জেনে নিন, কীভাবে নিজেকে সকলের কাছে প্রিয় করে তুলবেন

পিবিএ ডেস্কঃ আমরা সবাই চাই, লোকে আমাকে ভালোবাসুক, সবার আমি প্রিয় হয়ে উঠি। প্রশ্ন হল, সবার কাছে কি প্রিয় হওয়া যায়?
মানে যিনি ‘দিদি’র কাছে প্রিয়, তিনিই আবার নমো’র কাছে প্রিয় হবেন— তা সম্ভব নয়। অতএব আপনি কার কাছে প্রিয় হতে চাইছেন, সেটা বুঝে নেওয়া দরকার। ধরে নেওয়া গেল, কার কার কাছে প্রিয় হবেন, আপনি তা জানেন। ঠিক আছে। এবার দেখা যাক নিজেকে প্রিয় করে তোলার জন্য কী কী করা যেতে পারে।

প্রিয় হন, কিন্তু ব্যক্তিত্ব বিসর্জন নয়ঃ অবাক লাগতে পারে, কিন্তু প্রথম কথাটাই শুরু করবো উল্টো দিক থেকে— সকলের কাছে পছন্দের পাত্র হওয়ার জন্য ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিতে যাবেন না যেন। মানে একবারে পানির মতো হয়ে গেলেন, কোনওরকম কাঠিন্যই থাকলো না চরিত্রে— এমন যেন না হয়। প্রশ্ন হল, ব্যক্তিত্ব নষ্ট হতে চলছে, বুঝবেন কীভাবে? মানে ঠিক কোথায় নিজেকে সংযত করবেন, তা বোঝা যাবে কীভাবে? সেই বিষয়ে একবারে শেষে আলোচনা করা যাবে। আপাতত, প্রিয় হওয়ার জন্য ‘ব্যক্তিত্ব নষ্ট হতে দেওয়া চলবে না’- এই কথাটা মাথায় রাখুন। এবার ‘প্রিয়’ হয়ে ওঠার পথগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু করা যাক—

ভিন্নমত গ্রহণ করতে শিখুনঃ কারও পছন্দের মানুষ হতে হলে, ওই ব্যক্তির জীবনযাত্রা, রীতিনীতি, ধর্ম, সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধাবান হন। কারণ, একটা কথা প্রথমেই বুঝতে হবে, আপনি ছোট থেকে যে পারিবারিক পরিমণ্ডল এবং আদর্শে বড় হয়েছেন, সবাই তা হয়নি। তারও নিজস্ব চিন্তাভাবনা রয়েছে। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ধরুন আপনার হয়তো বিকেলবেলা ক্যালকাটা ক্লাবে আড্ডা দিতে ভালো লাগে। অথচ উল্টো দিকে বসা ব্যক্তি জামাল বক্সের চায়ের দোকানে স্বচ্ছন্দ্য! এখন আপনি দাবি করলেন— আড্ডা দেওয়ার সবচাইতে উৎকৃষ্ট জায়গা হল ক্যালকাটা ক্লাব! বাকি জায়গা ফালতু!
এখানেই সমস্যার বীজ। কেউ ক্যালকাটা ক্লাবে বসে আড্ডা দিতে চান না বলে তাঁকে বাকি পৃথিবীর পক্ষে ‘অস্তিত্বহীন’ ভাবার কোনও মানে হয় না। অথবা এটা ভাবারও মানে হয় না যে শুধু ক্লাবে বা নন্দনেই পৃথিবীর সেরা আড্ডাটা দেওয়া যায়! মোদ্দা বিষয়টা হল, মতামতের অমিল হতেই পারে। তাই বলে ভিন্ন মত পোষণকারীকে হেয় করে দেখার কোনও অর্থ হয় না। এই ধরনের আচরণ আপনার উন্নাসিকতাকেই নির্দেশ করে। বরং ভাবতে শিখুন, নিজের চেনাজানা জগতের সমান্তরালেও ভিন্নমত পোষণকারী মানুষ থাকে, আর সেটাই স্বাভাবিক।

মাথা ঠান্ডা রাখুনঃ কারও সঙ্গে মতামত নিয়ে বিভেদ বা অশান্তি হওয়ার উপক্রম হলে, মাথা গরম করবেন না। বরং উলটো দিক থেকে ভাবার চেষ্টা করুন। অর্থাৎ যাঁর মতামত নিয়ে ঝগড়া বাঁধার উপক্রম হচ্ছে, তাঁর দিক থেকে পুরো বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করুন। দেখবেন অন্তত একটা অবশ্যম্ভাবী অশান্তি এড়ানো যাচ্ছে।

যাঁকে-তাঁকে তুই-তোকারি নয়ঃ মানুষের অবস্থান দেখে, তাঁর প্রতি আচরণ পালটাবেন না। অর্থাৎ কেউ কোট প্যান্ট পরে থাকলে তা ‘আপনি আজ্ঞে’ করবেন, আর কেউ বাজারে বসে সব্জি বিক্রি করছে বলে তাঁকে তুই-তোকারি করা যায়, এমন ভাববেন না। মানুষকে আগে মানুষ হিসেবে সম্মান করার চেষ্টা করুন।

বিচার-বুদ্ধি কাজে লাগানঃ কোনও পরিচিত ব্যক্তি সম্পর্কে হঠাৎ নোংরা গুজব রটেছে বলেই তাঁর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে বসবেন না। বরং নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে লোকটিকে বিচার করার চেষ্টা করুন। অথবা সম্পর্কটি নিয়ে সৎ থাকতে চেষ্টা করুন, আর সোজাসুজি তাঁকে গুজবটি সম্পর্কে প্রশ্ন করুন।

পাল্টাতে শিখুনঃ আপনাদের মধ্যে যাঁরা বয়সে বড়, তাঁদের পক্ষে টিনএজারদের সঙ্গে মেলামেশা করা বেশ সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। সমস্যা হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, টিনএজাররা ট্যাব, সেলফোন-এর মতো আধুনিক গ্যাজেট নিয়ে বেশ সড়গড়।
আর ঠিক তার বিপরীত মেরুতে বয়স্ক লোকেরা আটকে থাকেন চিঠিপত্র, ডেস্কটপে! একইরকম গণ্ডগোল দেখা যায় রুচি বোধেও— জাস্টিন বিবারের সঙ্গে বিরোধ ঘটে যায় হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের!

এহেন পরিস্থিতিতে, দূরত্ব ঘোচাবার ভার আসলে বয়স্ক মানুষটির উপর বর্তায়। চেষ্টা করুন না আধুনিক গ্যাজেটগুলো নিয়ে একটু ওয়াকিবহাল থাকতে। একদিন শুনেই দেখুন না পপ-হার্ডরকের গানগুলো। একটা কথা মেনে নেওয়াটা বোধহয় ভালো, সময়টার পরিবর্তন হচ্ছে। আপনার পূর্ববর্তী প্রজন্মও কিন্তু নানা বিষয়ে আপনার প্রজন্মের সমালোচনা করেছে। তখন বোধহয় আপনিও ভেবেছিলেন— যুগের পরিবর্তন হয়। আর পরিবর্তনই একমাত্র ধ্রুবক। অতএব আজ এই সময়ে দাঁড়িয়ে নিজেকেও সেই পুরনো কথাটা ফের মনে পড়িয়ে দেওয়াটাই হল পরিণতমনস্কের পরিচয়। তবে ছোটদের কি কোনও দায়িত্বই নেই? নিশ্চয় আছে। বয়সে ছোট প্রাপ্তবয়স্কদের কাছেও সমাজের প্রত্যাশা থাকে। তাঁদেরও একটু ধৈর্য ধরা উচিত।
বড়দের সবটাই ফেলনা আর ‘ব্যাকডেটেড’ ভাবাটা বোকামো ছাড়া আর কিছুই নয়। অভিজ্ঞতার মূল্য সবসময়েই থাকে।

হাসি খুশি থাকুনঃ আর হ্যাঁ, হাসি মুখে মানুষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করুন। সকলের পছন্দের পাত্র হতে গেলে হাসির কোনও বিকল্প হয় না।

সববিছুতে হ্যাঁ নয়ঃ ঠিক, কারও পছন্দের ব্যক্তি হতে গিয়ে ভুল কথায় ‘হ্যাঁ’ মেলাবেন না। যেমন কেউ বলছেন ‘মহিলাদের বাড়ির বাইরে কাজ করা উচিত নয়’। এমন ধরনের পশ্চাদগামী মতামতে বিশ্বাস না করা সত্ত্বেও, ‘হ্যাঁ’ বলা আসলে ব্যক্তিত্বের দুর্বলতা ছাড়া আর কিছু নয়।
এছাড়া প্রিয় হতে গিয়ে অভ্যেসের বাইরে গিয়ে হুটহাট অশ্লীল ইয়ার্কি করতে যাবেন না। মোট কথা নিজের প্রজ্ঞা এবং শিক্ষা ভুলে গিয়ে এমন কিছু করবেন না, যাতে নিজের অবস্থানটাই নড়বড়ে হয়ে যায়।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...