গাইবান্ধার লাল সোনা চাষিরা চরম বিপাকে

পিবিএ, গাইবান্ধা: ২০০৪ সাল থেকে গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গজারিয়ায় পুরাতন উপজেলা হেডকোয়ার্টার্স মাঠে খোলা আকাশের নিচে মরিচের হাট বসে আসছে। এই হাটে ‘লাল সোনা’ খ্যাত মরিচ বিক্রি করতে আসা প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের চাষিরা চরম বিপাকের সম্মুখিন হচ্ছে। চাষিরা হাটে খোলা আকাশের নিচে রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে তাদের কষ্টে ফলানো মরিচ বিক্রি করেন।

কিন্তু চাষিদের কষ্ট বিভিন্ন মহলের ও প্রভাবশালীসহ প্রশাসনের নজরে আসলেও এই হাট নিয়ে অনেকে অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও শেষ পর্যন্ত কোনো প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়িত হয়নি।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ফুলছড়ি উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন চরে উৎপাদিত লাল মরিচ বিক্রি করতে চাষিরা প্রতি সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার গজারিয়ায় পুরাতন উপজেলা হেডকোয়ার্টার্স মাঠে আসেন। প্রাণ, এসিআই কোম্পানির প্রতিনিধি এবং ঢাকা, বগুড়া, সান্তাহারসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে এই হাট থেকে মরিচ কিনে নিয়ে যান। প্রতি হাটে প্রায় চার’শ চাষি ৭শ থেকে এক হাজার মণ মরিচ বিক্রি করে থাকেন।

হাটে মরিচ বিক্রি করতে আসা উড়িয়ার চর কাবিলপুরের আক্কু মিয়া বলেন, সকাল ৭টা থেকেই হাট শুরু হয়। তাই প্রতি হাটের আগের রাতেই চর থেকে নৌকায় করে মরিচ নিয়ে আসতে হয়। কিন্তু হাটে রাত্রি যাপন করার কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। ফলে বাধ্য হয়ে নৌকাতেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাত পার করতে হয়।

হাটে আসা বুলবুলির চরের হোসেন আলী বলেন, হাটে কোনো ঘর বা ছাউনি নেই। হাটের সময় ঝড়-বৃষ্টি এলে মরিচের বস্তাগুলো রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। বৃষ্টিতেই সেগুলো ভিজে যায়। এই হাটে চাষিদের জন্য কোনো স্থাপনা নেই, নেই কোন প্রাকৃতিক কাজ সারার নিরাপদ ব্যবস্থা বা টয়লেট।

সাংবাদিক শাহ আলম যাদু বলেন, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় রাত্রি যাপনের সময় নানান সমস্যার সম্মুখিন হয় চাষিরা। এ সময় এই সমস্যার সুযোগটা কাজে লাগায় দালালরা। তারা চাষিদের ভুল বুঝিয়ে কম টাকায় মরিচ বিক্রি করতে বাধ্য করে।
হাট ইজারাদার মুক্তার মিয়া বলেন, চলতি বছর ৮৪ লক্ষ টাকা দিয়ে হাট ইজারা নিয়েছি। আগের জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল এই হাট পরিদর্শনে এসে তৎকালীন উপজেলা চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও গজারিয়া ইউপি চেয়ারম্যানের উপস্থিতিতে ভুট্টা ও মরিচের কেনাবেচার জন্য দুটি শেড নির্মাণ করে দেয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি এখন পর্যন্ত কেউ বাস্তবায়িত করেনি। ফলে ইজারাদরসহ ক্রেতা-বিক্রেতাদের নানা দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

ফুলছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, দেড় বছর আগে জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল ফুলছড়ির হাটে শেড নির্মাণ করার জন্য ১৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দের ঘোষণা দেন। কিন্তু তিনি বদলি হয়ে যাওয়ার পর কাজটা আর এগোয়নি। তিনি মনে করেন, এই হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের জন্য শেড নির্মাণস খুবই জরুরী। কারণ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ী এবং বড় বড় কোম্পানির লোকজনও এখানে আসে চরে উৎপাদিত লাল মরিচ কিনতে।

ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুল হালিম টলষ্টয় পিবিএ’কে বলেন, তৎকালীন জেলা প্রশাসক গৌতম চন্দ্র পাল স্যার মৌখিকভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেটা বাস্তবায়ন করা যায়নি। এখন নতুন উপজেলা পরিষদ গঠিত হয়েছে। বর্তমান উপজেলা জেলা পরিষদের সিদ্ধান্তে ওই হাটের শেড নির্মাণ করা হবে।

পিবিএ/এসএইচ/হক

আরও পড়ুন...