পিবিএ,খুলনা: খুলনাসহ আশপাশের এলাকায় সুন্দরবনের খাঁটি মধুর নামে চলছে ভেজাল মধুর ব্যবসা। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সারা বছর অতি মুনাফার আশায় সুন্দরবন থেকে সংগৃহীত মধুর সঙ্গে ভেজাল মিশিয়ে তা বিক্রি করছে। ভেজাল মধু শনাক্তের সাধারণত কোনো উপায় না থাকায় ক্রেতারা তা কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।
মধু আহরণ মৌসুমে সুন্দরবন সংলগ্ন খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা, কয়রা, সাতক্ষিরার আশাশুনি, শ্যামনগর, বাগেরহাটের মোংলা, শরণখোলা এলাকায় ব্যবসায়িরা মধুর সঙ্গে চিনির সিরা ও বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে বিক্রি করে থাকে। সম্প্রতি ঈদকে টার্গেট করে স্থানীয় বাজারগুলোতে মুদি ব্যবসায়ি থেকে শুরু করে সেলুনের দোকানে পর্যন্ত মধু মজুদ করে রাখা হয়েছে। ঈদের সময় দেশের নানা স্থান থেকে সুন্দরবনে বেড়াতে আসা লোকজন সুন্দরবনের খাঁটি মধু কিনতে আগ্রহী হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রতি বছর এপ্রিল ও মে মাসে সুন্দরবন থেকে সরকারিভাবে মধু আহরণ করা হয়। সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার পর পরই স্থানীয় অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল মধুর ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ে। এ ব্যবসায়ীরা সুন্দরবনের খাঁটি মধুর সঙ্গে ভেজাল মিশিয়ে তা এ অঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে। অসাধু ব্যবসায়ী চক্রটি সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই মৌয়ালদের দাদন দেয়। দাদনবাজ ব্যবসায়ীরা বনের অভ্যন্তরে থাকা অবস্থাতেই সংগৃহীত মধুর সঙ্গে চিনির সিরা ও অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে পরে লোকালয়ে আনতে বলে দেয়। অনেক সময় বন থেকে আহরিত প্রাকৃতিক মধু লোকালয়ে এনে এর সঙ্গে চাষের মধু মেশানো হয়।
সুন্দরবন সংলগ্ন মোংলা একটি পর্যটন শহর হওয়ায় এখানে বছরের অধিকাংশ সময়ই পর্যটকদের আনাগোনা। এ সুযোগে মোংলা শহরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে সুন্দরবনের মধু বিক্রির দোকান। এসব স্থানের মুদি দোকান ও ওষুধের দোকান, ফলের দোকান, পান-সিগারেটের দোকান, বেকারির দোকান, কাপড়ের দোকান, জুতার দোকান এমনকি সেলুনে মধু বিক্রি করা হচ্ছে। সব স্থানে প্রকারভেদে কেজি প্রতি ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা দরে খাঁটি মধু বিক্রির কথা বলা হলেও অধিকাংশ দোকানে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল মধু।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন লোকালয়ে নকল মধু তৈরিতে বিভিন্ন চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। মাঝে মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালালেও বন বিভাগের এ ক্ষেত্রে তেমন তৎপরতা নেই। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার লোকজন জানান, বনে এখন আর আগের মতো মধু পাওয়া যায় না। শুরুতে গরান ও খলসী ফুলের মৌসুম এবং শেষের দিকে আসে কেঁওড়া ফুল। কিন্তু বনে গরান ও খলসী এ দুই জাতের গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ফলে মধু আহরণও হ্রাস পাচ্ছে। এ কারণে অধিক লাভের আশায় নকল মধু বানানোর সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে।
সুন্দরবনের মৎস্য ব্যবসায়ী ও দুবলা ফিশার মেন গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, সুন্দরবনের মৌয়ালদের কারও কারও বিরুদ্ধে ভেজাল মধু তৈরির অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
সুন্দরবনের বিভাগীয় প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন জানান, ভেজাল মধু তৈরির অভিযোগ তিনি শুনেছেন এবং এর প্রতিরোধে বন বিভাগের নজরদারি রয়েছে। এরই মধ্যে সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বন বিভাগের সকল কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পিবিএ/এইচআর/হক