জেনে নিন, তেতো খাওয়ার বিস্ময়কর উপকারিতা

পিবিএ ডেস্কঃ তেতো খেয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশ্বাসী অনেকেই। চিকিৎসা শাস্ত্রে এই ধারণার ভিত্তি কতটা? বিশিষ্টদের বিশ্লেষণ শুনলেন সুমিত রায়৷ সবাই জানে, তাই মানে৷ খাবার পাতে শুরুতেই নিমপাতা, উচ্ছে কিংবা করলা – এসবই ওষুধের পরিপূরক। তেতো খাওয়া খুবই ভাল। এমনকী অনেক ডায়াবেটিস রোগীর বিশ্বাস, তেতো খেলে ব্লাড সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। সত্যিই কি বিজ্ঞানসম্মত ভিত্তি রয়েছে এই বিশ্বাসের? এদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে। তাই এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানা জরুরি।

তেতো, অথচ ভাল৷ তেতো খেতে গেলে অধিকাংশই মুখ ভেটকে ফেলেন। ছোটরা বাবা-মায়ের চোখরাঙানিতে খেতে বাধ্য হয়৷ অনেকের আবার বয়স বাড়লেও তেতো খেতে মোটেই ইচ্ছে করে না৷ তবুও জোর করে খান। যে মুষ্টিমেয় মানুষ তেতো ভালবাসেন তাঁরা ব্যাতিক্রম। বংশানুগতভাবে চলে আসছে এই বিশ্বাস। করলা বা উচ্ছে, কালমেঘ, চিরতা, নিম খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়। হজমতন্ত্র ভাল থাকে, ত্বকের রোগ হয় না, কৃমি দূর করে৷ তেতো অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ফাংগাল, অ্যান্টি ভাইরাল গুণসমৃদ্ধ। চিরতা এবং নিমের পাতায় অ্যান্টি ক্যানসারাস গুণও রয়েছে। শরীরের যে কোনওরকম ফোলা বা আর্টিকেরিয়ার (ত্বকের একটি সমস্যা) ক্ষেত্রে চিরতা খুব কাজ দেয়। যা রটে তার কিছুটা তো বটেই।

মানা হয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেঃ আয়ুর্বেদ শাস্ত্রের মতে শরীরে যে কোনও রোগ শরীরের বাত, পিত্ত এবং কফের সমতা বৃদ্ধি হয়। যে কোনও মানুষের ডায়াবেটিস তার কফের সমতা হারিয়ে ফেললে প্রকাশ পায়। শরীরের কফ ভাগে সমতা আনে তেতো খাদ্য – যেমন কালমেঘ, উচ্ছে/করলার রস, নিম পাতা/নিমের ছাল, চিরতা/ মেথি ইত্যাদি। সেই কারণেই বলা যায় যে, তেতো খেলে রোগীর সুগার নিয়ন্ত্রণে আসে। এমন অনেক রোগী আছেন যাদের ব্লাড সুগার লেভেল কমানো সম্ভব হয়েছে তেতো খাদ্য খাইয়ে। সুস্থ থাকতে সব চেয়ে ভাল হয় যদি এই তেতো খাদ্যগুলির কাঁচা রস খাওয়া হয়। গোটা না খেয়ে সেটাকে পিষে তার নির্যাস খাওয়াই সবচেয়ে বেশি কার্যকরী। যে রোগীর ব্লাড সুগার মাত্রা খুব বেশি, তিনি যদি প্রতিদিন ৪০ মিলি এগুলির মধ্যে যে কোনও একটির বা সব কটির রস করে এক গ্লাস জলের সঙ্গে খান তবে উপকার অনেক। যাঁদের ব্লাড সুগার লেভেল বর্ডারলাইনে তাঁরাও ২০ মিলি তেতোর রস এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেতে পারে। সাধারণ সুস্থ মানুষ যে কোনও রূপে এই তেতো খাদ্যগুলি খেতে পারেন। কিন্তু একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে তিন মাস টানা খাওয়ার পর ১২-১৫ দিন খাওয়া বন্ধ করতে হবে। বাজার চলতি যে জুস পাওয়া যায়, সেগুলি না খাওয়াই ভাল। এতে সোডিয়াম বেনজোইট মেশানো থাকে ফলে এগুলির কার্যকারিতা একটু হলেও কম হবে। নিম পাতা সকাল বেলা খালি পেটে ৭-৮ চিবিয়ে খেয়ে একটু জল খেয়ে নিন। মেথি ব্লাড সুগার লেভেল কমানোতে খুবই কার্যকরী, ১০ গ্রাম মেথির দানা রাতে আধ কাপ পানিতে ভিজিয়ে রেখে, সকালে উঠে সেই পানি পান করুন ও মেথিদানাগুলি চিবিয়ে খান। উপকার হবেই।

অ্যালোপ্যাথিতে মতের অমিলঃ যাঁরা মডার্ন মেডিসিন বা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে তেতো খাওয়ার সঙ্গে ব্লাড সুগার কমানোর বিশেষ ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয় না। অনেক রোগীই আছেন যাঁরা এই ধারণা পোষণ করেন। তাই নিম পাতা, নিমের ছাল ভিজিয়ে খাওয়া, চিরতার পানি, উচ্ছে/করলার রস, কালমেঘ ইত্যাদি তঁারা খান। এতে ক্ষতি কিছু নেই। বরং ভালই বলা যায়। হয়তো সুগার নিয়ন্ত্রণ হয়। তবে তা সাময়িক অবশ্যই। কিন্তু এর দীর্ঘ প্রভাব কতটা সেটা বিচার্য । সাধারণত Hba1c টেস্ট করে একজনের তিনমাসের গড় ব্লাড সুগারের মাত্রা নির্ধারণ করা সম্ভব। একজন রোগী যে রোজ তেতো খান তঁার এই টেস্ট করলে দেখা যাবে তেতো খাওয়ার বিন্দু মাত্র প্রভাব তিন মাসের ব্লাড সুগারের মাত্রায় সেই ভাবে কোনও প্রভাবই ফেলেনি। কাজেই তেতো খেলে সুগার কমবেই এটা সরাসরি দাবি করা যায় না। এছাড়া অ্যালোপ্যাথিতে ওষুধের ভিত্তি বৈজ্ঞানিক গবেষণা। এক্ষেত্রে র‌্যান্ডামাইজ কন্ট্রোল ট্রায়াল (যে ক্ষেত্রে কিছু রোগীকে ওষুধ দিয়ে আর কিছু রোগীকে ওষুধ না দিয়ে গবেষণা করে দেখা হয়। এবং হেড টু হেড ট্রায়াল (যে ক্ষেত্রে কিছু রোগীকে নির্দিষ্ট ওষুধ এবং কিছু রোগীকে অন্য একটি প্রমাণিত ওষুধ খাওয়ানো হয়)। তেতো খেয়ে সুগার নিয়ন্ত্রণ হয় কি না সে প্রমাণ করতে এই পরীক্ষা করা কখনই সম্ভব নয়। কাজেই অপরীক্ষিত সত্য অপ্রাসঙ্গিক।

সতর্ক থাকুনঃ শসা একটু তেতো হলে সমস্যা নেই, কিন্তু তেতো ধুঁধুল খাওয়া উচিত না, পেটে ব্যথা বা পেট খারাপ হতে পারে। তেতো লাউ খেলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

পিবিএ/এমআর

আরও পড়ুন...