বাবা-মার প্রতি যুলুমকে ‘না’ বলি

পিবিএ ডেস্কঃ পৃথিবীতে ধর্ম ও অধর্ম বলে দুটো জিনিস আছে।মানুষ বলে,খারাপ কাজ তোর ধর্মেও সহ্য করবে না।আবার বলে থাকে,তুমি আমার প্রতি যে অন্যায় করলে তা অধর্ম। মানে বোঝা যাচ্ছে যে,ধর্ম বলতে ভালো কিছুকে বোঝাচ্ছে অপরদিকে খারাপ কিছুকে অধর্ম বলা হচ্ছে।

দুনিয়াতে পরিপূর্ণ ধর্মের নাম ইসলাম।এটা আরশের অধিকারীর নিকট থেকে এসেছে। যিনি সকল কিছুর উপরে।যিনি সবকিছু দেখেন,শোনেন ও জানেন।
আরশের মালিক বলেন,‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি সে যেন তার পিতা-মাতার সাথে ভালো ভালো ব্যবহার করে।তার মা তাকে অতি কষ্টের সাথে পেটে ধারণ করেছে এবং প্রসব করে কষ্টের সঙ্গে।তাকে গর্ভে ধারণ করতে ও তার দুধ ছাড়াতে লাগে ত্রিশ মাস।’ (সূরা আল -আহকাফ,আয়াত-১৫)

ধর্ম মতে,বাবা-মাকে কষ্ট দেয়া কোনোভাবেই বৈধ নয়।কোনো অজুহাতেই ঠিক নয়। সন্তানের অভিযোগ থাকতে পারে,বাবা-মা আমাকে পড়াশুনা করায়নি,আমাকে সম্পদ দেয়নি,আমাকে সম্পদ কম দিয়েছে,আমার কাছে আসে না,আমার কথামতো চলে না ইত্যাদি।আর বাবা-মার উপর সন্তানের শাসনতো কোনোভাবেই চলে না।কারণ মনে রাখতে হবে,সন্তান কখনোই বাবা-মার চেয়ে বড় হতে পারে না।হতে পারে সে অনেক বড় ধর্মগুরু,গবেষক,গায়ক,শিক্ষক,ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার।

আমার বন্ধু থেকে বর্ণিত গল্পে পেয়েছি,একটা বিষয় নিয়ে সে বাবার সাথে বাদানুবাদ করছে।একপর্যায়ে তার বাবা বললো,তুমি অনেক বড় শিক্ষিত হতে পারো,কিন্তু আমার ‘বাবা’হতে পারবা না।সত্যিই তো তাই!সন্তানের বাবা হওয়া যায় কিন্তু বাবার ‘বাবা’হওয়া যায় না।অনুরুপভাবে মায়ের ক্ষেত্রেও।
সন্তান যদি একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করার পাশাপাশি পিতা-মাতার সেবাযত্ন ও উত্তম আচরণ করে; তবে সে দুনিয়া ও মৃত্যুর পর মহাসফলতা অর্জন করবে।আর যদি পিতা-মাতার সঙ্গে অসদাচরণ করে অথবা সন্তানের কোনো কাজের কারণে পিতা-মাতা অসন্তুষ্ট হন,তবে সন্তানের জন্য জাহান্নাম সুনিশ্চিত।

জান্নাত ও জাহান্নামের মহাপরিচালক বলেন-‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে,আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদাত কর না এবং পিতা-মাতার সাথে ভালো ব্যবহার কর।তাদের মধ্যে কোনো একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে পৌছে;তবে তাদেরকে ‘উহ’শব্দটিও বল না এবং ধমক দিও না এবং তাদের সঙ্গে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা বল।’(সুরা বনি ইসরাইল,আয়াত ২৩)
‘উহ’ মানে কী? একবার মনোযোগ দিয়ে ভাবুনতো,কখনো আপনি শব্দটি উচ্চারণ করেছেন কিনা? অথবা কখনো কোনো আঘাতে ‘ইশ’বলেছেন কিনা? এমনটা কখনোই হবে না যে,আপনি শব্দটির সাথে অপরিচিত।

ধরুন, কেউ আপনাকে চিমটি কাটলো।নিশ্চই আপনি উহ, আহ বা ইশ বলবেন। অথচ ব্যথাটা খানিকবাদেই চলে যায়।মানে হলো,‘উহ’শব্দের উচ্চারণটা হলো কষ্টের প্রাথমিক স্টেজ।একেবারেই নুন্যতম।এতটুকু কষ্টও বাবা-মাকে দেয়া যাবে না।এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াও মুশকিল।যাইহোক,মানুষ শয়তানের কথায় অনেক কিছুই করে থাকে।কিন্তু তা কী ক্ষমাযোগ্য নয়? অবশ্যই। বুঝতে পারার সাথে সাথেই বাবা-মার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে।তাদের সাথে যেনো কোনোভাবেই খারাপ ব্যবহার না হয়।সেজন্য নিয়ন্ত্রকারী আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে।

হাদিসে এসেছে, হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি মালিক হতে প্রেরিত দূতকে জিজ্ঞাসা করলেন, সন্তানের ওপর পিতা-মাতার হক কী? তিনি বললেন,তাঁরা উভয়েই তোমার জান্নাত অথবা জাহান্নাম।অর্থাৎ যারা বাবা-মার প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালন করবে,তারা সফলকাম।আর যারা তাদের অবাধ্যতায় লিপ্ত হবে তাদের জন্য লাঞ্ছনা।

পৃথিবীতে বাবা-মার সাথে অন্যায় করার কারণে শাস্তি পেয়েছেন এমন উদাহরণ ভরি ভরি।বাবা-মাকে মেরেছে সেও তার সন্তানের হাতে মার খেয়েছে।বাবা-মাকে খাবার দেয়নি সেও তার সন্তানের কাছ থেকে খাবার পাননি।বাবা-মাকে আচরণের মাধ্যমে কষ্ট দিয়েছে সেও তার সন্তানের আচরণে কষ্ট পেয়েছে।বাবা-মার চিকিৎসা করায়নি সেও সন্তানের কাছ থেকে সেটা পায়নি।মায়ের ভাতের পাতিলে লাথি মেরেছে,কিছুদিন পরে তার পা কাটতে হয়েছে।বাস্তবেই বাবা-মার উপর মাতবরি করা মহা অন্যায়।

তাই আসুন! বাব-মার প্রতি কখনোই অন্যায় না করি।বাবা-মার প্রতি যুলুমকে ‘না’ বলি।

পিবিএ/এমএস

আরও পড়ুন...