এ দেশে ঈদ মানেই বাড়তি চাপ

মানিক মুনতাসির : সোমবার সকালে আব্দুল্লাহপুর থেকে ভিক্টর পরিবহণের বাসে উঠলাম। গন্তব্য অফিস। নামবো যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে। আমার সিটের অপর যাত্রী যাবেন গুলিস্তান। তার কাছ থেকে কন্ট্রাক্টর ভাড়া রাখল ৬০ টাকা। আমাকেও বাড়তি দিতে হল। অথচ এই দুরত্বে রেগুলার ভাড়া ৪৫ টাকা। এভাবে সবার কাছ থেকে ইচ্ছেমত ভাড়া তোলা হল। একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি আর আমি লঘু প্রতিবাদ করলাম। কিন্তু কাজ হল না।

যমুনার সামনে থেকে অফিস পর্যন্ত রিক্সা ভাড়া ২৫ টাকা। রিক্সাচালক চাইল ৪০ টাকা। ৩০ টাকা দিয়ে নীরবে চলে গেলাম। রাতে বাসায় ফেরার সময় একই অভিজ্ঞতা। তার আগে অফিস শেষ করে এটিএম বুথে ঢুকলাম। টাকা তোলে বেরুনোর সময় দাড়োয়ান একটা লম্বা সালাম দিল। বুঝলাম এটার জবাব দিতে হবে টাকা দিয়ে।

এ দেশে ঈদ মানেই বাড়তি চাপ
মানিক মুনতাসির লেখক ও সাংবাদিক

৫০ টাকা দিলাম কিন্তু তার মনপুত হল না। বলল স্যার আপনি তো এমনিতেই ২০/৫০ টাকা দেন। ঈদ উপলক্ষে একটু বাড়ায় দেন। দিলাম। মনে মনে ভাবলাম আমাকে তো কেউ বাড়িয়ে দেয়নি। বোঝা গেল আমাদের এ দেশে ঈদ মানে বাড়তি রিক্সা ভাড়া, অতিরিক্ত বাস ভাড়া। অতিরিক্ত ভেজাল। এমন কি দুধ সেমাইতেও বাড়তি ভেজাল। বাড়তি মুনাফা। বাড়তি ঘুষ। বাড়তি চাদাবাজি।

আড়ংয়ের মত নামিদামি প্রতিষ্ঠানও মুল্য জালিয়াতি করে গ্রাহক ঠকায়। যা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। রাতে শুনলাম ভোক্তা অধিকারের ঐ কর্মকর্তাকে নাকি বদলি করা হয়েছে। এটাও হয়তো তার বাড়তি সাহসের বাড়তি প্রাপ্তি। ঈদের আগে বদলি সে তো অবশ্যই বাড়তি প্রাপ্তি।। ছোট বেলায় পারিবারিকভাবে আরবি শিখেছিলাম তাবলীগ জামাআতের বদৌলতে। তখন জেনেছিলাম।

রোজা শুধুই আল্লাহর জন্য আর এর প্রতিদান তিনি নিজ হাতে দেবেন। অথাৎ এ মাসে বাড়তি সুবিধার পথ আল্লাহই দেখিয়ে দিয়েছেন। তিন্তু আমরা কি সেটা ফলো করি??? বিশ্বের প্রায় সব দেশে ঈদ, বড়িদনে সব জিনিসের দাম কমে। এখানে কিন্তু দ্বিগুণ/তিনগুণ বাড়ে।

আর ভোগান্তি বাড়ে কয়েক হাজার গুণ। এই ধরুন পানি নাই গ্যাস নাই বিদ্যুৎ নাই। থাকলেও পানিতে গন্ধ। গ্যাসে চাপ নেই। বিদ্যুতে ভোল্টেজ নেই। আর গ্রামে তো বিদ্যুৎ যায় না। মাঝে মাঝে আসে। এমন কি সেহরিতেও লোডশেডিং। অথচ উৎপাদনে নতুন নতুন রেকর্ড হয়। সেটাও হয়তো বাড়তি চাপাবাজি।

কথায় কথায় আমরা আমেরিকা, কানাডা, সিংগাপুর, জাপান হতে চাই। অথচ সে অনুপাতে কি কাজ করি। হয়তো করি কিংবা নয়। সেটাও হয়তো বাড়তি চাহিদা/প্রত্যাশা। কথায় বলে সাধ আর সাধ্যের মিল থাকতে হয়। নইলে না পাওয়ার অনলে পুড়তে হয়।

এক শ্রেণীর মানুষ তিন টাকার শাড়ি, লুংগি, সেমাই কিনে দুজনকে বিলি করে ছবি প্রচার করে। ফোন কোম্পানিগুলি পথশিশুদের ইফতার আর নতুন কাপড় বিতরনের নামে বাহবা নেয়। অথচ পথশিশুদের পেছনে যা খরচা করে তার অনেক গুণ বেশি ব্যয় করে সে অনুষ্ঠানের প্রচারের জন্য। এটাও একটা বাড়তি সুবিধা বলতে পারেন। কারণ বেশি মানুষ জানল। আমরা কত মানবিক।

রোজার মাসেও ধর্ষণকারীর যৌনাংগ স্থির থাকে না। থাকবেই বা কেন? কোন কিছুই তো থেমে থাকে না।সরকারি কর্মচারি ঘুষ খায়। বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়। জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। খুন/ ছিনতাই সবই চলে। তাহলে ধর্ষণকারী থামবে কেন?

আমরা উন্নত হচ্ছি সেটারও প্রচার বাড়ে। প্রতিদিন ইফতারি অনুষ্ঠান। প্রতিদিন একই বক্তব্য। আয় বাড়ে। দারিদ্রও বাড়ে। অন্যদিকে আবার লিচু কিনে দিতে না পেরে বাবা তার সন্তানকে হত্যা করে। এটা কি অভাবের তারণা নাকি বিবেকের লোপ তা আল্লাহই জানে।

ময়লার ড্রেনে টয়লটে এমন কি রাস্তার ধারে পড়ে থাকে নবজাতক। তাহলে কোথায় সিয়াম সাধনা। আর কোথায় সংযম। যাক গে সব বেশির দেশে যদি বেশি মানবিকতা থাকতো তবেই হয়তো মানুষ হতাম। হচ্ছি বেশি বেশি অমানুষ। সেটাও তো বেশি / বাড়তি তাই নয় কি???

 

পিবিএ/এএ/আরআই

আরও পড়ুন...