শেষ মুহুর্তে ঈদের কেনা কাটায় ব্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ

পিবিএ,খুলনা: খুলনায় শেষ মুহুর্তে ঈদের কেনা কাটায় ভীড় জমেছে নগরীর কম দামের বিপনিবিতানগুলোতে। বিশেষ করে ফুটপাতের দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় লেগেছে। অন্যদিকে ধনীদের মার্কেট নামে পরিচিত অভিজাত বিপনিবিতানগুলোতে তেমন ভীড় নেই। বিশেষ করে নগরীর নিউমার্কেটের দোকানগুলো এবারের ঈদে ক্রেতাশূন্য অবস্থা গেছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে তারা বেশ প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সারা বছরের লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি একটু পুঁজিও করে নিতে চেয়েছিলেন তারা। কিন্তু তাদের হতাশ করে খুলনার বিত্তবানদের বড় একটি অংশ ঈদের কেনাকাটার জন্য কলকাতামুখী হয়েছেন।

শেষ মুহুর্তে ঈদের কেনা কাটায় ব্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ
শেষ মুহুর্তে ঈদের কেনা কাটায় ব্যস্ত নিম্ন আয়ের মানুষ

খুলনা নিউ মার্কেটের জামদানি শাড়ির দোকানদার মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন-চার বছর ধরে ঈদে আমাদের ব্যবসা নেই। ঈদ এলেই সবাই কলকাতায় যান। ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়ছে।’ কলকাতায় ঈদবাজার করতে যাওয়া বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, বাইরের দেশে ঈদ এলে সব জিনিসের দাম কমে। আমাদের এখানে দাম বেড়ে যায় কয়েক গুণ। যে কারণে কলকাতায় কেনাকাটা করতে যায় মানুষ। অনেকেই ব্যাংকক যান।

কলকাতা থেকে ঈদের বাজার করে ফিরেছেন খুলনার বয়রা আবাসিক এলাকার বাসিন্দা জিয়াউল ইসলাম। তিনি বলেন ‘গত তিন বছর ঈদের বাজার কলকাতা থেকেই করছি। সেখানে দু’দিন ধরে বাজার করে যে খরচ হয়েছে, তাতে দেশে কেনাকাটা করলে এর দ্বিগুন হতো।’

নিউ মার্কেট মালিক সমিতির সভাপতি আবদুল গাফফার বিশ্বাস পিবিএকে বলেন, ‘ঈদে প্রত্যাশা অনুযায়ী বিক্রি হচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা সঠিক নিয়মে রাজস্ব দিয়ে পণ্য এনে বিক্রি করছেন। কিন্তু ক্রেতারা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কেনাকাটা করে আনছেন বাইরে থেকে। দেশের ঈদবাজার এভাবে কলকাতামুখী হয়ে গেলে ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।’

তবে ঈদ উৎসবে ক্রেতার ঘাটতি নেই নগরীর মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষের মার্কেট হিসেবে পরিচিত রেলওয়ে মার্কেট, নিক্সন মার্কেট, বড় বাজার, হ্যানিম্যান মার্কেট, মশিউর রহমান মার্কেট, এসএমএ রব মার্কেট, কাজী নজরুল ইসলাম মার্কেট এবং হকার্স মার্কেটে। এবার ফুটপাতের দোকানগুলোতে মধ্যবিত্ত পরিবারকেও দেখা যাচ্ছে পূর্বেও তুলনায় বেশি। এসব মার্কেটে দর-কষাকষি করে পোশাক কিনতে পারছে স্বল্প আয়ের মানুষ।

রিকসা চালক মিজান শেখ বলেন, ‘আগে আমাগের মতো কম আয়ের মানুষ ফুটপাতে ঈদের কেনা কাটা করতো। এখন অনেক নামী দামী মানুষও আমাগের কাতারে দেখতি পাই।’ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরীজীবি সালমা খাতুন বলেন, ‘বড় দোকানগুলোতে পোষাকের গলাকাটা দামের কারণে সব শ্রেণির মানুষ এখন হকার্স মার্কেট মুখি হয়েছে। তাছাড়া শেষ মুহুর্তে এসব দোকানগুলোতে বাহারি পোষাকের সমাহার করেছে বিক্রেতারা। দামও কম।’

রেলওয়ে মার্কেটের ফ্যাশন হাউজের মালিক আসাদ বলেন, ‘আগে এখানকার বিপণিবিতানে শুধু মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা কেনাকাটা করতেন। এ বছর সব ধরনের ক্রেতারা আসছেন। আমাদের মার্কেটে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যে কেনাকাটা করা যায়। আমরা যা দাম চাইছি, এবার অনেকেই দর-কষাকষি ছাড়াই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।’

অনেক ক্রেতা অভিযোগ করেছেন, খুলনার অভিজাত বিপনিবিতানগুলোর বিক্রেতারা ঈদ উপলক্ষে প্রতিটি পোষাকের দাম দু’তিন গুন বাড়িয়ে দেন। যে কারনে মানুষ ওই সব মার্কেট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। এসব বিপণিবিতানে প্রতিটি উৎসবে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার বলে তারা মনে করেন।

পিবিএ/এইচআর/আরআই

আরও পড়ুন...