পিবিএ,বরিশাল: ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের (রিপ্রেজেন্টেটিভ) ছুরি দিয়ে কুপিয়ে মাটিয়ে শুইয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেনের বিরুদ্ধে।
সোমবার (১০জুন) সকাল ৯টার দিকে হাসপাতালের এক কর্মচারীর দুর্ব্যবহারের ঘটনায় রিপ্রেজেন্টেটিভদের সংগঠন ‘ফারিয়া’র নেতারা পরিচালকের কাছে অভিযোগ নিয়ে গেলে তিনি চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী মামুনকে ওই নির্দেশ দেন।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিক্রয় প্রতিনিধি মো. মেজবাউদ্দিন বলেন, সকালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বহির্বিভাগের চিকিৎসক ফালাহ আল দ্বীনকে ফটকে নামিয়ে দিয়ে মোটরসাইকেল ঘুরাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় কর্মচারী মামুন পরিচালকের বরাত দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যেতে মরিয়া হয়ে ওঠেন।
এ সময় মেসবাহ তার অপরাধের বিষয়ে জানতে চাইলে মামুন তার শার্টের কলার ধরে টানাটানি করেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
মো. মেজবাউদ্দিন বলেন, এ ঘটনার পর ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সংগঠন ফারিয়ার নেতারা হাসপাতালের পরিচালকের কাছে যান। হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা লাঠি নিয়ে ঘুরে বেড়ায় এবং শিক্ষিত মানুষদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন, ফারিয়ার নেতাদের এমন অভিযোগ শুনেই ক্ষেপে যান পরিচালক।
স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের এই বিক্রয় প্রতিনিধির ভাষ্যমতে, ‘এ সময় মামুনের উপস্থিতিতে পরিচালক বলেন, “লাঠি নয়, এরপর ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। যাকে সামনে পাবে, তাকেই কোপাবে।” মামুনের উদ্দেশে হাসপাতালের পরিচালক আর বলেন, “কী পারবি না কোপাইতে?” তখন “পারমু স্যার” বলে মামুন হ্যাঁ সূচক সম্মতি দেন। এরপর থেকে কাউকে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে পেলে কুপিয়ে মাটিতে শুইয়ে দিতে হাসপাতালের পরিচালক নির্দেশ দেন।”
মেজবাউদ্দিন বলেন, ‘আমার যদি কোনো অন্যায় হয় তাহলে কোম্পানি ব্যবস্থা নেবে। আর যদি হাসপাতালের কর্মচারী কোনো অন্যায় করে তাহলে তার বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সেখানে পরিচালক আমাদের কোনো কথাই শুনলেন না। উল্টো আমাদের কোপানোর নির্দেশ দেন কর্মচারীকে।’
ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ অ্যাসোসিয়েশনের (ফারিয়া) বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি রেনেটার জোনাল ম্যানেজার শহীদ হোসেন মুন্না বলেন, ‘আমাদের একজন সদস্য লাঞ্ছিত হওয়ার পর আমরা জরুরি বৈঠক করেছি। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। আগামী বুধবার ফের ফারিয়ার সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভার পরে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
ফারিয়া সূত্রে জানা গেছে, ঈদের এক সপ্তাহ আগে হাসপাতালের প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ইফতার করানোর জন্য ফারিয়ার নেতাদের কাছে আবদার করেছিলেন পরিচালক। ফারিয়া এই আবদার প্রত্যাখ্যান করার পর থেকেই পরিচালক ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন।
রিপ্রেজেন্টেটিভদের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, তিনি সিসি ক্যামেরায় দেখছিলেন, প্রধান গেটের সামনে কিছু রিপ্রেজেন্টেটিভ ঘুরঘুর করছেন। এরপর তিনি মামুনসহ তিনজন কর্মচারীকে তাদের ডেকে আনতে পাঠান। তার কথা বলার পরও তারা আসেনি।
শিক্ষিত হয়েও তারা তার অশিক্ষিত কর্মচারীদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচারণ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মচারী মামুন একজনের শার্টের কলার ধরেন।
প্রসঙ্গত, দুই বছর আগে হাসপাতালের বিপুল পরিমাণ সরকারি ওষুধসহ চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কোয়ার্টার থেকে মামুন ও তার মাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। এ ঘটনার পরও হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির চাকরি পান মামুন।
পিবিএ/আরআই