পিবিএ,কুড়িগ্রাম: ‘বাহে হামাকগুলাক কাঁইয়ো দ্যাখে না। অপিসারগুলা আইসে আর যায়। কয়বার যে মাপজোক করছে তার ইয়ত্তা নাই। এপাকে বান আসি যাবার নাগচে, এমরাগুলা কাজের কাম কিছুই করবের নাগছে না। হামারাগুলা এবারতো সউগ শ্যাষ হয়া যামো।’ এমন আর্তনাদের কথা জানালেন বৃদ্ধ সৈয়দ আলী (৬০), নুর হোসেন (৫৫), নজির হোসেন (৫৮)সহ আরও অনেকে। ভেঙে পড়া বাঁধের পাশেই তাদের বসতবাড়ী।
এবার বন্যা হলে পরিবার নিয়ে এলাকা ছাড়তে হবে তাদেরকে। ফলে খুব দুশ্চিন্তায় আছেন এই পরিবারগুলো। সেই সাথে নদী তীরবর্তী ছাটকালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভাঙনের মুখে রয়েছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের কুড়িগ্রাম-ফুলবাড়ী সড়কের সারডোব এলাকায় ২০১৭ সালে প্রলয়ংকরী বন্যায় ভেঙে যায় প্রতিরক্ষা বাঁধটি। বিলিন হয়ে যায় ৫০ থেকে ৫৫টি পরিবার। বাঁধের অপর পাড়ে এতদিন নিরাপদে অবস্থান করা পরিবারগুলো ভীষণ দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছে।
দু’বছর পাড় হয়ে গেলেও ভাঙ্গা বাঁধের অংশ সংস্কার না হওয়ায় আতংকের মধ্যে রয়েছেন ২০ গ্রামের মানুষসহ স্কুল ও বাজারের ব্যবসায়ীরা। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে এসব গ্রাম প্লাবিত হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পরবেন তারা। নদী থেকে একশ ফিট দুরত্বে অবস্থিত দ্বিতল ভবণ ছাটকালুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুর জানান, ১৯৫জন শিক্ষার্থী আমার স্কুলে পড়াশুনা করছে। এবার বড় বন্যা হলে স্কুল ভবন দুটি নদীগর্ভে বিলিন হবার উপক্রম হয়েছে। এতে সরকারের কোটি টাকা বিনষ্ট হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগে পত্র চালাচালি করেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
চায়ের দোকানদার ফয়েজ উদ্দিন (৬০) দীর্ঘশ্বাস চেপে এই প্রতিবেদককে জানান, ‘এই ব্যবসা করি ছওয়াগুলাক নিয়া কোনো মতোন বাঁচি আছি। নদী গিলি খাইলে যামো কই। হামরাওতো শ্যাষ হয়া যামো।’ সারডোব-ছাটকালোয়া এলাকার প্রাক্তন মেম্বার আশরাফ আলী জানান, গত দু’বছরের বন্যায় ধরলা নদীর তীরবতী সারোডোব ও বড়ভিটা এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের কয়েকটি স্থানে ভেঙে বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়।
পরে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে বাঁধ মেরামত করে কোনমতে চলাচল উপযোগী করা হয় বাঁধের উপরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি। এছাড়াও বাঁশের পাইলিং দিয়ে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বালির বস্তা দিয়ে সহায়তা করে। তাতেও রক্ষা পায়নি গুরুত্বপূর্ণ এই বাঁধটি। শুকনো মৌসুমে বাঁধ মেরামত না হওয়ায় আমরা ভীষন চিন্তার মধ্যে রয়েছি। এবারে বর্ষা মৌসুমে বাঁধ সংলগ্ন ছাটকালুয়া স্কুল ও ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ আশঙ্কা করছে বন্যা ও ভাঙনের কবলে পড়ার। আর এতে ফসলহানি হবার পাশাপাশি বালু জমে আবাদী জমি অনাবাদী হবার আশঙ্কা করছে এলাকার মানুষ।
চর সারডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একরামুল হক জানান, বাঁধটি মেরামত না করায় ছাটকালুয়া ও সারডোব স্কুলসহ সারডোব আরডিআরএস বাজার ও বেশকিছু ঘরবাড়ী ভাঙনে বিলিন হবার আশংকা দেখা দিয়েছে। গত দু’বছরে এলাকাবাসীসহ স্কুলের কোমলমতি শিশুরা মানববন্ধন ও সমাবেশসহ অনেক দেন দরবার করলেও বাঁধ ও সড়ক মেরামত না হওয়ায় আমরা চরম আতংকের মধ্যে রয়েছি।
এ ব্যাপারে সারডোব মৌজার ইউপি সদস্য বাহিনুর রহমান জানান, কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড বারবার বাঁধটি রক্ষার আশ্বাস দিলেও বরাদ্দ না পাবার অজুহাত দেখিয়ে তারা হাত গুটিয়ে বসে আছে। এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, সারডোবের বাঁধ মেরামতে অস্থায়ী প্রতিরক্ষার কাজ করতে ৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে পদক্ষেপ নেয় হবে। বর্ষার আগে বরাদ্দ পেলে বাঁধ মেরামত সম্ভব হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পিবিএ/এমআইবি/আরআই