পিবিএ,সিলেট: ঈদুল ফিতর উদযাপনের পুর্বেই সুনামগঞ্জের তাহিরপুর জামালগঞ্জ বিশ্বম্ভরপুরে পৃথক তিন ঘটনায় তিন ব্যাক্তি হত্যাকান্ডের শিকার হলেন। বৃহস্পতিবার (৬জুন) সকাল পর্যন্ত এসব হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানা পুলিশ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে।
নিহতরা হলেন, তাহিরপুর উপজেলার রসুলপুর টুকেরগাঁও গ্রামের সাজিদ মিয়ার ছেলে তাদির মিয়া (২০),জামালগঞ্জ উপজেলার পুর্ব লম্বাবাক গ্রামের ইউসুফ আলীর ছেলে সুমন মিয়া (২৫) , বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার পলাশ গ্রামের সড়কপাড়ার মৃত দিদার মিয়ার ছেলে শুক্কুর আলী (৫৫)। বৃহস্পতিবার (৬জুন) জেলার তিন থানার ওসি হত্যাকান্ডের ঘটনাগুলো নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, সুদের দেয়া লাভের টাকা না পেয়ে জেলার তাহিরপুরে তাদির মিয়া (২০) কে কাঠের বর্গা দিয়ে পিঠিয়ে হত্যা করেছে দাদন ব্যবসায়ি ও তার পরিবার এবং স্বজনরা। বৃহস্পতিবার (৬জুন) নিহতের বড় চাচা ও ঋণ গ্রহিতা শাহজাহান মিয়া জানান, উপজেলার বড়দল দক্ষিণ ইউনিয়নের একাধিক দাদন ব্যবসায়ি (সুদ)’র গ্রাম খ্যাত রসুলপুর টুকেরগাঁও’র বজলুল হকের ছেলে হাদিস মিয়াকে ৪০ হাজার আসল টাকা ছয় মাস আগে পরিশোধের পর লাভের ৩০ হাজার টাকা দাবি করায় মঙ্গলবার দুপুরে আমার ভাতিজার সাথে কথাকাটাকাটি হয়।
পরে সন্ধায় হাদিস তার স্ত্রী ছেলে-মেয়ে ও ভাতিজা সহ ৬ থেকে ৭ জন সংঘবদ্ধ হয়ে আমার বাড়িতে এসে কাঠের বর্গা দিয়ে মাথায় ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে তাদির মিয়াকে আহত করে ফেলে রেখে যায়। বুধবার ভোরবেলা চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদির মিয়া মারা যান।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৬জুন) উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মৃত ছায়েদ মিয়ার ছেলে সোনা মিয়া তার ছেলে আরিফ মিয়া ও সোনা মিয়ার সহোদর খুর্শিদ মিয়া,মৃত মতি মিয়ার ছেলে রফিক মিয়াকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।, বৃহস্পতিবার (৬জুন) তাহিরপুর থানার ওসি মো. আতিকুর রহমান পিবিএকে বলেন, এ হত্যাকান্ডে জড়িত অন্যদের গ্রেফতারে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মায়ের নিকট নতুন জামা কাপড় কেনা ও হাত খরচের টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে জেলার জামালগঞ্জে সহোদর ছোট ভাইয়ের হাতে মঙ্গলবার বিকেলে নিহত হলেন সুমন মিয়া (২৫)।
নিহহের পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানান, উপজেলার পূর্ব লম্বাবাক গ্রামের ইউসুফ আলীর স্ত্রীর নিকট তাদের ছোট ছেলে মামুন মিয়া (২০) মঙ্গলবার বিকেলে নিজ বাড়িতে ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নতুন জামা কাপড় কেনা ও হাত খরচের টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে বড় ভাই সুমনের মাথায় মামুন আঘাত করলে তিনি রক্তার্থ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
সুমনকে জামালগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক রাতে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বৃৃহস্পতিবার (৬জুন) জামালগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ সাইফুল আলম পিবিএকে বলেন, নিহতের মা বাদী হয়ে ঘাতক ছোট ছেলে মামুনের বিরুদ্ধে বুধবার রাতে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। আসামী পলাতক রয়েছে বলেও জানান ওসি। অপরদিকে ছাগল আটকে রাখার জের ধরে জেলার বিশ্বম্ভরপুরে ভাতিজার বল্লমের আঘাঁতে নির্মম ভাবে খুন হন শুক্কুর আলী (৫৫) নামের এক ব্যাক্তি।
এ ঘটনায় পুলিশ উপজেলার পলাশগাঁও সড়ক পাড়ার আবদুল আজিজের ছেলে চাচার ঘাতক সালা উদ্দিন (২১) কে গ্রেফতার করেছে। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার পলাশগাঁও সড়ক পাড়ায় ও মঙ্গলবার বিকেলে মৃত দিদার মিয়ার ছেলে আবদুল আজিজ ও তারই সহোদর ছোট ভাই শুক্কুর আলীর পরিবারের শিশুদের মধ্যে ঝগড়াঝাটি হয়। এক পর্যায়ে আজিজের এক ছোট ছেলের মাথা ফাটিয়ে দেয় শূক্কুর আলীর অপর এক ছোট ছেলে।
ছেলের মাথা ফাটানোর শোধ নিতে আবদুল আজিজের পরিবারের লোকজন সন্ধায় শুক্কুর আলীর একটি ছাগল বাড়িতে নিয়ে আটকে রাখে। এরপর শুক্কুর আলীর পরিবারের লোকজন ছাগল ছাড়িয়ে আনতে গেলে আজিজের বড় ছেলে পান দোকানদার সালাউদ্দিন লাঠি দিয়ে তাদের পেঠাতে গেলে লাঠির আঘাতে তার নিজের মায়ের মাথা ফেঁটে যায়।
এদিকে শুক্কুর আলী পলাশ বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির পাশে সড়কের উপর সালাউদ্দিন ফের ধারালো বল্লম দিয়ে চাচার তলপেটে উপর্যুপরী ঘাঁ দিয়ে রক্তার্থ জখম করে ফেলে রাখে। আশংকাজনক অবস্থায় রাতে সুনামগঞ্জ সদর মডেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে পুলিশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে রাতেই ঘাতক ছেলে সালাউদ্দিনকে আটক করে। বৃৃহস্পতিবার (৬জুন) বিশ্বম্ভরপুর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান পিবিএকে জানান, এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় ঘটনার রাতেই একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পিবিএ/আরআই