চার্টের বাহিরে ভাড়া আদায় করলে আইনানুগ ব্যবস্থা : ডিএমপি কমিশনার

পিবিএ,ঢাকা: বিআরটিএ কর্তৃক প্রদত্ত চার্টের বাহিরে ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মালিক-শ্রমিকদের ও ড্রাইভার-হেলপারদের মধ্যে কাউকে মাদকাসক্ত বলে সন্দেহ হলে তার ডোপ টেস্ট করান। তাকে গাড়ির কাজে নিয়োগ করবে না। প্রয়োজনে পুলিশ আপনাদের সহযোগিতা করব। মাদকাসক্ত কোন লোক গাড়ির ড্রাইভার, হেলপার ও কনডাক্টর হতে পারবে না।

২৫ মে, ২০১৯ বেলা ১২টায় মহাখালী আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে আয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সংক্রান্তে মতবিনিময় সভায় একথা বলেন ডিএমপি কমিশনার মোঃ আছাদুজ্জামান মিয়া বিপিএম (বার), পিপিএম। মহাখালী বাস টার্মিনাল সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ও ঢাকা জেলা বাস মিনিবাস সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির আয়োজনে এবং ট্রাফিক উত্তর বিভাগের সার্বিক সহযোগিতায় উক্ত মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ঈদকে সামনে রেখে ডিএমপি’র পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়ে কমিশনার বলেন, কোন রকম নিরাপত্তা ঝুঁকি ছাড়ায় মহানগরীবাসী তারা পরিবার পরিজনসহ ঈদ উৎসব করবে, শপিং করবে নির্বিঘ্নে ঘুরাঘুরি করবে, তাদের নিরাপত্তাহীনতা ঘটবে না সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা পরিবহন মালিক-শ্রমিক ভাইদের সাথে মতবিনিময় করছি। সড়ক পরিবহনের শৃংখলা নিয়ে চারদিকে যেভাবে দাবী উঠেছে তা নিয়ে আমাদের মালিক-শ্রমিক ও প্রশাসনকে ভাবতে হবে। পরিবহন ব্যবস্থা যদি দীর্ঘদিন অনিয়মের মধ্যে থাকে তাহলে এই পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। যানবাহন ও সড়ক সেক্টরে একটি শৃংখলা প্রতিষ্ঠা করা একান্ত জরুরী।

অজ্ঞান পার্টি প্রতিরোধে কমিশনার বলেন, ডিএমপি’র পক্ষ থেকে ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। রোজার আগে থেকে এসব অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ করছি, তথ্য সংগ্রহ করছি এবং নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ১০০ বেশি অজ্ঞান পার্টির, চোর পার্টি, ছিনতাই পার্টি সদস্যকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। রাতদিন ২৪ ঘন্টা পোশাকে ও সাদা পোশোকে মহানগর পুলিশ সব জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে বাস টার্মিনাল, লঞ্চ ঘাট ও রেল স্টেশনে পুলিশের উপস্থিতি বৃদ্ধি করা হয়েছে। অজ্ঞান পার্টি হকার ও যাত্রী বেশে টার্মিনালে অবস্থান করে। প্রতিটি টার্মিনালে আমরা আগামীকাল থেকে অজ্ঞান পার্টি বিরোধী ডকুমেন্টরি বড় স্কিনে প্রচার করা হবে। টার্মিনাল কর্তৃপক্ষকে বলবো, তারা পরিচিত হকার ছাড়া টার্মিনালে কোন হকার প্রবেশ করতে দিবেন না। আমরা আর অজ্ঞান/মলম পার্টির খবর শুনতে চাই না।

তিনি বলেন, বাস টার্মিনালে হলুদ রেখা দেয়া হয়েছে। এই ‍রেখা পার হলে কোন গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না, তাকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যেতে হবে। গাড়ি উঠানোর জন্য যাত্রীদের ও তাদের ব্যাগ নিয়ে টানাটানি করে হয়রানি করা যাবে না।

ঈদে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া না আদায়ে সতর্ক করে কমিশনার বলেন, ঈদে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রবনতা লক্ষ করা যায়। তবে এর মাত্র অনেক কমেছে। আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে, সেই সাথে অন্য বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থাও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে কাজ করছে। বিআরটিএ কর্তৃক প্রদত্ত চার্টের বাহিরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই যেই হোক, যত ক্ষমতাশালী হোক, তার পরিচয় যাই হোক অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশকে শূন্য সহিঞ্চুতা মনোভাব নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

গাড়ি চালাতে হলে অবশ্যই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেন্স থাকার নির্দেশনা দিয়ে কমিশনার বলেন, মালিক-শ্রমিক ও ট্রাফিক পুলিশের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি নিশ্চিত করবেন, কেউ যাতে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি নিয়ে টার্মিনাল ছেড়ে যেতে না পারে। এছাড়াও প্রতিটি বাসের ফিটনেস ও ড্রাইভারের বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স চেকিং ছাড়া কোন গাড়ি টার্মিনালের বাহিরে যাবে না। চালকরা গাড়ি চালানো সময় অনেক সাবধান হয়ে গাড়ি চালাবেন। ফাঁকা রাস্তা পেয়ে এমনভাবে গাড়ি চালাবেন না যাতে কেউ গাড়ি চাপা পড়ে। কোন দুর্ঘনার জন্য ড্রাইভার এককভাবে দায়ী না। কারণ চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পারাপার, ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করে পারাপার, যত্রতত্র রাস্তা পারাপারের কারণে দুর্ঘটনার সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের সকলকে দায়িত্ব নিয়ে রাস্তা পারাপার হতে হবে। রাস্তা পারপারে জেব্রা ক্রসিং, আন্ডারপাস ও ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করুন। পথচারী ও যাত্রীরা দায়িত্বশীল আচরণ করুন, নিজে দুর্ঘটনার কারণ হবেন না।

তিনি আরো বলেন, ঢাকা শহরের প্রতিটি বাহির পথে পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশ মোতায়েন করা হবে। যদি ঢাকার বাহির পথ যানজট মুক্ত থাকে তাহলে যানজট হবে না। ঢাকা শহরে মধ্যরাত পর্যন্ত ঈদ কেনাকাটা চলছে। পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। যাতে নির্বিঘ্নে নগরবাসী নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারে।

ঈদ পরবর্তী নিরাপত্তা সম্পর্কে কমিশনার বলেন, এই ঈদে লম্বা ছুটি। শহর অনেকটা ফাঁকা হয়ে যাবে। এই ফাঁকা শহরে নাগরিকদের অনুরোধ করছি আপনার ব্যবসা বানিজ্য, বাসা বাড়িতে নিজস্ব সিকিউরিটি গার্ড রেখে যাবেন। সবাইকে ঈদে একসাথে ছুটি দিবেন না। বাকিটা আমরা আমরা পুলিশি টহল বৃদ্ধি করব, চেকপোস্ট ও তল্লাশি করে নিরাপত্তা জোরদার করব। এলাকা ভিত্তিক সিকিউরিটি গার্ডের সাথে পুলিশের সমন্বয় করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোড়ালো করা হবে।

এসময় ডিএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস্) কৃষ্ণ পদ রায় বিপিএম (বার), পিপিএম (বার), অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ পিপিএম, যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর) মোসলেহ উদ্দিন আহমদ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ উসমান আলী, মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সভাপতি হাজী আবুল কালামসহ ডিএমপি’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
পিবিএ/হক

আরও পড়ুন...