রংপুরে হোটেল মালিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

পিবিএ,রংপুর: র‌্যাব ও পুলিশের ভ্রাম্যমান আদালতের ভেজাল বিরোধী চলমান অভিযানে করা জরিমানা ও সাজাকে ‘ অনুমান নির্ভর জাজমেন্ট ও অস্বাভাবিক দাবি’ করে রংপুর মহানগরীতে শুরু হয়েছে হোটেল রেস্তোরা ও চাইনিজ রেস্টুরেন্টে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট। রোববার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই ধর্মঘটের কারনে বিপাকে পড়েছেন ধর্মপ্রাণ রোজাদারসহ সাধারণ মানুষ। র‌্যাব বলেছে আমরা কোন অন্যায় আবদার মানবো না।

খাবার হোটেল ও বেকারিতে র‌্যাব ও পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালতের চলমান অভিযানে করা জরিমানাকে ‘অস্বাভাবিক’ দাবি করেছে রংপুর জেলা রেস্তোরা মালিক সমিতি ও বেকারি মালিক সমিতি। এর প্রতিবাদে তারা রবিবার (২৬মে) সকালে এক যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রংপুর মহানগরীর সব হোটেল, রেস্তোরা, বেকারি, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, ফাস্ট ফুড ও মিষ্টির দোকানে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ঘোষণা দেয়। এতে সকাল ১০ টা থেকেই বন্ধ হয়ে যায় এসব দোকান।

রংপুরে হোটেল মালিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট
রংপুরে হোটেল মালিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতি, রংপুর জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল মজিদ খোকন ও বাংলাদেশ ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ফ্যাক্টরি মালিক সমিতি, রংপুর জেলা শাখার সভাপতি নুরুল হক মুন্না স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৩ মে নগরীর জুম্মাপাড়ার মিঠু হোটেলকে ২ লাখ, জলকরের ফুলকলি ব্রেড অ্যান্ড কনফেকশনারিকে ৩ লাখ, এভরিডে ফুড প্রোডাক্টসকে ১ লাখ ও সোনালি বেকারিকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের মালিক ব্যাংক ঋণ ও মহাজনের দেনার দায়ে জর্জরিত। এর ওপর এভাবে অমানবিক ও অস্বাভাবিক হারে জরিমানা করার কারনে ব্যবসায়ীরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়, হোটেল রেস্তোরা ও বেকারি ব্যবসায় ভেজাল দেয়ার কিছু নেই। আমরা কাঁচামাল ক্রয় শেষে খাদ্য প্রস্তুত করে বিক্রি করে থাকি। এতে ক্ষতিকর রং বা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হয় না। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানকে অনুমান নির্ভর জাজমেন্ট দাবি করে বলা হয়, এই অভিযান ও জরিমানা কতটুকু ন্যায় সংগত তা বিচার্য বিষয়।

ল্যাবটেস্ট ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করা কতটুকু যুক্তি সংগত বা ন্যায়সংগত? আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। এদিকে মালিক সমিতি ২৩ তারিখের যে অভিযান সম্পর্কে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঢ়ট ডেকেছে। ওই অভিযান সম্পর্কে র‌্যাব-১৩ এর কোম্পানী কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ মোতাহার হোসেন

স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে র‌্যাব-১৩, রংপুর এর সিপিএসসি ক্যাম্পের আভিযানিক দল ২২/০৫/১৯ তারিখ, রংপুর মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে র‌্যাবের ভেজাল বিরোধী অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালত কর্তৃক ০৯ (নয়) জন অসাধু ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, জরিমানা এবং জব্দকৃত মালামাল ধ্বংস করা হয়। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধ অতিরিক্ত মুনাফার লোভে রমজান মাসের বহুল ব্যবহƒত খাদ্য সামগ্রীতে বিভিন্ন ভেজাল মেশানোসহ ভোক্তা অধিকার আইন লংঘন করেছে।

এরকম একটি সংবাদের ভিত্তিতেই র‌্যাব-১৩, সিপিএসসি ওই অভিযান পরিচালনা করে। র‌্যাব সদর দপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট কর্তৃক মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাদেরকে জরিমানা ও সাজা দেয়া হয়। ভেজাল কারখানা এবং রমজান মাসে ইফতারীর খাবারে ভেজাল মেশানো মালামাল জব্দ করায় অপরাধ দমনে র‌্যাব-১৩ এর মাধ্যমে আরও একটি সাফল্য অর্জন করলো।

ধর্মঘট সম্পর্কে র‌্যাব-১৩ এর সিও অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক জানান, আমরা নিয়ম মেনে ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান পারিচালনা করছি। পবিত্র রমজান মাসে খাদ্য সামগ্রীতে বিভিন্ন ভেজাল মিশিয়ে ভোক্কা অধিকার আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। আমাদের অভিযানকে সবাই সাধুবাদ জানিয়েছে। আমরা কোন অন্যায় আবদারের সাথে আপোষ করবো না। আমাদেও অভিযান অব্যাহত থাকবে।

রংপুর জেলা হোটেল ও রেস্তোরা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ জানান, সোমবার বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সাথে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। আমাদের দাবি অভিযানের নামে অস্বাভাবিক জরিমানা বন্ধ করা না হলে আমাদের ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।

এদিকে রংপুর মহানগরীর সকল হোটেল, রেস্তোরা, বেকারি, চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, ফাস্ট ফুড ও মিষ্টির দোকান বন্ধ থাকায় ধর্মপ্রাণ রোজাদারদরা রোববার ইফতার নিয়ে মহা বিড়ম্বনায় পড়েন। যারা অফিসে এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ইফতার করেছেন তারা কোন ইফতার সামগ্রী কিনতে পারেন না। নগরীর সব জায়গাতেই রোববার এসব দোকান বন্ধ ছিল।
তবে একাধিক ভোক্তা জানিয়েছেন, খাবারে ভেজাল কোনভাবেই কাম্য নয়। তারা প্রশাসনের ভেজাল বিরোধী অভিযানকে আরও জোড়দার করার পরামর্শ দিয়েছেন।

পিবিএ/এএস/আরআই

আরও পড়ুন...