওয়া আমাদের কাছে।

পিবিএ/জেএইচ/আরআই

আরও পড়ুন...