মোদী এবার জিতলে ধরে ফেলবেন ইন্দিরা গান্ধীর রেকর্ড

ফাইল ছবি

পিবিএ ডেস্ক: দু’হাজার ঊনিশের লোকসভা নির্বাচন শেষ হল রবিবার, ১৯ মে। এবং শেষ দফার ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরই প্রকাশিত হতে শুরু হল বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের চ্যানেল এবং সমীক্ষক সংস্থার দ্বারা হওয়া এক্সিট পোল-এর ফলাফল। প্রায় সবারই ভবিষ্যদ্বাণী — বিপুল জনরায় নিয়ে সরকারে ফিরছেন নরেন্দ্র মোদীই। কোনও কোনও চ্যানেল তো বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো আসন পেতে পারে বলেও জানিয়েছে।

ইন্দিরা বিপুল জনরায় নিয়ে জিতেছিলেন ১৯৬৭ এবং ১৯৭১ সালে যদি বিজেপি ফের এই বিপুল সংখ্যক আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসে, তাহলে মোদী ধরে ফেলবেন তাঁর পূর্বসূরি ইন্দিরা গান্ধীকে। ইন্দিরা ১৯৬৭ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসার পরে ১৯৭১ সালে ফের জেতেন একচেটিয়াভাবে। আটচল্লিশ বছর পরে দেশে কোনও নেতা/দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসতে চলেছে, যদি বুথ-ফেরত সমীক্ষার কথা সত্যি হয় আগামী ২৩ তারিখ। ১৯৬৭ সালে ইন্দিরার কংগ্রেস (তখনও অবিভক্ত) তৎকালীন সংসদের ৫২০টি আসনের মধ্যে জেতে ২৮৩টিতে। যদিও সেবারে ভারতজুড়ে বহু রাজ্যেই নেহেরু-পরবর্তী কংগ্রেস ধাক্কা খায়, কিন্তু তাও ইন্দিরা গান্ধী ‘ম্যাজিক ফিগার’ পার করতে ব্যর্থ হননি। কেন্দ্রে কংগ্রেসের আসন সংখ্যা কমলেও ইন্দিরা জেতেন একপেশেভাবেই। সেবারে দ্বিতীয় স্থানাধিকারী স্বতন্ত্র পার্টি পায় মাত্র ৪৪টি আসন (কংগ্রেস ২০১৪ সালেও পায় একই সংখ্যক আসন)।

ইন্দিরার এই জয়ের পরে তাঁর রাস্তা কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯৬৯ সালে কংগ্রেসে ভাঙন ধরে এবং দল থেকে বিতাড়িত হন নেহেরু-তনয়া। তিনি নিজের কংগ্রেস (আর)-কে নেতৃত্ব দেন এবং একটি মাস্টারস্ট্রোক দেন পরের নির্বাচনে। পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনটিকে তিনি এক বছর এগিয়ে নিয়ে এসে করেন ১৯৭১ সালে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিধানসভা নির্বাচন থেকে কেন্দ্রের নির্বাচনকে আলাদা করে (১৯৬৭ পর্যন্ত কেন্দ্রে এবং রাজ্যে একই সময়ে ভোট হত) দিয়ে ইন্দিরা দু’টির ইস্যুও আলাদা করে দেন। যার ফলে, রাজ্যস্তরের ইস্যু কেন্দ্রীয় নির্বাচনকে আর প্রভাবিত করে না। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করতে উদ্যোগী ইন্দিরার এই চাল বিফলে যায়নি। ১৯৭১ সালের নির্বাচনে ইন্দিরা ‘গরিবি হটাও’ স্লোগানকে বড় হাতিয়ার করেন। তার কয়েক বছর আগেই তিনি ব্যাঙ্কের রাষ্ট্রীয়করণ করেছেন। অর্থাৎ, পপুলিস্ট রাজনীতির তুঙ্গে উঠে তিনি দেশের মানুষের আশীর্বাদধন্য হন। একাত্তরের নির্বাচনে ইন্দিরার কংগ্রেস ৫১৮টির মধ্যে পায় ৩৫২টি আসন আর মাত্র ২৫টি আসন পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকে কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্ক্সিস্ট)। সেবারেও ইন্দিরা একটি সম্মিলিত বিরোধীপক্ষকে হারিয়েছিলেন।

একাত্তরের নির্বাচনের পরেই ইন্দিরা যুদ্ধে হারান পাকিস্তানকে এরপর, নির্বাচনে জেতার ঠিক আট মাস পরে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানকে হারিয়ে ইন্দিরা বিরোধীদের রাজনীতিও ভোঁতা করে দেন। সেই সময়ের বিরোধী নেতা অটলবিহারী বাজপেয়ীও ইন্দিরাকে “দূর্গা” বলে সম্বোধন করেছিলেন বলে খবর বেরোয়।

এবারের মোদী সরকারের বালাকোট বিমান হামলার সঙ্গে একাত্তরের ইন্দিরার একটি আবছা মিল দেখা যায়। যদিও বাংলাদেশ সেবার নির্বাচনের পরে হয়েছিল আর এবার বালাকোট নির্বাচনের আগে।

তবে ক্ষমতায় বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফেরার নিরিখে এখনও পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন নেহেরু। তিনি ১৯৫২, ১৯৫৭ এবং ১৯৬২ — এই তিনটি বছরে তাঁর দল কংগ্রেস একক ক্ষমতায় সরকার গড়ে কেন্দ্রে।

মোদী যদি দ্বিতীয়বার বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফেরেন, তাহলে তিনি আরও আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন কী না, তা সময়ই বলবে। কিন্তু তাঁর ইতিহাস গড়ার পথে যে এক্সিট পোলগুলি আপাতত সায় দিয়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

পিবিএ/এএইচ

আরও পড়ুন...