পিবিএ ডেস্ক: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত উপাচার্য হয়েছেন ১৭ জন। এর মধ্যে নেই কোনো নারীর নাম। বিগত কোনো সময়ে উপাচার্য হওয়ার দৌড়েও ছিলেন না কোনো নারী। অথচ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন প্রায় ২০০ জন নারী শিক্ষক, যারা পাঠদানের পাশাপাশি প্রশাসনিক অনেক কাজ সাবলীলভাবে করছেন। তবে বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিন আখতার চবির উপাচার্য হবেন এমন ধারণা শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। তার পাশাপাশি উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে আছেন আরও চার শিক্ষক।
তারা হলেন- কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ (বিএসইসি) কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামী এবং সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ চার উপাচার্যই একসময় উপ-উপাচার্য ছিলেন। আর তার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে শিগগিরই চবি পেতে যাচ্ছে একজন নারী উপাচার্য। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১৫ জুন।
রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায় আমাদের সময়কে বলেন, বর্তমান উপ-উপাচার্য প্রশাসনিক কাজ করতে গিয়ে তার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন। তিনি উপাচার্যের চেয়ারেও দক্ষতা দেখাবেন আশা করি। পাশাপাশি অন্য শিক্ষিকাদের মাঝে উপাচার্য পদে যেতে আগ্রহ সৃষ্টি হবে।
নাট্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নওশীন জাহান এশা বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক যোগ্য শিক্ষিকা রয়েছেন। এবার আমরা একজন নারী উপাচার্য চাই। যিনি মাতৃস্নেহে আমাদের আগলে রাখবেন। দেশের ৩৮টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ২টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী উপাচার্য এসেছেন। ফলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও একজন নারী উপাচার্য এলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে থাকা অধ্যাপক সেকান্দর চৌধুরী চবি শিক্ষক সমিতির দুবারের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। এ ছাড়া কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিনের দায়িত্বে আছেন দীর্ঘদিন ধরে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনার হেলাল উদ্দিন নিজামীও এ পদের যোগ্য মনে করছেন নিজেকে। তিনি টানা সাত বছর সফলতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে রয়েছেন। অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ টানা ১৭ বছর ছিলেন সিন্ডিকেট সদস্য। ছিলেন শাহজালাল হলের প্রভোস্ট। প্রশাসনের সব কর্মকা- তার নখদর্পণে। আর সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহামেদ দেশে-বিদেশে পরিচিত গবেষক। তার গবেষণা প্রবন্ধ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি জার্নালে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।
জানা গেছে, সব উপাচার্য প্রার্থীই নিজেদের প্রগতিশীল ও আওয়ামী ঘরানার শিক্ষক দাবি করছেন। বর্তমান উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিন আখতার একদিকে মুক্তিযোদ্ধার কন্যা, অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী। তার বাবা আফসার কামাল চৌধুরী কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।
বিশিষ্ট সমাজসেবিকা ও মানবাধিকারকর্মী জেসমিন সুলতানা পারু বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নারীর ক্ষমতায়নে অনেক কাজ করলেও নারীরা এখনো পশ্চাৎমুখী। আমি শুনেছি এবারই প্রথম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন নারীর উপাচার্য হওয়ার সুযোগ এসেছে। তিনি উপাচার্য হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অরাজকতা হ্রাস পাবে বলে আশা করি।
কথাসাহিত্যিক ফেরদৌস আরা আলিম বলেন, বর্তমানে নারীরা যোগ্যতায় কোনো অংশে কম নয়। তা ছাড়া অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পূর্বে সেখানে এক প্রকার অরাজক পরিস্থিতি ছিল, যা তার নেতৃত্বগুণে দূর করেছেন। একজন নারীবাদী লেখিকা হিসেবে আমি দৃঢ়ভাবে চাই, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও এক নারী উপাচার্য আসুন।
পিবিএ/আরআই