ঈদ প্রস্তুতি যেমন হওয়া চাই

মো: অবদুল গফুর: বার বার ফিরে আসা কথাটিকে আরবীতে বলা হয় ঈদ ৷ ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ যতবারই আসে খুশি আর আনন্দ নিয়েই আসে, তাইতো ঈদকে আমরা বলি খুশির ঈদ৷ পশ্চিমা আকাশে শাওয়ালের চাঁদ উঁকি দিতেই ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে পরে সবার মাঝে ৷ ঈদকে ঘিরে চলে নানারকম প্রস্তুতি, এক একজনের প্রস্তুতি থাকে এক একরকম ৷ বছর ঘুরা এই একটি দিনের প্রস্তুতি বা আয়োজন কেমন হওয়া উচিৎ, কেমন হলে ভাল হয়, এই ভাবনা এখন সময়ের দাবী ৷

ঈদ প্রস্তুতি যেমন হওয়া চাই

কেনাকাটার প্রস্তুতি

খুশির ঈদকে সার্থক করতে কেনাকাটার কোন বিকল্প নেই ৷ ছোট-বড় সবার মনেই ছড়িয়ে থাকে নতুন জামা-কাপর, জুতা ,কসমেটিক, ও প্রসাধনি সহ অনেক কিছু কেনার তীব্র আকর্ষন ৷ কেউ সেলাই করা কাপর পড়তে, কেওবা রেডিমেড কাপর পরতে পসন্দ করে৷ অনেকে কৃত্তিম মেহেদী নয় , গাছের প্রাকৃতিক মেহেদী পরতে পসন্দ করে তাই ঈদের আগ থেকেই নিতে হবে এইসবের প্রস্তুতি৷

খাবার আইটেমরের প্রস্তুতি

ঈদের দিন থেকে মেহমান-অতিথীর ভিড়তো থাকবেই তাই নানারকম খাবারের আয়োজন করা, এটাতো ঈদের ঐতিহ্য ৷ বিশেষ করে মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার দিয়েই শুরু হয় অতিথীয়েতা, এক সময় এসব খাবার ঘরে তৈরির প্রস্তুতি চলত আগে থেকেই, এখন সময়ের সাথে বদলে গেছে অনেক কিছুই৷
এসব আইটেমের অনেকটাই এখন কিনতে পাওয়া যায় সর্বত্র৷ তবে কিছু কিছু অাইটেম এখনো ঘরে তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া যায় যেমন, চুটকি,শেউয়াই, পায়েশ, চালের গুরার পিঠা, হালুয়া , লাউয়ের মুরম্ব ইত্যাদি৷

দাওয়াত ও বেড়ানোর প্রস্তুতি

ঈদে সাধারনত কারো বাড়ি বা ঘরে অতিথী হতে দাওয়াতের প্রয়োজন পরেনা৷ আত্বীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশি একে অন্যের মেহমান হওয়া, এটা ঈদের অন্য রকম আনন্দ ৷ তারপরও এমন কিছু আত্মীয়- স্বজন আছে, যাদের ঈদ উপলক্ষে দাওয়াত না দিলেই নয় ৷ তাই এ ব্যাপারে আগে থেকেই ভেবে রাখা প্রয়োজন৷
ঈদে নাড়ির টানে দূর গ্রামে ছুটে যাওয়া, বাবা-মা, পরিবার পরিজনের সাথে মিলে- মিশে ঈদ করার যে মজা,তার কোন তুলনাই হয়না ৷ তবে ঈদে কোন কোন আত্বীয় স্বজনের নিকট একান্তই বেড়াতে যাওয়া উচিৎ, এটাও আগে ভাগেই ভেবে রাখা প্রয়োজন ৷ এছাড়া ঈদের অবসরে পরিবার নিয়ে বিনোদন মুলক কোন স্থানে যাওয়ার থাকলে পূর্বেই তার প্রস্তুতি থাকা ভাল৷

ওরা যেন বাদ না যায়

কবি নজরুল বলেছিলেন ” সেই গরিব ইয়াতীম মিসকিনে দে যা কিছু মুফিদ৷… হ্যাঁ’ ঈদের এই আনন্দ থেকে কেও যেন বঞ্চিত থেকে না যায়, এদিকে অবস্যই খেয়াল রাখা কর্তব্য ৷ আমাদের আত্বীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশি, বা আশে- পাশে তাকালেই এমন অনেক অসহায় অসচ্ছল, গরিব, ইয়াতীম, অমাদের নজরে পরবে, যাদেরকে এই ঈদে একটি নতুন জামা, সাথে ঈদের কিছু কেনাকাটা করে দিলে তাদের মুখে হাসি ফোটবে৷ তারাও অন্য সবার মতো ঈদের খুশি উপভোগ করবে৷ ঈদের আয়োজনে তাদেরকে সাথে রাখার প্রস্তুতির বিনিময়ে আল্লাহ অবস্যই আমাদের উপর খুশি হবেন৷

যাকাত, ফিতরা

যাকাত, ফিতরা অন্যের জন্য আল্লাহর ঘোষনা কৃত নির্ধারিত হক ৷ এটা পাওনাদার ব্যাক্তিকে পৌছে দিতে কোনরকম কার্পন্য করা ঠিক হবেনা ৷ সম্পদের হিসাব করে বছরের যে কোন সময়, যাকাত পরিশোধ করা যায়৷ তবে রমাদান মাসে দিলে সওয়াব বেশি পাওয়া যেতে পারে৷ আর ফিতরা আদায় করতে হবে ঈদের নামাজের পূর্বেই ৷

ঈদের নামাজের প্রস্ততি

মুলত নামাজের মাধ্যমেই শুরু হয় ঈদের আনুষ্ঠানিকতা ৷ এর জন্য প্রয়োজন সব রকম পূর্ব প্রস্তুতি ৷ ঈদের নামজ পরা ওয়াজিব, ঈদগাহ বা কোন জুম্মা মসজিদে জামায়াতের সাথে নামাজ অাদায় করতে হবে ৷ তাই কোথায় নামাজ পড়া হবে, এটি আগেই ঠিক করে, ওখানের নামাজের সময়টা জেনে নেওয়া জরুরী ৷ যত আগে নামাজ স্থলে হাজির হওয়া যাবে সওয়াব ততো বেশি পাওয়া যাব ৷ ঈদগাহ বা মসজিদে যদি ব্যাবস্থা থাকে, নারী-পুরুষ উভয়ে ঈদের নামাজে শরিক হতে পারে ৷ রসুল (সঃ) এর সময় পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও ঈদের জামায়াতে অংশ গ্রহন করতো ৷ সবচেয়ে পসন্দের ও সুন্দর জামা-কাপর পরিধান করে, ঈদের নামাজ আদায় করা উত্তম ৷ ঈদের নামাজে যাওয়ার পূর্বে কিছু মিষ্টিমুখ করে নেওয়া সুন্নত৷ রসুল (সঃ) ঈদের নামাজ শেষে একে অপরকে জড়িয়ে গলাগলি ও মুসাফাহ্ করতে বলেছেন ৷ ঈদের নামাজে এক পথ দিয়ে যাওয়া ও অন্য পথ হয়ে ফেরা সুন্নত এবং রসুল (সঃ) ঈদের দিন সুগন্ধি ব্যবহার করতেন৷

ঈদও একটা ইবাদাত

ভুলে গেলে চলবেনা যে, ঈদ ও একটি ইবাদাত ৷ মুসলমানের প্রত্যেকটি কাজই ইবাদাত হয়, যদি ‎সে কাজটি করা হয় রসুল (সঃ) এর দেখানো নিয়ম অনুসারে৷ ঈদ ও এর ব্যাতিক্রম নয় ৷ রসুল (সঃ) তার সাহাবাদের নিয়ে যে নিয়মে খুশির ঈদ উদযাপন করেছেন, প্রত্যেকের উচিৎ সে নিয়ম অনুসরন করে, ইবাদাতের ভাবগাম্ভীর্য মাথায় রেখে ঈদ উদযাপন করা৷ এবং কোরআন হাদিস অধ্যায়ন করে রসুলের দেখানো সেইসব নিয়ম-নীতি ঈদের পূর্বেই জেনে নেওয়া ৷

ঈদে নয় অপসংস্কৃতি

ঈদ হলো একান্তই মুসলিম জাতির ধর্মিয় উৎসব ৷ যা দির্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে মুসলমানদের মাঝে উপস্থিত হয়৷ স্বাভাবিক ভাবেই এই উৎসব আয়োজনের আগা গোড়া জুড়ে থাকবে, শুধুই ইসলামী ভাব সম্পন্ন সংস্কৃতি ৷ বর্তমানে অধিকাংশ জায়গায় ঈদ উৎসব আয়োজনে যে অপসংস্কৃতির চিত্র ফোটে উঠে, তা মোটেই গ্রহনযোগ্য নয়৷ ঈদ উৎসবের আড়ালে ভিনদেশীয় অশালীন পোষাকের ছড়াছড়ি, ঈদের দিন পাড়া – মহল্লায় বড় বড় সাউন্ডবক্সে অরুচিপুর্ণ গানের মাতামাতি, ঈদ উপলক্ষে কোন কোন টিভি চ্যানেল ও প্রেক্ষাগৃহ সমুহে অর্ধনগ্ন রোমান্টিক মুভি প্রদর্শন সহ এমন অনেক অপসংস্কৃতি, আজ ঈদ উৎসবের নামে প্রবেশ করেছে মুসলিম সমাজে ৷ যার সাথে ঈদ, ইসলাম, ঈমান ও ইবাদাতের বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই৷ সুতারাং এইসব অপসংস্কৃতি নিজেরা পরিত্যাগ করা এবং এর বিরোদ্ধে সোচ্চার থাকাও ঈদ প্রস্ততির অন্যতম অংশ ৷

পিবিএ/এজি/আরআই

আরও পড়ুন...