জুয়াবাজির ফাঁদ

 

পিবিএ ডেস্কঃ জুয়াবাজির ফাঁদে পড়ে সর্বশান্ত হচ্ছে রূপগঞ্জের যুবসমাজ। রূপগঞ্জের সর্বত্র চলছে ক্রিকেট জুয়া। টিভিতে সম্প্রচার মানেই জুয়ার মোক্ষম সুযোগ। ওয়ানডেতে যেমন, টি-২০ হলে তো কথাই নেই। এ জুয়ায় কেউ কেউ কোটিপতি হলেও এর ফাঁদে পড়ে হাজারো মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। খেলা শুরু হলে ক্লাবগুলোতে এ জুয়াবাজিতে মত্ত থাকে রূপগঞ্জের স্কুল-কলেজে পড়ার ছাত্র ও বেকার যুব সমাজ। এছাড়া রূপগঞ্জের দোকানে-দোকানে বসে লুডু-কেরামের জমজমাট আসর।

উপজেলার প্রায় ৬০০ স্পটে বসে এসব জুয়ার আসর। একেকটি আসরে আইপিএল, বিপিএল নিয়ে কম করে হলেও ১০ টাকার বাজি হয়। আর লুডু ও কেরাম নিয়ে পাঁচশ থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকার খেলা চলে। দিনে যেমন-তেমন সন্ধ্যার পর শুরু হয় চায়ের দোকানগুলোতে লুডুর আসর। এসব খেলা নিয়ে হত্যাকান্ডের ঘটনা ও অহরহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।

আনুমানিক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, রূপগঞ্জে মাসে এসব জুয়া খেলায় প্রায় ৯ কোটি টাকা হাতবদল হয়। ক্রিকেট জুয়ায় অনেক যুবক ও তরুণ নিঃস্ব হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে এসব রোধে পুলিশ কিংবা প্রশাসনের কারো কোন মাথাব্যথা নেই।

অনুসন্ধানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ বিপিএল, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগ আইপিএল, অষ্ট্রেলিয়ান প্রিমিয়ার লীগ বিগব্যাশ ঘিরে হাজার হাজার টাকার ফলাফল বাজি, ওভার বাজি, রান বাজিসহ বিভিন্ন ধরণের জুয়া খেলছে। রূপগঞ্জের বিভিন্ন ক্লাব ও চায়ের দোকানের প্রায় ২০০ স্থানে এসব জুয়া খেলা হয়। একেকটি স্পটে ১০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে লাখ টাকার বাজি চলে। সে হিসেবে ক্রিকেট লীগ চলাকালীন সময়ে ৬ কোটি টাকার খেলা হয় বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ক্রিকেট জুয়ার পাশাপাশি রূপগঞ্জে আরো দুধরণের জুয়া সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। লুডু ও কেরাম খেলাটি অলস সময় কাটানোর জন্য হলেও বর্তমানে কৌশলে এ খেলার অন্তরালে চলছ

ক্রিকেট জুয়ার পাশাপাশি রূপগঞ্জে আরো দুধরণের জুয়া সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। লুডু ও কেরাম খেলাটি অলস সময় কাটানোর জন্য হলেও বর্তমানে কৌশলে এ খেলার অন্তরালে চলছে জুয়া খেলা। রূপগঞ্জের ৪০০ চায়ের দোকানে সন্ধ্যার পর বসে এ লুডুর আসর। এসব স্পটে দিনে প্রায় ৮ লাখ টাকার খেলা চলে। যা মাসে গিয়ে দাঁড়ায় আড়াই কোটি টাকা। প্রতিটা চায়ের দোকানদার এ আসরের প্রধান কর্তা। তবে কোথাও কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বসায় এ আসর। এসব আসরে স্কুল-কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থীরা সময় কাটায়।

তেমনি একটি আসর কায়েতপাড়া ইউনিয়নের মাইলাব এলাকার আবু বক্করের চায়ের দোকান। এ দোকানে দিন-রাত সমানতালে চলে জুয়া। বাদ যায়না শুক্রবার দিনটিও। আবু বক্করের বক্তব্য, চা বেইচ্যা কয় টাকা পাই। তাই জুয়া খেলাইলে অনেক টাকা আহে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব জুয়ায় ছনেরটেক এলাকার লিটন, কায়েমশাইর এলাকার সাত্তার, রুহুল খাঁ, মাষ্টার শহিদুল, মিশুসহ হাজারো তরুণ, যুবক নিঃস্ব হয়েছেন।

দাউদপুর এলাকায় কথা হয় হাশেম আলীর সঙ্গে। তিনি পিবিএ’কে বলেন, রোজ সন্ধ্যায় বেলদী, কাজীরবাগসহ সব এলাকায়ই দোকানে দোকানে অনেক লোক একসঙ্গে টিভিতে খেলা দেখে। আসলে সবই জুয়ার আসর। তার মারফত এক জুয়াড়ীর সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঐ জুয়াড়ী বলেন, এ খেলায় ছাত্র, বেকার, ব্যবসায়ী সবাই জড়িত। এক হাজার থেকে ৫ লাখ সব অঙ্কের জুয়া হয়। ব্যক্তিগত পর্যায়েরও জুয়া হয়। আবার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে জুয়া কেনাবেচাও হয়। কেন এতে জড়ালেন? এমন প্রশ্নে তার সোজাসাপ্টা উত্তর, মুহুর্তে টাকা দ্বিগুণ করার লোভ সামলানো কঠিন। সুদে টাকা নিয়ে জুয়ায় নামার নজিরও রয়েছে।

এদিকে, যখন ক্রিকেট জুয়া থাকেনা, তখন এরা লুডু কিংবা কেরাম জুয়ায় জড়িয়ে পড়ে। সরেজমিনে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়ন, দাউদপুর ইউনিয়ন, ভোলাব ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে দেখা গেছে, দিনে যেমন-তেমন। সন্ধ্যা নামলেই এসব ইউনিয়নের গ্রামের বাজার ও চায়ের দোকানগুলোতে জমজমাট লুডুর আসর বসে। জুয়াবাজদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক চালে ছক্কা কিংবা পাঞ্জা তোলা নিয়ে বাজি হয়। প্রথমে টাকা জমা হয়। যে তুলতে পারবে সে পুরো টাকা নিয়ে নিবে। এছাড়া সাপ লুডু দিয়েও বাজি ধরা হয়। অন্য আরেকটি পদ্ধতি হচ্ছে, চারজন খেলোয়াড় খেলবে। চারজনই টাকা জমা রাখবে। যে দুজন আগে উঠবে তারা টাকা নিয়ে নিবে।

স্থানীয়রা পিবিএ’কে জানান, লুডু ও কেরাম জুয়ায়ও অনেকে নিঃস্ব হচ্ছে। এসব খেলায় ছাত্র, বেকার ও দিন মজুর বেশি বলে জানা যায়। কায়েতপাড়া গ্রামের আলীম মিয়া। সন্ধ্যা নামলেই চায়ের দোকানে এসে খেলায় বসে পড়েন। রাত গভীর হলে বাড়ি ফিরেন। তিনি বলেন, লুডু খেলে সময় কাটাই। আর একটু-আরেকটু চা-পান খাই।

রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান পিবিএ’কে বলেন, এসব বিষয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে খবর এসেছে। বেশ কিছু জায়গায় আমরা ব্যবস্থাও নিয়েছি। এখন মনে মনে যদি কেউ জুয়া খেলে সেক্ষেত্রে কি করতে পারি। তবে অভিযান অব্যাহত থাকবে।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম পিবিএ’কে বলেন, বিষয়গুলো বেশ কয়েকদিন ধরে শুনে আসছি। সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জুয়া সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। সুতরাং এ ব্যাপারে ছাড় নেই। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিবিএ/এম এস

 

আরও পড়ুন...